8૭8 অনভ্যাস যুদ্ধে পরাজয়ের একটা কারণ না হইতেও পারে । আমাদের বিবেচনায় হিন্দুদের নিগ্রহের একটা প্রধান কারণ, তাহদের অনৈক্য ৪ অদলবদ্ধত । জাতিভেদ ও তাহার সর্বাপূম ফল অস্পৃশ্যত ও অনাচরণীয়তা ইহার একটা কারণ । ঢাকার হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যেই একটা প্রভেদ দেখুন। ঢাকার মুসলমানদের একটি সংগঠন(organization) আছে, তার নাম বাইশ পঞ্চায়ের্তী । ঢাকা শহরট। বাইশটা মহল্লায় বিভক্ত ; প্রত্যেক পাড়ার ধনী ও প্রভাবশালী মুসলমান সেই পাড়ার মহল্লাসদরে নিযুক্ত হয় ; ঐ সব মঙ্গল্প-সর্দারদের মধ্যে রাজমিস্ত্রী, দরজী, ভিস্তী, • আড়তদার, চামড়া ওয়ালা, কসাই ইত্যাদি ও আছে ; ইহার সব ঢাকার নবাবের অধীন ও অন্তগত হইয়া কাজ করে, এবং ইহাদের হুকুম পাড়ার সব মুসলমান মানিতে বাপ্য। যে ন মানে তাহার হু কা বন্ধ, গলায় জুতার মাল পরান, ইত্যাদি শাস্তি হইতে পারে। হিন্দুদের এরূপ কোন সংগঠন নাই। হইবার একট। অন্তরায় জাতিভেদ । কোন মহল্লায় কাহাকে সর্দার করিবেন ? শিক্ষা বা ধনশালিত অহুসারে করিবেন, ন জাতি-বিচার করিয়া করিবেন ? এ সব বাধা না-মানিয়াও ভারতের সব প্রদেশে রাজনৈতিক কম্মিষ্ঠতা অন্তসারে দলের সদার হিন্দুর নান জাতির লোককে করা হইতেছে বটে । কিন্তু প্রত্যেক শহর ও গ্রামকে ঢাকার মুসলমানদের মত দলবদ্ধ করার চেষ্টায় সম্ভবতঃ পুলিস বাধা দিবে। কারণ, মুসলমানদের ঐরুপ দলবদ্ধতা দেশে স্বরাজস্থাপনের চেষ্টায় সাক্ষাৎ বা পরোক্ষভাবে প্রযুক্ত হয় না ; হিন্দুদের তাহা হইতে পারে। তথাপি আত্মরক্ষার ও আত্মোন্নতির জন্য হিন্দুকে দলবদ্ধ হইতে হইবে । হিন্দুদের নিগৃহীত হইবার একট। গৃঢ় নিশ্চিত কারণ তাহীদের নিজ হীনতায় বিশ্বাস ( যাহাকে inferiority complex বলে ) । প্রথমতঃ, সব জাতির অনেক হিন্দুই মনে করে তাহার রাজনৈতিক হিসাবে পুন:পুন: পরাজিত একমাত্র হীন জাতি । ইহা যদি সত্য হইত তাহা প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৭ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড হইলেও জীবিত হিন্দুদের ঘাড় হেঁট করিয়া থাকিবার কারণ হইত না । ইটালী চৌদ্দ শত বৎসর পুনঃপুনঃ আক্রাস্ত হয় ও পরাধীন ছিল ; এখন স্বাধীন ও প্রতাপশালী । ইংলণ্ডও অনেকবার আক্রাস্ত, পরাজিত ও পরাধীন হইয়াছে। আরও অনেক দুষ্টান্ত আছে । ইংরেজদের লেখা ইতিহাস এই ভ্রান্ত ধারণা জন্মাষ্টয়াছে, সে, ভারতীয় হিন্দুরাই সকলের চেয়ে ভীরু এবং বেশী বার পরাজিত জাতি । তাঙ্গ সত্য নহে। পূৰ্ব্ববঙ্গের মুসলমানরাও অধিকাংশ হিন্দুদের বংশধর, জেতা আগ শুক মুসলমানদের বংশধর নহে । আমাদের নিজীব ও সদা সঙ্কচিত হইবার আর একটা কারণ পারিবারিক ও সামাজিক কোন কোন প্রথা। যাহাদিগকে ভদ্রশ্রেণীর হিন্দু বগা হয়, তাহার কয়জন ? অন্যেরাই সংপ্যায় বেশী । অথচ, রূপক ভাষায় বলিতে গেলে, ব্রাহ্মণ বা অন্য উচ্চ জাতির লোকেরা এই অন্তদের ঘাড়ে ও মাথায় প। দিয়াই আছেন । তাহার উপর পরিবারে সর্বদাই, এট। কবুতে নেই ওট করতে নেই, লাগিয়াই আছে। স্বতরাং হিন্দুর তেজস্বী হইবে কেমন করিয় ? এসব বাধা সত্ত্বেও যে বহুসংখ্যক হিন্দু তেজস্বী হয়, তাহ! এই কারণে, যে, মামুষের মনুষ্যত্ব, তাহার তেজস্বিত, এমন প্রকৃতিগত, যে, একেবারে নষ্ট হইবার নহে । ঢাকায় দানবীয় কাণ্ড ঘtহ হউক, ঢাকার দানবীয় কাণ্ডে সব বা অধিকাংশ হিন্দু সাহস দেখাইয়াছে, ইঃ বল! আমাদের উদ্দেশ্য নহে । সবাই ভীরুতা দেখাইয়াছে, ইহা ও সত্য নহে । অনেকে খুব সাহসের সহিত কাজ করিয়াছে। যাহার সাহসের পরিচয় দিতে পারে নাই, তাহারা স্বভাবতঃ ভীরু, ইহা বলা দুটা কারণে উচিত নহে। প্রথমতঃ, বিপদের ক্ষেত্র হইতে দূরে থাকিয়া কাহাকেও ভীরু বলা এক রকম কাপুরুষতা ; দ্বিতীয়তঃ, সাহসী বলিয়া পরিচিত স্বাধীন জাতির লোকরাও অনেক সময় ঢাকাবাসী হিন্দুদের অবস্থায় পড়িয়া আতঙ্কগ্ৰস্ত হয় ও ভীরুর মত কাজ করে । ভগবান করুন, ঢাকার যেরূপ বিপদ হইয়াছে, পুনৰ্ব্বার আর সেরূপ না হউক । কিন্তু যদি আবার হয়, তাহা
পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫০৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।