পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] পল্লীগ্রামের মধ্যে আসিয়া, পল্লীর স্থখদুঃখ আলোচনা করেন নাই । তাহার করেন নাই বলিয়া মন্দ করিয়াছিলেন, তাহ বলিতেছি না। র্তাহাদের আদর্শে র্তাহারা ঠিকই ছিলেন । প্যারীচাঁদের আদর্শ অন্যপ্রকারের । তিনি ষ্টহীদের অনুস্থত পথে আদর্শের সন্ধান না করিয়া অন্যত্র আদর্শের శి করিয়াছেন । তিনি ইহাদের বিরুদ্ধ একটি নুতন পথ বাছিয়া লইয়াছিলেন । তিনি আপনার কথাসাহিত্যে বাঙ্গলার খাট সমাজচিত্র, পল্লীর প্রকৃত নরনারীর চিত্র এবং তাহদেরই সত্যকারের স্থখদুঃখের চিত্রই আঁকিয়াছেন। সীতা, শকুন্তলা, বা দময়ন্তী প্রভৃতির কথা প্রবন্ধের ভিতর রাগিয়া দিয়া কথাসাহিত্যে বাবুরামগৃহিণী ও মতিলালের বধুটিকে আনিয়া দাড় করাইয়াছেন । আদশের প্রতি শ্রদ্ধা কাহারও অপেক্ষ তাহার অল্প ছিল না । তবে সেই আদর্শটি সাধারণ লোকের সুখদুঃখের ভিতর দিয়া, পল্লীর ছায়াস্নিগ্ধ ছবিখানির বর্ণনা করিয়া ফুটাইয়৷ তুলিয়াছেন। বাঙ্গালী সমাজের পাপ, দোষ ও দুর্বলতাও তাহার বর্ণনার মধ্যে স্থান পাইয়াছে । পল্লীর সুখদুঃখ অভাব-অভিযোগের আলোচনা করিয়া সমাজকে দোষশূন্ত করাই তাহার উদ্দেশু ও অভিপ্রায় ছিল । প্রবন্ধ লিখিয়া সমাজ-চিত্র আঁকিয়া, এমন কি ব্যঙ্গবিদ্রুপ করিয়াও সেই উদ্দেশ্য, সেই অভিপ্রায় সিদ্ধ করিবার চেষ্টা পাইয়াছিলেন । তিনি জানিতেন পল্লী-জননীর ছায়াশীতল পর্ণকুটারথানির মধ্যেই জাতির মঙ্গলের বীজ নিহিত আছে। জাতির জীবনীশক্তি নগরে নাই, আছে পল্লীতে। তাই তিনি পল্লীর ঘটনা লইয়া আপনার কথা-কাহিনী অরম্ভ করিয়াছেন। শুiমশষ্পময় মাঠ এবং গ্রামের গোময়লিপ্ত অঙ্গনের মধ্যেই তিনি আপনার স্থান বাছিয়। লইলেন । পুষ্করিণীর ঘাটে পল্লীরমণীদের আলাপের মধ্যে তিনি কেবল মাধুর্য্যই দেখেন নাই। পরকুৎসা এবং হিংসাদ্বেষের কালিমাটুকুও দেখিয়াছেন। ধনী পরিবারের ষে চিত্ৰখানি তিনি কথাসাহিত্যে স্থান দিয়াছেন, তাহ পল্লীর মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চিত্র, নগরবাসী বিলাসী ধনীর নহে । সে ধনী পরিবারের গৃহিণীকে হিন্দুরমণী করিয়াই و سامسوخوخة বঙ্গসাহিত্যে প্যারীচঁাদ ぐン、> আঁকিয়াছেন। স্বয়ং ইংরেজী শিক্ষিত হইয়াও পাশ্চাত্য রমণীর প্রাণ তাহার মধ্যে পুরিয়া দেন নাই। দেশীয় মূৰ্ত্তির ভিতর ইঙ্গবঙ্গ সমাজের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করার পক্ষপাতী তিনি একেবারেই ছিলেন না। দেশীয় চিত্রের দেশীয় সজাই হউক, প্রাণপ্রতিষ্ঠাও দেশেরই মন্ত্রে ইউ", ইহাই তাহার মত ছিল। র্তাহার স্বই নারী দোযে গুণে বাঙ্গালী নারী ; তথাকথিত অৰ্দ্ধসভ্য হউক, তথাপি পল্লীর নারী। প্রৌঢ় বাবুরামের দ্বিতীয় পক্ষের অল্পবয়স্ক স্ত্রীকে পৰ্য্যস্ত মৌন বেদনাময়ী পল্লীবধুরূপেই তিনি গড়িয়া তুলিয়াছেন। বাবুরামের পুত্র মতিলাল ফোতোবাবু! পল্লীর কুসঙ্গে মিশিয়া কলিকাতার আবহাওয়ার মধ্যে গিয়া সে একটি অদ্ভুত জীব হইয়া দাড়াইয়াছিল। তাহার নিকট গর্তবারিণী' ( অবশ্য পতিহীন হইলে পর ) কেবল অনাদর ও তিরস্কারেরই ভাগিনী হইয়াছেন তাহী নহে, দুঃখ বেদন জানাইতে আসিয়া গালে চড় পর্য্যস্ত খাইয়। ফিরিতে হইয়াছে । চড় থাইয়া মতিলালের মায়ের মুখে তিরস্কার ফুটিল না। উপদেশ বর্ধিত হইল না। সৌন্দৰ্য্য বিকাশ তেমন হুইল না বটে, কিন্তু কঠোর সত্য ফুটিয়া উঠিল। মাধুৰ্য্য রহিল না বটে, কিন্তু স্বাভাবিক হইল। সেই মাতাই একদিন ( অবশ্ব স্বামীর বর্তমানে ) মতিলাল এবং তাহীর সঙ্গীদের দ্বারা অবমানিত এক রমণীকে তাহীদের কবল হইতে রক্ষা করিয়াছিলেন । সেই মা চড় গাইয়া ফিরিয়াই গেল, মুখে কিছু প্রকাশ করিল না । রক্ষণ করিয়া গৃহিণী যে কথাকয়টি রমণীটিকে বলেন, তাহা বড়ই মিষ্ট ; পাঠককে উস্থা শুনাইবার লোভ সংবরণ করিতে পারিলাম না । ‘ম ! কেঁদ না, ভয় নাই—তোমাকে আমি বুকের উপর রাখব। তুমি আমার পেটের সন্তান – যে স্ত্রী পতিব্ৰতা তাহার ধৰ্ম্ম পরমেশ্বর রক্ষা করেন । এইরূপে সাত্বনা দিয়া গৃহিণী সঙ্গে লইয়া তাহার পিত্রালয়ে রাখিয়া আসিলেন।” বাঙ্গালী গৃহের এরূপ চিত্র বঙ্গসাহিত্যের উন্নতির যুগেও অধিক আছে মনে হয় না । প্যারীচাদের অঙ্কিত চরিত্রগুলি সৌন্দর্ঘ্যের দিক দিয়া