পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহামায়া শ্রীসীতা দেবী R సె সন্ধ্যার সময় বিজয় বাড়ী ফিরিয়া ঘরে ঢুকিয়াই চীৎকার করিয়া বলিল, “এ কি মায়া-দি, কোন আলাদিনের দৈত্য এসে দিন-দুপুরে আমার ঘরট এরকম বদলে দিয়ে গেল ?” মায়া গম্ভীর মুখে বসিয়াছিল। বিজয়ের কথায় চেয়ার ছাড়িয়া উঠিয়া পড়িয়া বলিল, “দৈত্যের মধ্যে ত আমি আর মহেশ । যা ছিরি করে রেখেছিলে ঘরের, ঢুকলেই মাথা ঘুরে ওঠে।” বিজয় বলিল, “ত ন৷ ঢুকলেই ত হয়। কি কারণে ঠঠাৎ আমার ঘরে তোমার শুভাগমন হ’ল ? আমার কাপড়-চোপড় বই-খাত সব ফেলে দিয়ে ঘর পরিষ্কার করেছ না কি ?” মায়া বলিল, “সব আছে তোমার মায়ের ঘরে, ভাবনা নেই। এখন হাত মুখ ধুয়ে চা-টা খাও, ক্রমে সব আবর্জনাগুলিই ফিরে পাবে, কিছুর জন্যে আফসোস করতে হবে না।” বিজয় বলিল, “চ ? চা পাব কোথায় শুনি ? বাবা গিয়ে অবধি ত ও-জিনিষটার মুখও দেখিনি। গেলাস গেলাস জলই গিলি দুবেল, কেবল কলেজের টিফিনের সময় ট্যাকে পয়সা থাকলে, বেরিয়ে গিয়ে এক পেয়ালা চ) থেয়ে আসি ।” মায় বলিল, “আজ বাইরের দুজন ভদ্রলোক এসেছিলেন কি না, তাদের জন্যে চা, জলখাবার সব ঘরে করা হয়েছে, তোমার জন্যেও তুলে রেখেছি।” বিজয় বেতের চেয়ারটায় বসিয়া বলিল, “কে আবার ভদ্রলোক এল এখানে ? তাই বুঝি আমার ঘর চড়াও করেছিলে ?” মায়া বলিল, “এ যে বাবার ম্যানেজার শিবচরণবাবু আর র্তার ছেলে । ওদেরই সঙ্গে পরশু আমি যাচ্ছি কি না, তাই আজ দেখা করতে এসেছিলেন।” বিজয় বলিল, “ও, এমন জিনিষটা মিস করলাম । নানা কারণেই দেবকুমার-চিজটিকে দেখবার আমার বডড ইচ্ছে ছিল ।” মায়ার গালের কাছট একটু লাল হইয়া উঠিল । সে বলিল, “কি কারণগুলি শুনি ?” বিজয় বলিল, “ত নাইবা শুনলে ? সব কথাই কি আর মেয়েদের সামনে বলা যায় ?” বিজয় একপালা বাদরামীর জোগাঁড় করিতেছে দেখিয়া মায়। তাড়াতাড়ি ঘর ছাড়িয়া চলিয়া গেল । জ্যাঠাইমার ঘরে আর তখনই যাইতে ইচ্ছা করিল না, সোজাসুজি ছাদের উপরে উঠিয়া গেল । দেবকুমার এবং মায়াকে লইয়া একটা গুজব কেবল মাত্র যে রেজুনেই ছড়াইয় ছিল,তাহা নহে। কলিকাতায়ও যে এক রকম একটা-কিছু কানাযুষ পরিচিত মহলে কিছু দিন হইতে চলিতেছে, তাহ মায়া ক্রমেই টের পাইতেছিল। অথচ এত দিন পর্য্যস্ত তাহার। দুজন দুজনকে চাক্ষুষ দেখে নাই পৰ্য্যন্ত । কিন্তু বাঙালী সমাজে তাহাতে কিছু আসিয়া যায় না । গুজব রটন স্বচ্ছন্দেই চলে। আজ তাহার সহিত দেবকুমারের দেখা হইয়াছে বটে, কিন্তু এমন ভাবে দেখা ন হইলেই যেন ছিল ভাল । দেবকুমারের কথা সে আগে অনেক শুনিয়াছে, নিজের পিতার কাছে, শিবচরণবাবুর কাছে, বাণী ও তাহার মায়ের কাছে। সে যে কত স্থলী, কত বুদ্ধিমান এবং কত খানি উগ্র রকম নবীনপন্থী তাহ শুনিতে শুনিতে মায়ার দুই কান বোঝাই হইয়া গিয়াছে। দেবকুমারকে দেখিবার এবং তাহার সঙ্গে আলাপ করিবার কৌতুহল চিরদিনই তাহার ছিল ; দেবকুমারের চিত্তের উপর নিজের কিছু একটু প্রভাব বিস্তার করিবার ইচ্ছাও যে আপনার অজ্ঞাতসারে তাহার মনে ছিল না, তাহাই বা কে বলিতে