পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] অপরাজিত Q)● গাহিবে । সৰ্ব্বজয়া ছেলের মন বুঝিয়া অমনি বলিত – তা অপু এবার কেন একট। গান কর না ?..দু একবার লাজুক মুখে অস্বীকার করার পর অমনি অপু গান স্বরু করিয়া দিত । সেই অপু এখন এক জন মানুষের মত মাতুষ । রূপ এ অঞ্চলের মধ্যে কে কবে দেপিয়াছে ? একহারা চেহারা বটে, কিন্তু সবল, দীন, শক্ত হাত-প। । কি মাথার চুল, কি ডাগর চোখের নিষ্পাপ, পবিত্র দৃষ্টি, রাঙা ঠোটের দুপাশে বাল্যের সে সুকুমার ভঙ্গী বিলুপ্ত হয় নাই, শুধু সৰ্ব্বজয় তাহ ধরিতে পারে। অপু কিন্তু সে ছেলেবেলার অপু আর নাই । প্রায়ই সব বদলাইয়া গিয়াছে, সে অপূৰ্ব্ব হাসি, সে ছেলেমামুমি, সে কথায় কথায় মান-অভিমান, আবদার, গলায় সে রিণ রিণে মিষ্টি সুর — এখনও অপুর স্থর খুবই মিষ্ট--তবুও সে অপরূপ বাল্যস্বর, সে চাঞ্চল্য~~পাগলামি— সে সবের কিছুই নাই। সব ছেলেই বাল্যে সমান ছেলেমান্সয থাকে না, কিন্তু অপু ছিল মূৰ্ত্তিমান শৈশব। সরলতায়, দুষ্ট মিতে, রূপে, ভাবুকতায়—দেবশিশুর মত। এক ছেলে ছিল তাই কি, শত ছেলেতে কি হয় ? সৰ্ব্বজয় মনে মনে বলে—বেশী চাইনে, দশট। পাচট চাইনে ঠাকুর, ওকেই আর জন্মে আবার কোলজোড়া করে দিও। সৰ্ব্বজয়ার জীবনের পাত্র পরিপূর্ণ করিয়া অপু যে অমৃত শৈশবে পরিবেশন করিয়াছে, তারই স্মৃতি তার দুঃখ-ভরা জীবন-পথের পাথেয়। আর কিছুই সে চায় না। কোনো কোনো দিন রাত্রে অপু মায়ের কাছে গল্প শুনিতে চায়। সৰ্ব্বজয়ী বলে—তুই তো কত ইংরিজি বই পড়িস, কত কি –তুই একটা গল্প বল না বরং শুনি । অপু গল্প করে। দুজনে নানা পরামর্শ করে, সৰ্ব্বজয়৷ পুত্রের বিবাহ দিবার ইচ্ছা প্রকাশ করে। কাটাদহের সাণ্ড্যাল বাড়ী নাকি ভাল মেয়ে আছে সে শুনিয়ছে, অপু পাশটা দিলেই এইবার. । কলিকাতায় যে জেঠাইমাদের বাড়ীতে সে গিয়াছিল, সে কথা বলে। সৰ্ব্বজয়ী বলে—তাই নাকি ?...তোকে را بگی 으 9 খুব যতুটত্ব করলে ?.কি খেতে দিলে ?.অপু নানা কথা সাজাইয়া বানাইয়া বলে। সৰ্ব্বজয়ী বলে—আমায় একবার নিয়ে যাবি ? কলকাত কখনও দেখিনি, বটুঠাকুরদের বাড়ী দুদিন থেকে ম৷ কালীর চরণ দর্শন করে আসি ত হ’লে ? --অপু বলে, বেশ তে মা, নিয়ে যাব, যে ও সেই পূজোর সময় । সৰ্ব্বজয়ী বলে একট। সাধ আছে অপু, বটুঠাকুরদের দরুণ নিশ্চিন্দিপুরের বাগানখান। তুই মানুষ হয়ে যদি নিতে পারতিস্ ভুবন মুখযুদের কাছ থেকে, তবে— সামান্য সাধ, সামান্ত আশ । কিন্তু যার সাধ, যার আশ!, তার কাছে ত ছোট ও নয়, সামান্য ও নয় । মায়ের ব্যথা কোনখানে অপুর তাহা বুঝিতে দেরি হয় না। মায়ের অত্যন্ত ইচ্ছ। নিশ্চিন্দিপুরে গিয়া বাস কুর, সে অপু জানে। সৰ্ব্বজয় বলে—তুই মান্তম হ’লে, তোর একটা ভাল চাকুরী হ’লে, তোর বেী নিয়ে তখন আবার নিশ্চিন্দিপুরে গিয়ে ভিটেতে কোঠ উঠিয়ে বাস করবো । বাগানখান। কিন্তু যদি নিতে পারিস্—বড় ইচ্ছে হয় । অপুর কিন্তু একটা কথা মনে হয়, ম আর বেশী দিন বাচিবে না। মায়ের চেহারা অত্যন্ত রোগ হইয়া গিয়াছে এবার, কেবলই অমৃখে ভুগিতেছে । মুখে যত রকম সান্থন দেওয়া, যত আশার কথা বলা সব ব’লে । জানালার ধারে তক্তপোষে দুপুরের পর ম। একটু ঘুমাইয়া পড়ে, অনেক বেল পড়িয়া যায়। অপু কাছে আসিয়া বসে, গায়ে হাত দিয়া বলে – গা যে তোমার বেশ গরম, দেখি ? - সৰ্ব্বজয় সে সব কথা উড়াইয় দেয় । এ-গল্প ও-গল্প করে। ব’লে -হঁ্যারে, অতসীর মা আমার কথাটখা কিছু ব’লে ? অপু মনে মনে ভাবে—ম। আর বঁাচবে ন বেশী দিন । কেমন যেন—কেমন—কি কোরে থাকুবে মা মারা গেলে ? ( ক্রমশ: )