পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

G o o প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড এই শক্তি বংশধার (heredity) । আমাদের ধমনীতে যে বংশের এবং যে জাতির রক্ত প্রবাহিত হইতেছে তাহ আমাদিগকে কিরূপ সামর্থ্য দান করিয়াছে, ইহাও হিসাব করিয়া কাৰ্য্যক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়া উচিত। এই হিসাব করিতে হইলেও ইতিহাসের শরণাগত হইতে হইবে। যে জননায়ক জনসাধারণের ধাত এবং ইতিহাস উপেক্ষা করিয়া নবরাষ্ট্র গড়িতে যাইবেন, তিনি কাগজে কলমে অভিনব ইউটোপিয়ার চিত্র অঙ্কিত করিয়া রাথিতে পারেন, কিন্তু র্তাহার পক্ষে স্থায়ী প্রাসাদ নিৰ্ম্মাণ করা সম্ভব বলিয়া মনে হয় না। এ দেশের লোক যখন একথা বুঝিতে পরিবেন, তখন র্তাহারা দেখিতে পাইবেন, আজ আমরা যাহার অকালমৃত্যুতে শোক-প্রকাশ করিবার জন্য মিলিত হইয়াছি, সেই রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কত বড়লোক ছিলেন এবং দেশের জন্য তিনি কত কাজ করিয়া গিয়াছেন । একটি লাটিন প্রবাদ আছে যাহার অর্থ—‘Poet is born, not made', of তৈয়ার কর যায় না, কবিত্ব জন্মগত। প্রকৃত পুরাতত্ত্ববিদও কোনো শিক্ষাদীক্ষার দ্বারা তৈয়ারী করা যায় না, শিক্ষাদীক্ষার মূলে জন্মগত প্রবৃত্তি, জন্মগত প্রতিভা থাকা চাই । রাখালদাস এইরূপ প্রবৃত্তি, এইরূপ প্রতিভা লইয়া জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন । রাখালদাস আমাকে বলিয়াছিলেন, কলিকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে যখন তিনি মহামহোপাধ্যায় শ্ৰীযুত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের নিকট সংস্কৃত পড়িতেন, তখন শাস্ত্রীমহাশয়ের উপদেশের ফলে র্তাহার মনে পুরাতত্ত্ব অমুশীলনের আকাজক্ষ। জাগরিত হইয়া উঠিয়াছিল । শাস্ত্রীমহাশয়ের ক্লাশে অনেক ছাত্র পড়িয়া গিয়াছেন, অনেকে র্তাহার উপদেশ শুনিয়া বিশেষ মুখ্যাতির সহিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধি পরীক্ষা উত্তীণ হইয়াছেন, কিন্তু সেখান হইতে একটি বই দু'টি রাখালদাস বাহির হয় নাই । অধ্যাপক দেবদত্ত রামকৃষ্ণ ভাণ্ডারকারের নিকট শুনিয়াছি, বি, এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া কলেজ পরিত্যাগের পূৰ্ব্বেই পুরাবিদ্যা শিক্ষার জন্য রাখালদাস ইণ্ডিয়ান মিউজিয়ামের পুরাবস্তু-বিভাগের অধ্যক্ষ ডাক্তার থিওডোর ব্লকের শরণাগত হইয়াছিলেন । থিওডর ব্লক যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন রাখালদাস ছায়ার মত র্তাহীর সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন। রাখালদাস বরাবরই মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করিতেন, পুরাতত্ত্ব বিষয়ে যাহা কিছু শিক্ষা করিয়াছেন তাহার জন্য তিনি মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এবং থিওডর ব্লকের নিকট ঋণী । ১৯০৫ সালে অধ্যাপক ভাণ্ডারকার যখন ব্লকের স্থানে কিছুদিনের জন্য মিউজিয়মে কাজ করিতে আসিয়াছিলেন, তখন তিনি রাখালদাসের সংগৃহীত ফটোগ্রাফাদি উপকরণ পরীক্ষা করিয়া এবং পুরাবিদ্য৷ অর্জনের জন্য র্তাহার ব্যাকুলত লক্ষ্য করিয়৷ বিস্মিত হইয়াছিলেন। তখন হইতেই রাখালদাস শককুষাণ যুগের ইতিবৃত্ত অমুশীলন করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন । ডাক্তার থিওডর ব্লকের পরলোকগমনের অল্পকাল পরে, ১৯০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে, দিঘাপতিয়ার কুমার শরৎকুমার রায় মহাশয় আমাকে রাখালদাসের সহিত পরিচিত করিয়া দিয়াছিলেন। সেই সময় ৬ রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী মহাশয়ের নেতৃত্বাধীনে রাখালদাস, শরৎকুমার প্রভৃতি কমিগণ সাহিত্য-পরিষদের রমেশভবনের জন্য পুরাবস্তু সংগ্ৰহ করিতেছিলেন। সেই সংগ্রহকাৰ্য্যের প্রাণস্বরূপ ছিলেন রাখালদাস । পর বৎসর, কতক পরিমাণে রাখালদাসের পরামর্শাকুসারেই কুমার শরৎকুমার আমাদিগকে লইয়। বরেন্দ্রের ভগ্নাবশেষ পর্য্যবেক্ষণ এবং পুরাবস্তু সংগ্রহ আরম্ভ করিয়াছিলেন। প্রথম যাত্রায় রাখালদাসও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। সংগৃহীত বস্তু ইণ্ডিয়ান মিউজিয়ামে এবং সাহিত্য-পরিষদে প্রেরিত হইবে, কিংব! রাজসাহীতে রক্ষিত হইবে, ইহা লইয়া আমাদের সঙ্গে মতভেদ হওয়ায় আমরা স্বতন্ত্র পথ অবলম্বন করিয়াছিলাম। স্বগীয় নাটোরের মহারাজ জগদিন্দ্রনাথ রায়ের সহিত মানসী পত্রিকার যে সম্বন্ধ স্থাপিত হইয়াছিল, তাহারও মূলে রাখালদাস ছিলেন। রাখালদাস ইংরেজী ও বাঙ্গলা ভাষায় অনেক প্রবন্ধ, অনেক গ্রন্থ প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন । র্তাহার দুইখানি বৃহৎ ইংরেজি গ্রন্থ—উড়িষ্যার ইতিহাস এবং প্রাচ্য ভারতের মধ্যযুগের ভাস্কর্য্যের বিবরণ, এখন যন্ত্রস্থ । এই সকল রচনার অতি সংক্ষিপ্ত পরিচয়