পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(tRe ുബ്ബയ്ക്കേക്ഷ--്.--ബ്ഘ প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড কিন্তু ভাবের আদর্শও সংস্কৃতের প্রভাব হইতে মুক্ত হউক ইহা তিনি চাহেন নাই। সকল রচনার ভিতরই তাহার আদর্শের উপর গৌরব বৃদ্ধির ভাবটি বর্তমান ছিল, দেশহিতৈষণার অভাব কোথাও পরিলক্ষিত হয় নাই। সরস ব্যঙ্গের মধ্যেও ঐ স্বর, ঐ ধ্বনি। একস্থানে তিনি বলিতেছেন,“পুরুষজাত শিক্লিকাটা টিয়—কারে না পড়লে স্ত্রীকে স্মরণ হয় না । সুতরাং স্ত্রীর মান বেড়ে উঠে —সে সময় কেবল স্ত্রীই হৰ্ত্তা, স্ত্রীই কর্ক, নতুবা স্ত্রী পায়ের তলায় পড়ে থাকে।” তাহার গ্রাম্যভাষার মধ্যে মাধুৰ্য্য ছিল, বর্ণনার মধ্যেও সৌন্দর্য্য ছিল। একটি স্থান আমরা করিয়া দেখাইতেছি— “দেখিতে দেখিতে পশ্চিমে একটা কাল মেঘ উঠিল— দুই এক লহমার মধ্যে চারিদিকে ঘটধুটে অন্ধকার হইয়া আসিল—হু হু করিয় ঝড় বহিতে লাগিল— কোলের মাতুষ দেখা যায় ন|—সামাল সামাল ডাক পড়ে গেল । ঢেউগুলো এক একবার রেগে উচ্চ হইয় উঠে, নৌকার উপর ধপাস ধপাস করিয়া পড়ে ।” ‘অালালের ঘরের দুলাল’-এর মধ্যে ঠক্‌ চাচা নামক একটি মুসলমান-চরিত্রের অবতারণ আছে। ঐ জাতীয় চরিত্র যে কথাসাহিত্যে স্থান পাইতে পারে, বিদ্যাসাগরের যুগে কেহ কল্পনা পর্য্যন্ত করিতে পারেন নাই । র্তাহার ঐ অসম সাহস দেখিয়াই মধুসূদন দত্ত এবং দীনবন্ধু মিত্র মহাশয় স্ব স্ব গ্রন্থে ঐ জাতীয় চরিত্র অঙ্কন করিতে আর ভীত হন নাই । ঠক চাচার বর্ণনায় লেখক রলিতেছেন-- “ঠক্‌ চাচা বগলে একটা কাগজের পোটুল, মুখে কাপড়, চোক দুটা মিটমিট করিতেছে। দাড়িটি ঝুলিয় পড়িয়াছে, ঘাড় হেঁট করিয়া চলিয়া যাইতেছে। কাপড়ে বাধা মিঠাই খুলিয়া মুখে ফেলিতে যান অমনি পিছন হইতে দুই বেট। মিশ কালে। কয়েদি গোপ চুল ও ভুরু সাদা, চোক লাল, হা হা শব্দে উদ্ধৃত বিকট হাস্য করত মিঠায়ের ঠোঙ্গণটি সট করিয়া কাড়িয়া লইল এবং দেখাইয় দেখাইয়। টপ-টপ থাইয়। ফেলিল ।” এমন স্বাভাবিক করিয়া সাধারণ ঘটনা বর্ণনা করার প্রথা প্যারীচঁাদই প্রথম প্ৰবৰ্ত্তন করিলেন। ‘পোটলা’, ‘চোক’, ‘মট’, ‘টপাটপ’ ‘মিশকাল প্রভৃতি বাঙ্গলার গ্রাম্য শব্দগুলি সাহিত্যের ভিতর চালান বড় অল্প সাহসের কার্য্য নহে । উপন্যাসোত্ত যাহার তাহার মুখে বসান আর সাহিত্যের মধ্যে চালান, এক কথা নহে । প্যারীচাদের ভাষা, লিখনপদ্ধতি ও মতামত পৰ্য্যন্ত উত্তরকালে বাঙ্গল সাহিত্যের ভিতর এরূপভাবে চলিয়া যাইবে, তাহ তিনি নিজে ভাবিয়াছিলেন কি ন৷ জানি না । তাহার “মদ খাওয়া বড় দোযের” জীবস্ত চিত্র যে সধবার একাদশীর নিমৰ্চাদের মধ্যে ফুটিয়া উঠিবে, কে ভাবিয়াছিল ? কে মনে করিয়াছিল, মাইকেলের “বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রেণ’এর মধ্যে র্তাহার প্রভাব এরূপ সুস্পষ্ট প্রত্যক্ষ করা যাইবে ? বিদ্যাসাগর ও অক্ষয় দত্ত মহাশয় সম্যক সংস্কৃতাতুসারিণী ভাষা সৃষ্টি করিয়া উহাই সাহিত্যের ভাষা, উহাই আদর্শ বঙ্গ ভাষা, উহাই ভদ্রলোকের ভাষা, এই ধারণ দেশবাসীর মস্তিষ্কে প্রবেশ করাইয়া দেন । তাহাদের মধ্যে আদর্শও ছিল, মনুষ্যত্ববৰ্দ্ধক উপাদানও ছিল, সমাজ-হিতৈষণাও ছিল । কিন্তু সে আদশ ঠিক বাঙ্গালী সাধারণের মধ্য দিয়া ফোটে নাই । সে উপাদানটি পল্লীর বাঙ্গালী সমাজের বলিয়া আমাদের গ্রহণ করিবার উপায় ছিল না। সে সমাজ-হিতৈষণ উচ্চাঙ্গের ; সাধারণের দোষ দুৰ্ব্বলতার মধ্য দিয়া আমাদের মধ্যে আসে নাই, এক কথায় তাহদের আদর্শ স্বষ্টি ও আদর্শ বর্ণনার মধ্যে বাঙ্গলার, তথা দীনদুঃখীর, সুখদুঃখ স্থান পায় নাই। বিদ্যাসাগর মহাশয় সাধারণতঃ অহুবাদ সাহায্যেই সাহিত্যের প্রচার এবং প্রসার করিয়া গিয়াছেন । অম্বুবাদ-সাহিত্যই তাহার দ্বারা সমৃদ্ধ হইয়াছিল। বর্ণপরিচয়, ব্যাকরণকৌমুদী, সে স্বতন্ত্র সামগ্রী । অক্ষয়চন্দ্র দত্ত মহাশয় একজন নীতিবাদী ও আদর্শকাম ব্যক্তি ছিলেন । র্তাহার গম্ভীর প্রকৃতির অনুরূপ সাহিত্যই তিনি গড়িয়া তোলেন ; মানবের সদগুণসকল কি প্রকারে সমাজের মধ্যে বৰ্দ্ধিত হইতে পারে তাহার উপায় তিনি নানারূপে দেখাইয়াছেন। তিনিও