পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪থ সংখ্যা ] পরলোকগত রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় G o X. দিবার অবকাশ আমার নাই । কিন্তু পুরাবৃত্তকার রূপে রাখালদাসের যে একটি অতি মহৎ গুণ ছিল, তাহা বিশেষভাবে উল্লেখ করা আবর্তক। এ দেশে এখন অনেকেই প্রাচীন ইতিহাসের চর্চা করিয়া থাকেন। অধিকাংশ স্থলেই বিবরণ যে নির্ভরযোগ্য একথা রাখালদাস অনেক দিন পৰ্য্যন্ত স্বীকার করিতে প্রস্তুত ছিলেন না । মৌর্য্য ও শুঙ্গ যুগের ভারতীয় শিল্পে পাশ্চাত্য প্রভাব আছে কি না, এই কথা লইয়া একদিকে এদেশী এবং অপর দিকে দেশের অতীত কালের গৌরবকাহিনীর কীৰ্ত্তন ইতিহাসচচ্চার লক্ষ্য বলিয়া ঘোষিত হয় এবং সেই সুরেই ইতিহাস সঙ্কলিত হয় । কিন্তু এই হিসাবে ইতিহাস আলোচনা করিতে গেলে,সত্যের মর্য্যাদার হানি হওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা থাকে। জাতীয় জীবনে গৌরবকর, অগৌরবকর এবং মামুলী সকল প্রকার ঘটনাই অবশ্য ঘটিয়া গিয়াছে। তন্মধ্যে ইতিহাসে কেবল গৌরবকর ঘটনার বিবরণের স্থান দিতে গেলে তাহা একদেশদর্শিতদোষে দুষ্ট হইয়া যায় এবং স্থলবিশেষে সত্যের অপলাপও ঘটিতে পারে। রাথালদাস সত্যের একনিষ্ঠ সেবক ছিলেন। ইতিহাস সঙ্কলন করিতে গিয়া কোনো পক্ষের ওকালতী করা বা কোনো মত প্রচার (propaganda) +al fosfã কৰ্ত্তব্যের মধ্যে গণ্য করিতেন না। পাল-যুগের শেষভাগে রচিত সন্ধ্যাকর নন্দীর ‘রামচরিত' নামক ঐতিহাসিক কাব্যে এবং কামরূপ-রাজ বৈদ্যদেবের কমেীলীতে প্রাপ্ত তাম্রশাসনে বরেন্দ্র দেশকে পালরাজবংশের আদিনিবাস স্থান, অর্থাৎ পাল-রাজগণ বাঙ্গালী ছিলেন এইরূপ কথিত হইয়াছে। পালবংশের রাজ্যলাভের প্রায় তিনশত বৎসর পরে সঙ্কলিত এই পরলোকগত রাখালদাস বন্দোপাধ্যায় বিদেশী পুরাতত্ত্ববিদগণের মধ্যে অনেক দিন ধরিয়৷ বাদবিবাদ চলিতেছে, অনেক এদেশী পুরাবিদেরই মত পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা ভারতবর্ষে কোনো ভাল জিনিষের উৎপত্তি স্বীকার করা কষ্টকর মনে করেন বলিয়াই প্রাচীনভারত শিল্পে পাশ্চাত্য প্রভাব দেখিতে পান । রাখালদাস এই প্রকার বাদ-বিবাদে ভ্রাক্ষেপও করিতেন না ।