পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ф9 е প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৭ [ ೨೦೫ ভাগ, ১ম খণ্ড عحتمیمی معر.مزاحمتہ یہی ہیبی یہی ہے۔ নিজের মনের মধ্যে অস্পষ্টভাবে অতুভব করিয়াছে, অপরের সঙ্গে নিজের এ পার্থক্য মাঝে মাঝে তাহার কাছে ধরা পড়িলেও সে নিজের সম্বন্ধে আদৌ সচেতন নয় বলিয়া এ জিনিষট। সে বুঝিতে পারিত না। তাহ ছাড়া অপুর প্রকৃতি আরও শাস্ত, উগ্রতাশূন্ত ও উদার,—পরের তীব্র সমালোচনা ও আক্রমণের ধাতই নাই তাহার একেবারে । কিন্তু তাহার একটা মহৎ দোষ এই যে, নিজের বিষয়ে কথা একবার পাড়িলে সে আর ছাড়িতে চায় নী—অপরেও যে তাহীদের নিজেদের সম্বন্ধে বলিতে ইচ্ছা করিতে পারে, তরুণ বয়সের অনাবিল আত্মম্ভরিতা ও আত্মপ্রত্যয় সে বিষয়ে তাহাকে অন্ধ করিয়া রাখে । সুতরাং সে নিজের বিষয়ে একটানা কথা বলিয়া যায়–নিজের ইচ্ছা, আশা-আকাজক্ষা, নিজের ভাল-মন্দ লাগা, নিজের পড়াশোনা । নিজের কোনো দুঃখ-দুৰ্দ্দশার কথা বলে না, কোনো ব্যথা বেদনার কথা তোলে না—জলের উপরকার দাগের মত সে সব কথা তাহার মনে মোটে স্থান পায় না—আনকোরা তাজা নবীন চোখের দৃষ্টি শুধুই সম্মুখের দিকে সম্মুখের বহুদূর দিকচক্রবাল রেখারও ওপারে-আনন্দ ও আশায় ভরা এক অপূৰ্ব্ব রাজ্যের দিকে । সন্ধ্যার পরে বাসায় ফিরিয়া চিমনি-ভাঙা পুরাণে৷ হিঙ্কসের লণ্ঠনটা জালিয়া সে পকেট হইতে অনিলের চিঠিখানা বাহির করিয়া আবার পড়িতে বসিল । আমায় যে ভাল বলে সে আমার পরম বন্ধু, আমার মহৎ উপকার করে, আমার আত্মপ্রত্যয়কে স্বপ্রতিষ্ঠিত হইতে সাহায্য করে, আমার মনের গভীর গোপন কোনো লুকানো রত্নকে দিনের আলোয় মুখ দেখাইতে সাহস দেয়। পড়িতে পড়িতে পাশের বিছানার দিকে চাহিয়া মনে পড়ে—আজ আবার তাহার ঘরের অপর লোকটির এক আত্মীয় কাচরাপাড়া হইতে আসিয়াছে এবং এই ঘরেই শুইবে । সে আত্মীয়টির বয়স বছর ত্রিশেক হইবে, কাচরাপাড়া ‘লোকো' আপিসে চাকুরী করে, বেশী লেখাপড়া না জানিলেও অনবরত যা-তা ইংরেজী বলে, -ു.-l.ു.-ു. হরদম সিগারেট খায়, অত্যন্ত পকে, অকারণে গায়ে পড়িয়া ভাই ভাই বলিয়া কথা বলে, তার মধ্যে বারো আনা থিয়েটারের গল্প : অমুক এ্যাকূট্রেস তারাবাইএর ভূমিকায় যে রকম অভিনয় করে, অমুক থিয়েটারের বিধুমুখীর মত গান—বিশেষ করে ‘হীরার দুল’ প্রহসনে বেদেনীর ভূমিকায় নয়ন জলের ফাদ পেতেছি, নামক সেই বিখ্যাত গানখানি সে যেমন গায়, তেমন আর কোথায়, কে গাহিতে পারে ?—তিনি এজন্য বাজি ফেলিতে প্রস্তুত আছেন । এসব কথা অপুর ভাল লাগে না, থিয়েটারের কথা শুনিতে তাহার কোনো কৌতুহল হয় না, এ লোকটির চেয়ে আলুর ব্যবসাদারটি অনেক ভাল। সে পাড়াগায়ের লোক, অপেক্ষাকত সরল প্রকৃতির, আর এত বাজে কথা বলে না, অন্তত তাহার সঙ্গে ত নয়ই । এ ব্যক্তিটির যত গল্প তাহার সঙ্গে । মনে মনে ভাবে—একটু ইচ্ছে করে বেশ এক একটি ঘর হয় ! এক বসে পড়াশুনো করি, টেবিল থাকে একট, বেশ ফুল কিনে এনে গ্লাসের জলে দিয়ে সাজিয়ে রাখি, ঘরটায় না-আছে জানল, পড়তে পড়তে একটু খোল আকাশ দেখ বার জো নাই, তামাকের গুল রোজ পরিষ্কার করি, আর রোজ ওরা এইরকম নোংরা করবে—ম ওয়াড় করে দিয়েছিল, ছিড়ে গিয়েছে, কি বিশ্ৰী তেল চিট্‌চিটে বালিশট হয়েছে ! এবার হাতে পয়সা হ’লে একটা ওয়াড় করাবো । অনিলের সঙ্গে মাঝে মাঝে পথের ধারে বেড়াইতে যায় । চাদপাল ঘাটে, প্রিন্সেপস ঘাটে বড় বড় জাহাজ নোঙর করিয়া থাকে, অপু পড়িয়া দেখে কোনোখানার নাম 'বম্বে', কোনোথানার নাম ‘ইদজ্জ মারু’। সেদিন বৈকালে নতুন ধরণের রং-করা একখান। বড় জাহাজ দেখিয়াছিল, নাম শেনানডোয়া, অনিল বলিল, আমেরিকান মাল জাহাজ, জাপানের পথে আমেরিকা যায়। শুধুই মাল বহন করে। অপু অনেক্ষণ দাড়াইয় জাহাজখানা দেখিল । নীল পোষাক পরা একটা লস্কর রেলিং ধরিয়া ঝু কিয়া পড়িয়া জলের মধ্যে কি দেখিতেছে। লোকটা কি স্বর্থী ! কত দেশে বিদেশে বেড়ায়, কত সমুদ্রে পাড়ি দেয়, চীন সমুদ্রে টাইফুনে পড়িয়াছে, পিনাং-এর