পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] পরলোকগত রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় 6. ෆ මා স্বমেরীয় সভ্যতায় কোনো কোনো বিষয়ে এত প্রভেদ আছে যে, পণ্ডিতেরা এই দুই সভ্যতার মধ্যে এত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ স্বীকার করিতে চাহেন না। র্তাহার। আপাতত সিদ্ধান্ত করিয়াছেন, ভারতবর্ষের পশ্চিম-সীমান্তের বাহিরে, অথচ ভারতবর্যেরই নিকটে, হয়ত বেলুচিস্থান অথবা সিস্তানে প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার যাহা মূল, তাহ রোপিত হইয়াছিল । সেই মূল হইতে যে বৃক্ষ উৎপন্ন হয়, তাহার এক কাণ্ড সিন্ধুনদের তীর পয্যন্ত বিস্তুত হইয়াছিল এবং অীর এক কাণ্ড টাইগ্রিস্ এবং ইউফ্রেটিস নদের তীরদেশে পৌছিয়াছিল। সিন্ধু-তীরের প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার উৎপত্তি অপেক্ষ। পরিণতির প্রসঙ্গ আমাদের কাছে অধিকতর শিক্ষাপ্রদ। সুমেরীয় সভ্যতার মূল ধার এবং মিশরীয় সভ্যতার মূলধারা বহুকাল শুকাইয়া গিয়াছে। সিন্ধু-তীরের সভ্যতার মূলধারাও কি সেই দশাই প্রাপ্ত হইয়াছে ? না, হিন্দু-সভ্যতার আকার ধারণ করিয়া আজও প্রবহমান আছে ? গত বৎসরে প্রকাশিত একখানি পুস্তকে আমি দেখাইতে চেষ্ট৷ করিয়াছি, সিন্ধু-তীরের প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতা, বৰ্ত্তমান হিন্দু সভ্যতার অন্তরালে এপনও জীবিত রহিয়াছে, অর্থাৎ হিন্দু-সভ্যতা মূলতঃ সিন্ধু-তীরের প্রাচীন সভ্যতা । রাখালদাসের আবিষ্কারের ফলে ঐতিহাসিক চিন্তাস্রোত এখন কোন খাতে চলিয়াছে তাহ দেখাইবার জন্য একথাটা একটু খোলসা করিয়া বলা আবশ্যক মনে করি। রাখালদাসের পরে র্যাহারা মহেন-জো-দড়ে খনন করিয়াছেন তাহারা কতকগুলি পাথরের মূৰ্ত্তি পাইয়াছেন, যে-সকল মূৰ্ত্তির অঙ্গ-ভঙ্গী এবং মুখভঙ্গী হুবহু হিন্দুশাস্ত্রোক্ত ধ্যানযোগীর মুখভঙ্গীর মত। ভগবৎ গীতায় - سس Tits;یخچ B G5 (8 د-د دlی) শুচে দেশে প্রতিষ্ঠাপ্য স্থিরমাসনমাত্মনঃ । নাতুচ্ছি তং নাতিনীচং চৈলাজিনকুশোত্তরম্ ॥ তত্রৈকাগ্ৰং মনঃ কৃত্ব যতচিত্তেন্দ্ৰিয়ক্রিয়ঃ । উপবিশ্বাসনে যুঞ্জাদ ধোগমাত্মবিশুদ্ধয়ে ॥ সমং কায়শিরোগ্রীবং ধারয়ন্নচলং স্থির । সংপ্ৰেক্ষ্য নাসিকাগ্ৰং স্বং দিশশ্চানবলোকয়ন ॥ প্রশাস্তাত্মা বিগতভীৰ্বহ্মচারিত্রতে স্থিতঃ । মনঃ সংযম্য মচ্চিত্তো যুক্ত আসীত মৎপরঃ ॥ AMAMMAAAS AAASASAASAAAS মহেন-জে-দড়োর এই সকল মূৰ্ত্তর হাত-পা ভাঙিয়া গিয়াছে। কিন্তু যে অংশ অবশিষ্ট আছে তাহাতে ‘সমং কায়শিরোগ্রাবং এবং নাসিকাগ্রবন্ধদৃষ্টি পরিষ্কার বিদ্যমান রহিয়াছে। মহেন জে-দড়োতে প্রাপ্ত কোনে। কোনো মোহরে যোগীর মত পদ্মাসনবন্ধপদে উপবিষ্ট মন্তয্যের চিত্র ও অঙ্কিত রহিয়াছে। ভারতবর্ষের বাহিরে আর কোথাও এইরূপ ঘূৰ্ব বা চিত্ৰ দেখিতে পাওয়া যায় না। কুি স্তু পরবত্তীকালে ভারতবধে যত দেব-দেবীর এবং বুদ্ধ বা জিনের মূৰ্ত্তি গঠিত হইয়াছে তাহার সকলগুলিই নাসিকাগ্রবন্ধদুষ্ট । ইহার কারণ হিন্দুর উপাসনকাণ্ড এ কহিসাবে সোণীর পূজা । বুদ্ধ এবং জিনগণ ধ্যানস্থ ব৷ যোগযুক্ত বলিয়। বর্ণ ত হইয়াছেন । বৈষ্ণবের বিষ্ণু এবং শৈবের শিব ও ঘুেগের . আকারে কল্পিত । তাই বুদ্ধ ও জিন মূৰ্বর ন্যায় হিন্দুর ইষ্টদেবতার মূৰ্ত্তিও নাসিকাগ্রবদ্ধদৃষ্টি। যে ক্ষেত্রে প্রধান লক্ষণে শৈব, বৈষ্ণব, বৌদ্ধ এবং জৈন মৃষ্টির সহিত মহেনজে-দড়োর মূৰ্ত্তির এমন ঐক্য দেখা যায়, সেই ক্ষেত্রে এই দুই শ্রেণীর মূৰ্ত্তির মধ্যে যে একট।. নিকট সম্পর্ক আছে, এ কথা স্বীকার না করিয়া পারা যায় না। স্বতরাং সিদ্ধান্ত করিতে হয়, প্রাগৈতিহাসিক যুগের মহেন জে-দড়োর অধিবাসিগণের মধ্যে কোনো এক প্রকার যোগসাধন এবং যোগস্থ দেবতার বা সাধুর উপাসনা প্রচলিত ছিল, যাহ। কালক্রমে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈনধৰ্ম্মের প্রাণবস্তুতে পরিণত হইয়াছে । রাখালদাসের মহান আবিষ্কার যে মানবের ইতিহাস এবং সমাজ-বিজ্ঞানকে উন্নতির পথে কতদূর লইয়। যাইবে তাহা এখন অল্পমান করা দুঃসাধ্য । ভবিষ্যতে এই সকল বিদ্যার মতই অত্নশীলন হইবে, রাখালদাসের স্মৃতির প্রতি পণ্ডিত-সমাজের শ্রদ্ধা ততই বাড়িতে থাকিবে । রাখালদাসকে আর আমরা সশরীরে দেখিতে পাইব না বটে, কিন্তু রাখালদাসের মৃত্যু নাই, রাখালদাস অমর | “কীৰ্ত্তি র্যস্ত স জীবতি ।”

  • ১৯৩০, ৭ই জুন তারিখে চন্দননগর পুস্তকাগারের উদ্যোগে নৃত্যগোপাল স্মৃতিমন্দিরে শোকসভায় সভাপতির নিবেদন ।