৪র্থ সংখ্যা ] আট আনায় কিনিল, দুখন ছবি দশ আনা । তবু শেষ পৰ্য্যস্ত সে স্যাণ্ডোর ডাম্বেলটা ও জাপানী পদার্ট। প্রাণপণে আঁকড়াইয়া রহিল। সে শীঘ্রই আবিষ্কার করিল ছাতু জিনিষটার অসীম গুণ—সস্তার দিক্ হইতেও বটে, অল্প খরচে পেট ভরাইবার দিক হইতেও বটে। আগে আগে চৈত্র বৈশাখ মাসে তাহার মা নতুন যবের ছাতু কুটিয়া তাহদের খাইতে দিত —তখন ছাতু ছিল বৎসরের মধ্যে একবার পাল-পাৰ্ব্বণে সখ করিয়া খাইবার জিনিষ, তাই এখন হইয় পড়িল প্রাণধারণের প্রধান অবলম্বন। আগে একটু-আধটু গুড়ে তাহার ছাতু খাওয়া হইত না । গুড় আরও বেশী করিয়া দিবার জন্য নিশ্চিন্দিপুরে থাকিতে মাকে কত বিরক্ত করিয়াছে -এখন খরচ বঁাচাইবার জন্য শুধু মুন ও তেওয়ারী-বছর নিকট হইতে কাচা লঙ্ক আনাইয়। তাই দিয়া খায়। অভ্যাস নাই, থাইতে ভাল লাগে না । কিন্তু ছাতু খুব স্বস্বাদু না হউক, তাহাও বিনা পয়সায় পাওযা যায় না। অপু বুঝিতেছিল টানাটানি করিয়া আর বড়-জোর দিনদশেক—তার পর কুল-কিনারাহীন অজানা মহাসমুদ্র ...তখন কি উপায় ?. সে রোজ সকালে উঠিয়া নিকটবৰ্ত্তী এক লাইব্রেরীতে গিয়া দৈনিক ইংরেজি বাংলা কাগজে ছেলে-পড়ানোর বিজ্ঞাপন খুজিয়া ও চেষ্টা করিয়া দেখিল । গ্যাস-পোষ্টের গায়ে অনেক সময় এই ধরণের বিজ্ঞাপন মারা থাকে— চলিতে চলিতে গ্যাস্ পোষ্টের বিজ্ঞাপন দেখিয়া-বেড়ানো তাহার একটা বাতিক হইয়া দাড়াইল। প্রায়ই বাড়ীভাড়ার বিজ্ঞাপন। আলো ও হাওয়াযুক্ত, ভদ্রপরিবারের থাকিবার উপযোগী দুইখানি কামরা ও রান্নাঘর, ভাড়া নামমাত্র। যদি বা কালেভদ্রে এক আধটা ছেলেপড়ানোর বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়,তার ঠিকানাটি আগে কেউ ছিড়িয়া দিয়াছে, পাছে উমেদার বেশী হইয় পড়ে। কাপড় ময়লা হইয়া আসিল বেজায়, সাবানের পয়সার অভাবে কাচিতে পারিল না । তেওয়ারীর স্ত্রী একদিন সোডা ও সাবান দিয়া নিজেদের কাপড় সিদ্ধ করিতে বসিয়াছে, অপু নিজের ময়লা সার্ট ও ধুতিখানা লইয়া গিয়া বলিল —বছ, তোমার সাবানের বোল একটু দেবে, আমি অপরাজিত AAAAAA AAAA AAAA SAAAAA SAAAAA AAAAMASAMAMAAA AAAA SAAAAASA SAASAASSAAAAA AAASA SAASAASAAAS এ দুটোয় মাখিয়ে রেখে দি—তার পর ওবেলা কলেজ 《: 이 이 থেকে এসে কলে জল এলে কেচে দেবে—দেবে ?-- তেওয়ারী বস্তু বলিল- দে দিজিয়ে না বাবুজী, হীম্ হাড়ি মে ডাল দেগা। অপু ভাবে—আহা, বহু কি ভাল লোক !...যদি কখনও পয়সা হয় ওর উপকার করবে।— এক একবার তাহার মনে হয় যদি কিছু ন জোটে, তবে এবার হয়ত কলেজ ছাড়িয়া দিয়া মনসাপোতা ফিরিতে হইবে – কিন্তু সেখানেও আর চলিবার কোনো উপায় নাই, তেলি ও কুণ্ডুরা পূজার জন্য অন্তস্থান হইতে পূজারী বামুন আনাইয়া জায়গাজমি দিয়া বাস করাইয়াছে । আজ কয়েকদিন হইল মায়ের পত্রে সে-খবর জানিয়াছে, এখন তাহার মাকেও আর তেলির তেমন . সাহায্য করে না, দেখে শোনে না। মায়ের একাই চলে না— তার মধ্যে সে আবার কোথায় গিয়া জুটিবে ?..তাহা ছাড়া পড়াশুন ছাড়া ?.. অসম্ভব ! . সে নিজে বেশ বুঝিতে পারে এই এক বৎসরে তাহার মনের প্রসারত এত বাড়িয়া গিয়াছে, এমন একটা নতুনভাবে সে জগতটাকে, জীবনটাকে দেখিতে আরম্ভ করিয়াছে—যা কি ন! দশ বৎসর মনসাপোতা কি দেওয়ানপুরে পড়িয়া হাবুডুবু খাইলেও সম্ভব হইয়া উঠিত না । সে এটুকু বেশ বোঝে কলেজে পড়িয়া ইহা হয় নাই, কোনো প্রোফেসারের বক্তৃতাতেও না—যাহা কিছু হইয়াছে, এই বড় আলমারী ভরা লাইব্রেরীটার কাছে সে তাহার জন্য কৃতজ্ঞ। প্রণবের ও অনিলের মত সহপাঠী বন্ধুর সাহচৰ্য্য—সকলের উপরে এই দু-চারজন অতি অল্প সংখ্যক বন্ধুবান্ধবের কথাবাৰ্ত্তা ও আশা-নিরাশ লইয়। যে একটা অনুকূল আবহাওয়ার সৃষ্টি করিয়াছে তাহারই অনুপ্রেরণ। বাকীট হইয়াছে সবই কলেজ লাইব্রেরীট হইতে । যতক্ষণ সে লাইব্রেরীতে থাকে, ততক্ষণ তাহার খাওয়া-দাওয়ার কথা তত মনে থাকে না । এই সময়ট এক একটা খেয়ালের ঘোরে কাটে । খেয়ালমত এক একটা বিষয়ে প্রশ্ন জাগে মনে , তাহার উত্তর খুজিতে গিয়া বিকারের রোগীর মত অদম্য পিপাসায় সে সম্বন্ধে
পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।