পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] ভাইফেঁটা öጫ শশিমুখী একখানা পিড় পাতিয়া এক গেলাস জল গড়াইয়া রাখিল । তাহার পর ছোট একখানা রেকবীতে স্থখানা রুট এবং একটুখানি গুড় আনিয়া দিল। অটল বসিয়া খাইতে প্রবৃত্ত হইল । হুটু চীৎকার করিয়া উঠিল, “নিজের দিব্যি সব গিলবে, আমার বেলা শুধু বালি। বাবার সব বাজে কথা।” অটল একটু কাষ্ঠ হাসি হাসিয়া বলিল, “বেটা মনে ক’রছে, বাপ ন জানি কত লুচি মাংসই ঠস্ছে। এগুলোর কোনো জন্মে বুদ্ধি হবে না, একেবারে গাধা ।” ছেলেমেয়ের এ হেন সমালোচনাটা তাহাদের মায়ের কানে মোটেই ভাল লাগিল না। সে একটু উত্তেজিতভাবেই বলিল, “ছেলেমামুষের কত আবার বুদ্ধি হবে ? তবু ত কুন্তী বেচারী কোনোদিন টু শব্দ করে না, খেতে না পেলেও । মুটুটার ভুগে ভুগে মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে।” অটল বলিল, “তেমনি সব স্বাস্থ্যও হয়েছে। আমাদের গুণ্ঠতে এত ভুগতে ত কই কাউকে দেখিনি।” শশিমুখী বিরক্ত হইয়া বলিল, “আচ্ছা বাপু, সব না হয় আমার গুষ্ঠীর দোষেই হয়েছে। তবু ত তোমাদের বাড়ীর আর কোনো বউ আমার মত ভূতের খাটুনি খাটুতে পারে না।” অটল থাওয়া শেষ করিয়া জলের গেলাসটা মুখের কাছে তুলিতে তুলিতে বলিল, “ঝগড়া করবার জন্তে একেবারে যেন কোমর বেঁধেই আছ।” শশিমুখী উত্তর দিল না। কখা বাড়াইলেই বাড়িয়া চলে, তাহাতে কোনো পক্ষেরই কিছু লাভ হয় না। একেই ত মানসিক অশান্তির খোরাকের কিছু কম্‌তি নাই, কেন আর ইচ্ছা করিয়া বাড়ান ? তাহার স্বামী জল খাইয়া উঠিয়া গেল। কিন্তু অটলের খুং ধরার প্রবৃত্তিও যেন সেদিন বাড়িয়া গিয়াছিল। শশিমুখী কি একটা কাজে ভিতরে আসিতেই সে বলিয়া উঠিল, “আচ্ছা ঘরগুলো একটু গুছিলু রাখতে কি তোমার হাতে কাটা ফোটে ? একে ত এই বাড়ী ; তার উপর যা ছিরি করে রাখ, লোককে বাড়ীতে আনতে লজ্জা করে।” তাহার স্ত্রী বলিল, “ঘরদোর পরিষ্কার করার উৎসাহ আর আমার নেই। সবদিক দিয়েই যা দশা, তার আর ঘর গোছান, আর না গোছান । অটল বলিল, “কিসে যে তোমার উৎসাহ আছে তাও ত জানি না, খেটে খেটে একটা মানুষ যে মুখে রক্ত উঠে মরছে, তা কে বা বসে আছে দেখতে। উৎসাহ নেই বলে এবার আমিও হাত পা গুটিয়ে বসে থাকব।” শশিমুখী বলিল, “তাই থাকগে যাও, বলিয়া তৎক্ষণাৎ বাহির হইয়া চলিল । অটল বাধা দিয়া বলিল, “তোমার গিরিজা কাকাকে যে চিঠি লিখতে বলেছিলাম, তা লিখেছিলে ?” শশিমুখী সংক্ষেপে বলিল, “না।” অটল জিজ্ঞাসা করিল, “কি কারণে শুনি ? একটা কথাও শুনলে জাত যায় নাকি ?” শশিমুখী কি যেন বলিতে গিয়া থামিয়া গেল। মিনিটখানিক চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, “পোষ্টকার্ড, খাম, কিছু ছিল না, কি করে লিখব? আমার ভাত ধরে যাবে, আমি এখন চললাম।” অটল বলিল, “কুন্তীকে দিয়ে হারিকেনটা পাঠিয়ে দিও। ঘরের ভিতরে ত বেশ অন্ধকার হয়ে এল।” শশিমুখী চলিয় গেল। মেয়েকে দিয়া লণ্ঠন পাঠাইয়া দিয়া নিজেও একটা কেরোসিনের ডিবে জালাইয়া লইল। আবার রান্নাঘরের কাজ চলিতে লাগিল । দরিদ্রের ঘর, দিনের পর দিন একই ভাবে কাটিয়া যায়। কোনোদিন ছেলেমেয়ে ভাল থাকে, কোনোদিন থাকে না ; কোনোদিন স্বামীর সঙ্গে বেশী কথা-কাটাকাটি হয়, কোনোদিন চুপচাপ কাটিয়া যায়, এইটুকু মাত্র একদিনের সঙ্গে অন্য দিনের তফাৎ। আর কোনো আশা নাই, আনন্দ নাই, বৈচিত্র্য নাই। লোকের বাড়ী বেড়াইতে যাইবার সময় তাহীদের হয় না, তাহাদের বাড়ীও বড় কেহ আসে না । কুন্তী মাঝে মাঝে পাশের বাড়ীর নূতন বৌটির সঙ্গে গল্প করিতে যায় বটে, তাও বুড় বেশীবার নয়, কারণ বউয়ের শাশুড়ী বেশী গল্প করা পছন্দ করে না। সেদিন আপিসের সময় খাইতে বসিয়া অটল বলিল,