পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

وا ه dt ঠাকুরকে সে ফাকি দিবে, কিন্তু সেই প্রীতির টুইশানি ছাড়িয়া দেওয়ার পরে আজ দুই তিন মাস একেবারে নিরুপায় অবস্থায় ঘুরিতেছে যে ! বিপদের উপর বিপদ । দিন-দুই পরে সে কলেজে গিয়া দেখিল নোটিশবোর্ডে লিথিয়া দিয়াছে যাহাদের মাহিনা বাকী আছে এক সপ্তাহের মধ্যে শোধ ন করিলে কাহাকেও বার্ষিক পরীক্ষা দিতে দেওয়া হইবে না । অপু চক্ষে অন্ধকার দেখিল । প্রায় গোট এক বৎসরের মাহিনাই যে তাহার বাকী ...মাত্র মাস-দুইয়ের মাহিনী দেওয়া আছে- সেই প্রথম দিকে একবার, প্রীতির টুইশানির টাকা হইতে একবার—তাহার পর হইতে খাওয়াই জোটে না তে কলেজের মাহিন ! “দশ মাসের বেতন ছ’টাক হিসাবে ষাট টাকা বাকী— কোনোদিক হইতে একটা কলঙ্কধর নিকেলের সিকিও আসিবার সুবিধা নাই যাহার—যাট টাকা সে এক সপ্তাহের মধ্যে কোথা যোগাড় করিবে ? - হয়ত তাহাকে পরীক্ষা দিতে দিবে না, গ্রীষ্মের ছুটীর পর সেকেণ্ড ইয়ারে উঠিতেও দিবে না--সারা বছরের কষ্ট ও পরিশ্রম সব ব্যর্থ নিরর্থক হইয়। যাইবে । উপায় ? কলেজ হইতে বাহির হইয় আসিয়া সন্ধ্যার সময় সে হাত-খরচের পয়স হইতে চাউল ও আলু কিনিয়া আনিয় থাকিবার ঘরের সামনের বারান্দাতে রান্নার যোগাড় করিল। হোটেলে খাওয়া বন্ধ হইবার পর হইতে আজ কয়দিন নিজে রাধিয়া থাইতেছে। হিসাব করিয়া দেখিয়াছে ইহাতে খুব সস্তায় হয়। কাঠ কিনিতে হয় না। নীচের কারখানার ছুতার-মিস্ত্রীদের ঘর হইতে কাঠের চোচ ও টুক্‌রা কুড়াইয়া আনে, পাচ ছ’ পয়সায় খাওয়া-দাওয়া হয়। আলুভাতে ডিমভাতে আর ভাত । ভাত চড়াইয়া ডাক দিল—ও বহু-বহু --নিয়ে এস আমার হয়ে গেল বলে— ছোট কঁাসিটাও এনে— কারখানার দারোয়ান শস্তৃদত্ত তেওয়ারীর বেী একখানা বড় পিতলের থাল ও কাসি লইয়া উপরে আসিল—এক লোটা জল ও গোটাকতক কাচা লঙ্কাও আনিল । থালা বাসন নাই বলিয়৷ সে-ই দুই বেলা থালা হইতে প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩৭ [ ৩৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড আনিয়া দেয়। হাসিমুখে বলিল, মছলিকী তরকারি হম্ নেহী ছুয়েগা বাবুজী— - কোথায় তোমার মছলি ?.ও শুধু আলু—একটু হলুদ বাট। এনে দ্যাও না বহু ?...রোজ রোজ আলুভাতে ভাল লাগে ন— বহুকে ভাল বলিতে হইবে, রোজ উচ্ছিষ্ট থালা নামাইয়া লইয়া যায়, নিজে মাজিয়া লয়—হিন্দুস্থানী ব্রাহ্মণে যাহা কখনও করে না-অপু বাধা দিয়াছিল, বহু বলে, তুম্ তো হমারে লেড় কেকে বরাবর হোকে বাবুজী— ইস্মে ক্য। হায় ?. দিনকতক পরে মায়ের একটা চিঠি আসিল, হঠাৎ পিছলাইয়া পড়িয়া সৰ্ব্বজয়ার পারে বড় লাগিয়াছে, পয়সার কষ্ট যাইতেছে। মায়ের অভাবের খবর পাইলে অপু বড় ব্যস্ত হইয় উঠে, মায়ের নানা কাল্পনিক দুঃখের চিন্তায় তাহার মনকে অস্থির করিয়া তোলে, হয়ত আজ পয়সার অভাবে মায়ের পাওয়া হইল না, হয়ত কেহ দেখিতেছে ন ম আজ ছু-দিন উপবাস করিয়া আছে, এই-সব নানা ভাবনা আসিয়া জোটে, নিজের আলুভাতে ভাতও যেন গল দিয়া নামিতে চায় না । এদিকে আর এক গোলমাল—কারখানার ম্যানেজার ইতিপূৰ্ব্বে তাহাকে বার-দুই ডাকাইয়। বলিয়াছিলেন উপরে সে যে ঘরে আছে তার সমস্তটাই ঔষধের গুদাম করা হইবে—সে যেন অন্যত্র বাসা দেখিয়া লয়—বলিয়াছিলেন আজ মাসতিনেক আগেকার কথা, তাহার পর আর কোনো উচ্চবাচ্য করেন নাই—অপুও থাকিবার স্থানের জন্য কোথায় কিভাবে কাহার কাছে গিয়া চেষ্টা করিবে বুঝিতে ন পারিয়া একরূপ নিশ্চেষ্টই ছিল এবং দিন যাইতে দেখিয়া ভাবিয়ছিল ও-কথা হয়ত আর উঠিবে না—কিন্তু এইবার যেন সময় পাইয়াই ম্যানেজার বেশী পীড়াপীড়ি আরম্ভ করিলেন । হাতের পয়সা ফুরাইয়া আসিবার সঙ্গে সঙ্গে অপু এত সাধ করিয়া কেন সখের আসবাবগুলি বেচিতে আরম্ভ করিল। প্রথমে গেল প্লেটগুলি—তাও কেহই কিনিতে চায় না—অবশেষে চৌদ্দ আনায় এক পুরানো দোকানদারের কাছে বেচিয়া দিল। সেই দোকানদারই ফুলদানিট