পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩৭ [ رىe */ ভাগ, 8 gr〉8 এখুনি ছুটে আসবে—বাজাব দেখবেন ? সে হাসিয়া একটা হাতঘণ্ট। বাজাইতেই লম্ব। একজন নাস" আসিয়া হাজির । সে চলিয়া গেলে অনিলের মা বলিলেন —কি যে করিস মিছেমিছে ? ছিঃ– দুজনেই খুব হাসিতে লাগিল। খানিকক্ষণ গড়ের মাঠের দিকে বেড়াইয়া সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরিয়া অপু সবে আলোটি জালিয়াছে, এমন সময় সত্যেন ও অনিলের পিসতুতে ভাই ফণি—অপু তাহাকে হাসপাতালেই প্রথম দেখিয়াছে, সেইখানেই প্রথম আলাপ — ব্যস্তসমস্ত অবস্থায় ঘরে চুকিল । সত্যেন বলিল – ওঃ তোমাকে দুবার এর আগে খুজে গেছি—এখুনি ষ্ঠাসপাতালে এস —জান না ? : · - অপু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে উহাদের মুখের দিকে চাহিতেই ফণি বলিল অনিল মারা গিয়েচে এই সাড়ে ছ’টার সময়—হঠাৎ আপনার কাছে দুবার . সকলে ছুটিতে ছুটিতে হাসপাতালে গেল। অনিলের মৃতদেহ খাট হইতে নামাইয়া শাদ চাদর দিয়া ঢাকিয় মেজেতে রাথিয়াছে । বহু আত্মীয়স্বজনে কেবিন ভরিয়া গিয়াছে, ক্লাসের অনেক ছেলে উপস্থিত, একদল ছেলে এইমাত্র এসেন্স ও ফুলের তোড়া লইয়৷ কেবিনে ঢুকিল । অল্পপরেই মৃতদেহ নিমতলায় লইয়া যাওয়া হইল । সব কাজ শেষ হইতে রাত্রি তিনটা বাজিয় গেল । অন্ত সকলে গঙ্গাস্নান করিতে লাগিল । অপু বলিল, তোমরা নাও, আমি গঙ্গা নাচবে না, কলের জলে সকাল বেলা নাইবে । কলকাতার গঙ্গায় নাইতে আমার মন মায় না । আনিলের বাবার উপর হইল—এমন দৃঢ়চেতা লোক সে কখনও দেখে নাই, বিপদেও তিনি সারারাত বাধানে চাতালে বসিয়া ধীরভাবে কাঠের নল বসানো সটুকাতে তামাক টানিয়াছেন, অপুকে বার-দুই জিজ্ঞাসা করিয়াছেন-বাবা তোমার ঘুম লাগেনি তো ?-- কোনো কষ্ট হয় তো ব’লো বাব । অপু কথা শুনিয়৷ চোখের জল রাখিতে পারে নাই । অপুর অত্যস্ত ভক্তি 午マ。 সুনীল সিগারেট কেস্ট তাহার জিন্মায় রাখিয়া জলে নামিল, সে ঘাটের ধাপের উপর বসিয়া রহিল । অন্ধকার আকাশে অসংখ্য জলজলে নক্ষত্র, রাত্রিশেষের আকাশে উজ্জল সপ্তর্ষিমণ্ডল ওপারে জেসপ কোম্পানীর কারখানার মাথায় ঝুকিয় পড়িতেছে, পূৰ্ব্ব-আকাশে চিত্র প্রত্যাসন্ন দিবালোকের মুখে মিলাইয়া যাইতেছে। অপু মনের মধ্যে কোনো শোক কি দুঃপের ভাব খুজিয়৷ পাইল না—কিন্তু মাত্র তিনদিন আগে কোম্পানীর বাগানে বসিয়া যেমন আনিলের সঙ্গে গল্প করিয়াছিল, সারা আকাশের অসংখ্য নক্ষত্ররাজির দিকে চাহিয়৷ বাল্যে নদীর ধারে বসিয়া সন্ধ্যার প্রথম নক্ষত্রটি দেখিবার মত এক অপূৰ্ব্ব, অবর্ণনীয় রঙ্গস্যের ভাবে তাহার মন পরিপূর্ণ হইয়া গেল, কেমন যেন লাগিল অসীম রহস্য ও বিপুলতার আবেগে নিৰ্ব্বক নক্ষত্রজগৎ-যেন মূহুর্তে মুচৰ্ত্তে স্পন্দিত হইতেছে। মনে হইতে অনিলের মৃত্যুর পর অপু বড় মুযড়াইয়া পড়িল । শোকে বা দুঃখে নয়, কিন্তু নানারকম গোলমালে, অভাব অনটনে, অনাহার, কলেজে একরাশ দেনা--- ওদিকে মায়ের কষ্ট। তাহ ছাড়া অনিলের মৃত্যুর পর কেমন এক ধরণের অবসাদ শরীরে ও মনে আশ্রয় করিয়াছে, কোনে কিছু কাজে উৎসাহ আসে না, হাতপা ওঠে না । বৈকালে ঘুরিতে ঘুরিতে সে কলেজ স্কোয়ারের একখান! বেঞ্চির উপর বসিল । এতদিন তে রহিল, কিছুই স্থির হইল না, এভাবে আর কতদিন চলে ? ভাবিল না হয় এ্যাম্বুলেন্সে যেতাম, কলেজের অনেকে তো যাচ্চে, কিন্তু মা কি তা যেতে দেবে ? পরে ভাবিল—বাড়ী চলে যাই, মাসখানেক অর্ডারলি রিটি ট করা যাকৃ—তারপর জি, এইচ, কিউ কি ব্যবস্থা করেন দেথা যাবে। পাশে একজন দাড়িওয়াল! ভদ্রলোক অনেকক্ষণ হইতে বসিয়াছিলেন । মধ্যবয়সী লোক, চোখে চশমা, হাতের শিরগুলা দড়ির মত মোটা । তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, সাতারের ম্যাচ কবে হবে জানেন ? অপু জানে না, বলিতে পারিল না । ক্রমে দু-চার কথায়