পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহামায়া শ্রীসীতা দেবী

দারুণ গ্রীষ্মের দিন । দুপুরবেলা কাহারও সাধ্য থাকে ন; যে, বাহিরে গিয়া কোনো কাজ করে । ঘরের ভিতরেও কোনো কাজ করা কষ্টসাধ্য । নিতান্ত নিরুপায় নয় যাহারা, তাহার এ সময়ট। আলস্যচর্চায়ই ক টাইয়া দেয় । মায়াদের বাড়ীর সকলের খাওয়া-দাওয়া চুকিয়৷ গিাছে । একঘরে জয়ন্তী তাহার পুত্রকন্যাদের লইয় ঘুণ পাড়াইতেছে। ছেলেটি ঘুমাইয়া পড়িয়াছে, মেয়েটি মাচুরে গড়াগড়ি দিয়া নাকে কাদির মাকে বিরক্ত করিতেছে। মায়ের নিজের চোখ ঘুমে ঢুলিয়া আদিতেছে, সে চোখ বুজিয়া মেয়ের পিঠে চাপড়াইতেছে, এবং মাঝে মাঝে একেবারে ঘুমাইয় পড়িতেছে । হাতের তলা হইতে মেয়ের পিঠট সরিয়া গেলেই আবার চমকিয়া জাগিয়া উঠিতেছে। পাশের ঘরে মায় এবং ইন্দু শুইয়া । মায়ার এত গরমে মোটেই ঘুম আসিতেছে না। রেঙ্গুনে গরমের সময় চব্বিশ ঘণ্টাই সে ইলেক্‌টিক পাথার নীচে বসিয়া থাকে। এখানে রেঙ্গুন হইতে গরমও ঢের বেশী এবং পাথার সঙ্গে সম্পর্কও নাই, কাজেই তাহার প্রাণ অস্থির হইয়া উঠিয়াছে। ইন্দু অনেকক্ষণ হইল ঘুমাইয়৷ পড়িয়াছে। - দরজার উপর হঠাৎ কে গুম্‌ গুম্‌ করিয়া কিল মারাতে মায়া উঠিয়া বসিল। ইন্দুরও ঘুম ভাঙিয়া গিয়াছিল, সে চোখ না খুলিয়াই বলিল, “মায়া দেখত রে, এই দুপুর রোদে কে আবার এল |’ মায় উঠিয়া পড়িয়া দরজা খুলিয়া দিল । বাইরের এক ঝলক উত্তপ্ত হাওয়া তাহার মুখের উপর তীব্র স্পর্শ বুলাইয়া দিয়া গেল। নিস্তারিণী-ঠাকুরাণীর ছোট ছেলেটি বাহিরে দাড়াইয়া, তাহার হাতে গোটকতক চিঠি । বলিল, “ডাকওয়ালাট এইমাত্র দিয়ে গেল।” মায়া চিঠিগুলি লইয়া দরজা আবার বন্ধ করিয়া দিল । ইন্দু মাদুরের উপর পাশ ফিরিয়া বলিল, “কার চিঠি রে ?” মায়। বলিল, “আমার তিনখানা, জয়ন্তীর একখানা, তোমার একখানা ।” পাশের ঘরে জয়ন্তীর ঘুম একেবারে ছুটিয়া গেল । সে হুড়মুড় করিয়া ছুটিয়া আসিয়া উপস্থিত হইল । ব্যগ্র হইয়। জিজ্ঞাসা করিল, “ম লিখেছেন নাকি ?” ইন্দু হাসিয়া বলিল, “আহা, মায়ের চিঠির জন্তেই তুমি এমন পড়ি-কি-মরি দৌড়ে এসেছ কি না ? মায়ের iমায়েরই চিঠি, ন রে মায়া ?” জয়ন্তী বলিল, “পিপী মা যেন কি ! তোমার ঠাট্টারই সম্পর্ক না কি ?” ইন্দু বলিল, “কি আর করি বাছ ? ঠাট্টার সম্পর্কের মানুষ একটাও নেই এখানে। সারাদিন হাড়িমুখ করে কি মানুষের প্রাণ বঁাচে ? তাই ভাইঝি ভাইপো যাকে পাই, তারই সঙ্গে একটু ঠাট্টা-তামাসা কুরি ।” জয়ন্তী আর দাড়াইল না। মায়ার হাত হইতে চিঠিখানা ছো মারিয়া লইয়া তাড়াতাড়ি পাশের ঘরে চলিয়া গেল । ইন্দু জিজ্ঞাসা করিল, “আমাকে কে চিঠি লিখল রে ?” মায়া বলিল, “বাবাই ত লিখেছেন দেখছি ।” ইন্দু বলিল, “মেজদা এক চিরকালের উদ্বুদুড়ে । তোর চিঠির মধ্যেই আমাকে ত দু লাইন লিখতে পারে। তা না প্রতিবারে একখানা করে আলাদা চিঠি আসে।” মায়া হাসিয়া বলিল, “আমার নামে কিছু লিখেছেন, হয়ত, তাই আর আমার চিঠির মধ্যে দেননি।” ইন্দু বলিল, “হ্যা, তোমার বাবা আবার তোমার নামে কিছু লিখবেন! সাত রাজার ধন এক মাণিক বলে তুমি। আমাদের গুষ্ঠিতে কোনো ছেলেরও তোর অৰ্দ্ধেকের অৰ্দ্ধেক আদর হয়নি। ছোটবেলায় যেমন, আমার সঙ্গে