পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গসাগরের ঝড় ও তাহার প্রকৃতি ঐসুধাংশুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, ডি-এসসি বাংলা দেশে প্রতি বৎসর ঝড়ে এবং জলপ্লাবনে কিরূপ অনিষ্ট হয় তাহ৷ সকলেই অবগত আছেন। কি প্রকারে এই প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা প্রতিবৎসর ঘটে সে সম্বন্ধে এদেশের অনেকেরই প্রকৃত ধারণ নাই। সচরাচর জনসাধারণ এইগুলিকে ভগবানের অভিসম্পাত বলিয়া মনে করে। ংলা দেশে দুই প্রকারের ঝড় সমূহ ক্ষতি করে। চৈত্র বৈশাখ মাসে কোনো কোনো দিন হঠাৎ অপরাষ্ট্রষ্টাৰ-উত্তর-পশ্চিম কোণে ক্ষুদ্র একখানি কাল মেঘ উদিত হইয়া অচিরে কিরূপ ভীষণ ঝঞ্চাবাতের সহিত চতুর্দিকে ছড়াইয় পড়ে এবং মুষলধারে বৃষ্টি ও মুহুমুহ অশনিসম্পাতে মনে ভীতি জাগাইয়া তোলে, তাহা বাংলা দেশের কাহারও অবিদিত নাই । এই ঝড়গুলিকেই আমরা কালবৈশাখী বলি। এগুলি বাংল। দেশেই উৎপন্ন হয়। যতই ভীতিপ্রদ হউক ইহাদের অনিষ্টকারী ক্ষমতা অনেকট সীমাবদ্ধ এবং ইহারা কখনও জলপ্লাবন ঘটায় না। দ্বিতীয় প্রকার ঝড়ের উৎপত্তিস্থান বঙ্গসাগর। প্রতিবংসর বর্ষাকালে অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ আষাঢ় এবং শ্রাবণ মাসে বঙ্গসাগরের উত্তর-সীমায় বাংলা দেশের ঠিক দক্ষিণে এমন অনেক দিন আসে যখন বায়ু চক্রাকারে বহিতে থাকে এবং ভীষণ ঝড়ের হুষ্টি করে। বাংলা দেশে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত প্রায় নিত্যকার ঘটনা ; কিন্তু যখন এই ঝড়গুলির স্বষ্টি হইতে থাকে তখন এই বৃষ্টিপাত কমিয়া যায়। এই ঝড় ধীরে ধীরে বৃদ্ধি হইয়া পূর্ণাকৃতি প্রাপ্ত হওয়া মাত্র সচরাচর পশ্চিম অভিমুখে ধাবিত হয় এবং সৰ্ব্বপ্রথমে উড়িষ্যা দেশে প্রবেশ করিয়৷ প্রচুর বারি বর্ষণ করে। এই প্রকার ঝড়ের আবৰ্ত্ত প্রায় তিনচার শত বর্গমাইল কিংবা তাহারও অধিক । স্বতরাং পশ্চিম অভিমুখে গতি হইলেও ইহাদের প্রকোপ বাংলা দেশেও কিয়ং পরিমাণে অনুভূত হয় । মধ্যভারতের ভিতর দিয়া যাইতে যাইতে ইহাদের গতি কখনও কখনও বাকিয়া যায়। এইরূপে যুক্ত-প্রদেশের কিংবা পঞ্চনদের উত্তর-সীমায় উপস্থিত হয় এবং হিমালয়ে বাধা পাইয়া ধ্বংস হইয়া যায়। আবার কখনও সোজা পশ্চিমদিকে যাইয়া সিন্ধুদেশ পৰ্য্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টিপাত করে। বঙ্গসাগরের উত্তর-সীমার এই ঝড়গুলি কখনও কখনও পশ্চিম অভিমুখে ন যাইয়। বঙ্গদেশে প্রবেশ করে এবং বঙ্গের উত্তর-সীমার পর্বতমালায় বাধ৷ পাইয়া বিলীন না হওয়া পৰ্য্যস্ত প্রবল বায়ু ও জলধারায় বাংলা দেশ ভাসাইয়া দেয়। বর্ষাকালের এই ঝড়গুলি অপেক্ষাও ভীষণতর ঝড় বর্ধার পূর্বে ও পরে বঙ্গসাগরে উৎপন্ন হইয়। কখনও কখনও বঙ্গদেশকে আক্রমণ করে। ১৯১৯ সালের আশ্বিন মাসে এইরূপ একটি ঝড় পূৰ্ব্ববঙ্গে প্রবেশ করিয়া বহু লোকের প্রাণনাশ এবং বহু লোককে আশ্রয়হীন করিয়াছিল। বর্ষাকালের ঝড়ের আবর্তে হাওয়ার গতি সাধারণতঃ ঘণ্টায় ৪০৷৫০ মাইলের অধিক হয় না। কিন্তু বর্ষার পূৰ্ব্বে ও পরে যে ভীষণ ঝড়গুলি বঙ্গসাগরে উৎপন্ন হয় তাহাদের ঘূর্ণাবর্তে হাওয়ার গতি ঘণ্টায় ১০০ মাইলেরও অধিক হয়। এই ভীষণ গতি কেন্দ্রস্থলের নিকটে দ্রুত কমিয়া গিয়া প্রায় কিছুই থাকে না। এই ঝড়ের আবৰ্ত্তের ক্ষেত্র বর্ষার ঝড়ের অপেক্ষা আয়তনে ছোট । পূৰ্ব্ববঙ্গের অনেকেই ১৯১৯ সালের ঝড়ের সময় লক্ষ্য করিয়াছেন যে ঝড়ের বহির্ভাগের মৃদুমন্দ বাতাস ঝড়ের উত্তরাভিমুখে অগ্রসরের সঙ্গে সঙ্গে অতি দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইয়৷ ভীষণ বেগে পূৰ্ব্ব দিক হইতে বহিতে থাকে, এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই গতির বেগ কমিয়া গিয়া কেন্দ্রস্থলে উপস্থিত হইলে প্রায় কিছুই থাকে না। তখন আকাশ রক্তবর্ণ হয় এবং একটা শান্তগম্ভীর ভাব ধারণ করে। কেন্দ্রস্থল পার হইয় গেলে হাওয়া বিপরীত দিক হইতে