পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88e না। সুতরাং মৎস্তমাংসভোজী মানুষের পেশীতে যে শক্তি সঞ্চিত থাকে, তাহাও পৌরকিরণ হইতেই সঞ্জাত। লক্ষ লক্ষ বৎসর পূৰ্ব্বে ভূপৃষ্ঠ বিশাল অরণ্যানী-সমাকুল ছিল । এই সকল বৃক্ষ স্বৰ্য্যকিরণের প্রভাবেই বন্ধিত হইয়া অতিকায় আকার ধারণ করিতে পারিয়াছিল। ক্রমিক বিবর্তনের ফলে এই সকল বৃক্ষ মাটর স্তরে প্রোথিত হইয়া যায়। পৃথিবীর কুক্ষিগত হইয়া লক্ষ লক্ষ বৎসর ধরিয়৷ এই সকল বৃক্ষ চাপ ও উত্তাপ ভোগ করিতে থাকে এবং অবশেষে অঙ্গারে পরিবর্তিত হইয়া যায়। বৰ্ত্তমান যুগের স্বচতুর মানব এখন ভূপৃষ্ঠ খনন করিয়া সেই স্বদুর যুগের সঞ্চিত সৌরশক্তি নিজের কাজে লাগাইতেছে। স্রোতস্বিনীর স্রোতোবেগও সৌরশক্তি হইতেই গৃহীত। সেীর-উত্তাপের ফলে বাপ হইয়া জল উৰ্দ্ধে উঠিয়৷ মেঘে পরিবর্তিত হইতেছে এবং নানা প্রকার নৈসর্গিক কারণের ফলে মেধ হইতে বারিধর্ষণ হইতেছে। পাৰ্ব্বত্য প্রদেশে এই জল সঞ্চিত হইয়া ক্রমশঃ ভীষণ বেগ ধারণ করিয়া সাগর বা হ্রদের উদ্দেশে চলিয়াছে । সুতরাং দেথা যাইতেছে, অধিকাংশ নৈসর্গিক শক্তির কারণ অনুসন্ধান করিতে গেলে অবশেষে সৌরশক্তিতে গিয়া ঠেকিতে হয় । সৌরশক্তির কারণ কি ? ক্ষুদ্র মানবের কৌতুহলের সীমা নাই ; হুয্যের উত্তাপের কারণ নির্দেশ করিতে গিয়া মানবকে কল্পনার আশয় গ্রহণ করিতে হইয়াছে। কিন্তু সুৰ্য্যের অবয়বের স্বতঃসঙ্কোচন বা নীহারিকাপুঞ্জের অবিশ্রাম ঘাত-প্রতিঘাত অথবা সৌরশক্তির অন্য যে-কোন কারণই নিদিষ্ট হউক না কেন, ইহার দ্বারা শক্তির চরম উৎস নিদ্ধারিত হয় না, ইহা বলাই বাঞ্ছল ।... এমন কোন যন্ত্ৰ নিৰ্ম্মাণ করা কি সম্ভবপর নহে, যাহ। চতুপাশ্বের তাপ-শক্তি আহরণ করিয়৷ চলিতে থাকিবে,—এদিকে বাতাস বা সমুদ্রর জল ক্রমশঃ শীতল হইয়া আসিবে ? এরূপ একটা যন্ত্র শূন্ত হইতে শক্তি উৎপাদন করিবে না, চারিপাশ্বের উত্তাপ সংগ্ৰহ করিয়া সুবিধাজনক কায্যে পরিবর্তিত করিলে মাত্র । বাহির হইতে দেখিতে গেলে এ যুক্তির মধ্যে কোনই অসারত আছে বলিয়া মনে হয় না ; কারণ, ইহা শক্তির নিত্যতা নিয়মের বিরুদ্ধাচরণ করে না । কিন্তু বহু কাল ধরিয়া এরূপ একটা মন্ত্ৰ নিৰ্ম্মাণের চেষ্টা করিয়া উৎসাহী বৈজ্ঞানিকগণ বিফলমনোরথ হইয়াছেন ---কিন্তু বহুকালের বিফলতার পর এঞ্জিনিয়ারগণ যখন হাল ছাড়িয়া নিরুৎসাহ হইয়৷ পড়িতেছিলেন, তখন ক্লদিয়স নামক একজন বৈজ্ঞানিক বুঝাইয়। দিলেন যে, এই প্রকার ঘস্থনিৰ্ম্মাণের প্রচেষ্ট। একটা প্রাকৃতিক সত্যের বিরুদ্ধে পরিচালিত হইতেছে । ক্লদিয়স বলিলেন যে, দুইখণ্ড প্রস্তর ঘর্ষণ করিলে উত্তাপ ও অালোকের উৎপত্তি সহজেই হইতে পারে ; অর্থাৎ সংঘর্ষণজনিত কার্যাকে সহজেই উত্তাপে পরিবত্তিত করা যাইতে পারে ; কিন্তু তাপ-শক্তিকে যে সকল সময়েই সহজে বাহ্যিক কার্য্যে পরিবর্হিত করা যায় তাহা নহে ; কায্যে পরিবর্তিত করিতে হইলে উত্তপ্ত বস্তু হইতে উত্তাপের অপেক্ষাকৃত শীতল বস্তুতে প্রবাহিত হওয়া আবশ্বক। এই নুতন ব্যাখ্যায় অনেকেরই মনে প্রথমে বিষম খটুকী বাধিরা গেল ; কিন্তু ম্যাক্সওয়েল, হেলমহোলটুস প্রভৃতি পণ্ডিতের শীঘ্রই এ সমস্তার সমাধান করিয়া দিলেন। ষ্টীম এঞ্জিন বাম্পে চলে তাঁহা সকলেই জানেন ; অর্থাৎ ইহাতে তাপশক্তি বাহ্যিক কায্যে পরিবৰ্ত্তিত করা হয় । বাহির হইতে এঞ্জিনের গঠন ভয়াবহ জটিল মনে হইলেও, প্রত্যেক এঞ্জিনে দুইটা প্রধান অংশ থাকে। ইহাদিগকে যথাক্রমে বয়লার ও কনডেনসার বলা হয়। বয়লারের মধ্যে উত্তপ্ত করিয়া জলকে বাম্পে পরিবর্তিত করা হয় এবং কনডেনসারে গিয়া এই উত্তপ্ত বাষ্প কতক পরিমাণে শীতল হয়। এঞ্জিনের চাকার সহিত একটী পিচকারীর যোগ প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড থাকে, যাহার মধ্যে জলীয় বাপ ক্রমান্বয়ে উত্তপ্ত ও শীতল হয়। উত্তপ্ত বাপ পিচকারীর চাকতি বাহিরে ঠেলিয়া দেয় এবং শীতল হইলে আয়তনের সঙ্কোচন হেতু চাকতি ভিতরে ঢুকিয় পড়ে। পিচকারীর চাকতির এই প্রকার ইতস্ততঃ গতি-কৌশল ক্রমে এঞ্জিনের চাকার ঘূর্ণায়মান গতিতে পরিবর্তিত করা হয়। সুতরাং দেখা যাইতেছে যে, ষ্টীম এঞ্জিনের বয়লার হইতে উত্তপ্ত জলীয় বাপ বাহির হইয়া পিচকারির ভিতর গিয়া কিঞ্চিৎ শীতল হয়, এবং শীতল হইবার ফলে যে তাপশক্তি বহির্গত হয়, তাহাই এঞ্জিন চালাইবার কাৰ্য্যে ব্যবহৃত হয় । সুতরাং মোটের উপর দাড়াইল এই যে, উত্তপ্ত বয়লার হইতে বাপ বাহির হইয়া অপেক্ষণকুত শাকল কনডেনসারে প্রবিষ্ট হইতেছে এবং উত্তপ্ত বাম্পের উষ্ণত হাসের ফলে উত্তাপ বাহিক কার্য্যে পরিণত হইতেছে । এখন যদি বয়লার ও কনডেনসারের মধ্যে উষ্ণতার তারতমা না থাকিত, তাহা হইলে তাপ-শক্তি এইভাবে বাহ্যিক কায্যে পরিবর্তিত হইতে পারিত না। প্রকুত পক্ষে উত্তপ্ত বস্তু হইতেই শীতল বস্তুতে তাপ প্রবাহিত হয়, ইহাই হইল স্বাভাবিক ধৰ্ম্ম । দুইটা বস্তু যদি সমোঞ্চ হয়, তবে একটার মধ্যে যথেষ্ট পবিমাণ উত্তাপ থাকা সত্ত্বেও উভয়ের মধ্যে উত্তাপ প্রবাহিত হয় না। বলা বাহুল্য, উত্তাপ সঞ্চারিত না লইলে ইহা বাহ্যিক কায্যে পরিবর্ভূিত হইতে পারে না। সুতরাং পূর্ববর্ণিত কাল্পনিক যন্ত্র যদি সম্ভবপরই হইত, তাহা হইলে ইহাকে সৰ্ব্বক্ষণ বাতাস বা সমুদ্রের জল হইতে শীতল অবস্থায় রাগিতে হইত। কারণ উভয়ের মধ্যে উষ্ণতার তারতম্য না থাকিলে যন্ত্রে উত্তাপ প্রথাহিত হইতে পারে না । দুঃখের বিষয়, যন্ত্রটাকে সর্বসময় শীতল অবস্থায় রাপিতে যে পরিমাণ শক্তির ব্যয় হইবে, তাহার দ্বারাই ইচ্ছামত কাজ করাইয়া লওয়া যাইতে পারে। এই শ্রেণীর কাল্পনিক যন্ত্রকে অষ্টভাল্ড “দ্বিতীয় শ্রেণীর অনগ্রগতিশীল যন্ত্ৰ” বলিয়। অভিহিত করেন । শক্তিশাস্ত্রের এই দুই মূল্যবান সত্য আবিষ্কৃত হইবার পর বায়বীর পদার্থের স্বরূপ সম্বন্ধে গবেষণা চলিতে থাকে । বায়বীয় পদার্থের ধৰ্ম্মই এই যে, ইহার আয়তন আধারের গায়তনের উপর নির্ভর করে। আধারের আয়তন বুদ্ধি করিলে সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসের আয়তনও বাড়িয়া যায় ; অর্থাৎ গ্যাস্ সমস্ত স্থানটুকু অধিকার করিয়া বসে। এরূপ ব্যবহারের কারণ কি ? পদার্থশাস্ত্ৰ-মতে বায়বীয় পদার্থের অণুগুলি সৰ্ব্বদাই ভীষণ বেগে সঞ্চরণশীল । ফলে অণুগুলি পরস্পরের সহিত ও সমাবেষ্টনীর সঙ্গে ধাক্কা থাইতে থাকে । মনে করা যাউক, একদল শিশুকে চোখ বধিয়া একটা বদ্ধ ঘরের মধ্যে ছাড়িয়া দেওয়া হইয়াছে। স্বধৰ্ম্মবশতঃ বালকেরা ছুটাছুটি আরম্ভ করিবে এবং সম্ভবতঃ একজন আর একজনের ঘাড়ে পড়িবে।---কেহ হয় ত দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খাইয়। ঘুরিয়া আসিবে। এই প্রকার ঘাত-প্রতিঘাতের ফলেও যদি শিশুগণের শক্তির বিপৰ্য্যয় না হয়, তবে তাঁহাদের এই উদাম গতি, সমান ভাবেই চলিতে থাকিবে । মনে করিতে পারি, সমাবেষ্টনীর মধ্যে গ্যাসের অণুগুলি সরল-রেখা ক্রমে এই ভাবেই ছুটিয়া বেড়ায় এবং পরস্পর ঘাত-প্রতিঘাতের পর অগ্রসর হইতে থাকে। উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই আণবিক গতিও বাড়িতে থাকে। ফলত: বায়বীয় পদার্থের শক্তি এইরূপ আণবিক গতিতেই পৰ্য্যবসিত। যদি গ্যাসকে উত্তপ্ত কর। যায়, অণুগুলির গতিও সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায় এবং শীতল করিলে গ্যাসের অণুগুলি অপেক্ষাকৃত নিজীর্ষ হইয়া পড়ে, ইহাদের সঞ্চরণশীলতা কমিয়। আসে । প্রথম যখন বায়বীয় পদার্থের উদ্ভব হয় তখন ইহার অণুগুলি বেশ, একটা নিয়ম অনুসারে সজ্জিত ছিল এরূপ ধারণা করিতে পারি।