পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* 88t. প্রবাসী—আধাঢ়, ১৩৩৭ [ ७०* ऊांशृं, sभ १8 মুড়িয়া ওখানে রাখিয়াছিল, কাজ সারা হইলেই বাহির করিয়া বহুজীর হাতে দিত। শ্রোতার দুজনেই বুঝিল কথাটা ঠিক নয়, কিন্তু তাহ লইয়া তর্ক করিয়া আর লাভ কি! রূপলাল নিজেই বলিল, “ছোটবহুমা, আমি আজই ওকে দেশে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমি আপনার বাপের বয়সী বুড়ে, আমার একটা কথা রাখুন, আপনার পায়ে ধরছি,” সে সত্যসত্যই মুক্তামালার পায়ে হাত দিতে গেল । মুক্তামাল৷ তাড়াতাড়ি সরিয়া দাড়াইয়া বলিলেন, “যা যা, আমার পায়ে হাত দিস না। কি কথা বল ?” রূপলাল বলিল, “আপনি এ কথা কারও কাছে প্রকাশ করবেন না। ওর বাপের খুব অস্থখ এই কথা বলে, আমি ওকে নিয়ে চলে যাব।” মুক্তামালার রাগ খানিকটা পড়িয়া আসিয়াছিল। বুড়ার অবস্থা দেখিয় তাহার দয়াও হইতেছিল । তিনি বলিলেন, “আচ্ছা, তোর খাতিরে তাতেই আমি রাজী হলাম, যদিও তোর বউয়ের শাস্তি হওয়া উচিত ছিল । একরত্তি মেয়ের এত সাহস যে, বসে বসে এতগুলো চরি করল ।” রূপলাল বলিল, “বহুম, অন্য জিনিষগুলো ত ওকে কেউ নিতে দেখেনি। একবার যথম হাতে হাতে ধরা পড়েছে, তখন সবাই ওকেই সন্দেহ করবে জানি, কিন্তু এমনও ত হতে পারে যে, অন্য লোকে নিয়েছে ?” বুড়ার কথা শুনিয়া মুক্তামালার হাসি পাইল । এখনও বউয়ের সাফাই গাহিবার চেষ্টা । যাহা হউক, তিনি আর কিছু বলিলেন না। রূপলাল বউকে লইয়া নীচে চলিল। ঝুলনী শেষ পর্য্যস্ত কঁাদিতে কাদিতেই গেল । তাহার হঠাৎ চলিয়া যাওয়াতে সবাই একটু বিস্মিত হইল। তবে ঝুলনীর বাপের অস্থখের কথাটা রূপলাল খুব ভালভাবেই প্রচার করিয়া গিয়াছিল, সুতরাং ইহা লইয়া আর বেশী কথা উঠিল না। দুই চারদিন পরে মুক্তামালার এক নূতন আয় আসিল, এবং কাজ যেমন চলিতেচিল, চলিতেই লাগিল। রূপলালও সপ্তাহখানেক পরে ফিরিয়া আসিল । বড়বউ একবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি রে রূপলাল, ঝুলনী আসবে না ?” - রূপলাল গম্ভীরভাবে বলিল, “না মা, তার বাপের বড় অস্থখ, এখন আসতে পারবে না।” দিন কাটিতে লাগিল । বড়বউ একদিন কথাচ্ছলে খাবার টেবিলে বলিলেন, "চুরি যে কে করত, তাত বোঝাই যাচ্ছে, ওটা গিয়ে অবধি বাড়ীর একটা কুটোও ত যায়নি।” রূপলাল দরজার কাছে যে দাড়াইয়া আছে তাহা তিনি দেখিতে পান নাই । দিন-তিনেক পরে আবার বাড়ীতে মহা সোরগোল লাগিয়া গেল, বড়বাবুর দামী হাতঘড়িট পাওয়া যাইতেছে না । ছোটবউ গালে হাত দিয়া বলিলেন, “মাগো, কি কাও ! ঠিক মনে হচ্ছে যেন বাড়ীটাকে ভূতে পেয়েছে ! এ সব হচ্ছে কি ?” বড়বউ বলিলেন, “ভূতে পাবে কিসের দুঃখে ? একজন বিদ্যে শিখিয়ে গেলেন, এখন সবাই শিখেছে।” এবার কৰ্ত্তারা স্বয়ং আসরে নামিলেন। বকবিকি, গালাগালি, চড়চাপড়, পুলিশের ভয় দেখান, কিছুই আর বাকি রহিল ন । কিন্তু কোনোই কিনারা হইল না। বড়কর্তা বাহির হইবার সময় শাসাইয় গেলেন, “অফিস থেকে এলেও যদি শুনি যে ঘড়ি পাওয়া যায়নি, আর এক মিনিট দেরি না করে পুলিশে খবর দোব। যে নিয়েছে, ভালয় ভালয় রেখে দিও, কোনো কথা হবে না ।” বাড়ী আসিয়া নূতন কিছু শুনিবেন এমন আশা তাহার ছিল না। কিন্তু সংসারে অপ্রত্যাশিত ব্যাপারও ঘটিয়া থাকে। ঘরে ঢুকিতেই বড় খোক ছুটিয়া আসিয়া খবর দিল, বাব ঘড়ি পাওয়া গেছে । পিছন হইতে গৃহিণী এবং অন্য ছেলেমেয়েরাও ভীড় করিয়া আসিয়া দাড়াইল । কৰ্ত্তা জিজ্ঞাসা করিলেন, “কোথায় পাওয়া গেল ?” সকলে প্রায় সমস্বরে বলিল, “রূপলালের ট্যাকে ৷” বড়কৰ্ত্ত উকীল, মানুষের কোনো দুৰ্ব্বলতা বা পতনে অবাক হওয়া তার অভ্যাস নয় । তিনি রূপলালকে ডাকিয়া আনিতে বলিলেন এবং ছেলেপিলে চাকরবাকর প্রভৃতিকে সরিয়া যাইতে আদেশ দিলেন।