পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] ফুল দিয়ে সাজা, বাইবেল পড়ে—পরে চোথ মুছতে মুছতে চলে যায়। একদিন মহিলাটির সঙ্গে যেচে আলাপ করে জানলাম, ওখানে তার একমাত্র সস্তানকে গোর দেওয়া হয়েছে । শান্তির সমাধি-ফলকে বসে এক একসময় অন্যমনস্ক হয়ে পড়ি, তখন এত বড় বিশ্বের অfর কারুর কথাই মনে আসে না,—একমাত্র তোমার কথা সময় সময় মনে পড়ে। এখনও প্রতিষ্ঠা ও ধনসম্পদ কামনা করি – কেন-না দরিদ্র বলেই না শাস্তি আমীয় অত সহজে ছেড়ে ধেতে পারল,—আমি ত বেশ জানি যে চিকিৎসার কোনে ভাল ব্যবস্থাই করতে পারিনি । শান্তির সমাধিস্থান ছেড়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবারেই নিজের মনে একট পরম সাস্তুনা পাই—মনে হয়, তাকে আমি আমীর-জগতে হারিয়েছি বটে, কিন্তু তাকে বৃহত্তর জগতে বিরাটরূপে লাভ করেছি । শান্তি আমার ছিল, শান্তি আমার অাছে। দেখছ আমার কা গুজ্ঞান ! তুমি পথশ্রমে না জানি কত ক্লাস্ত হয়েই এসেছ, অথচ সেদিকে আমার খেয়ালই নেই, নিজের দুঃখের কথাই বলে যাচ্ছি। মাফ করে ভাই । চল, ঘরে গিয়ে বসি । বস্বে না ?--বেশ, এখানে তাহ’লে এই ঘাসের উপর বসি । তারপর কি বলছিলাম, হঁ্যা। যতক্ষণ হাসপাতালে থাকি-নিজেকে বেশ ভুলে থাকি, কিন্তু বাইরে বেরিয়ে এলেই নিজের ব্যর্থ জীবনের সে মৰ্ম্মম্ভদ করুণতা আমায় আত্মহারা করে তোলে। এতদিন পর তোমায় পেয়েছি, জীবনের সব কথা ব’লে দুঃখের ভার কিঞ্চিৎ লাঘব করে নিই। তোমায় বলতে কি ভাই, স্ত্রীকে আমি সইতে পারি নে, অথচ ছাড়বারও জো নেই। না, দোহাই তোমার হেসে না শুনে ! আমার ন্যায় হর্ভাগার এই করুণ কাহিনী শুনে যার প্রাণে হাসি আসে তার মত পাপিষ্ঠ আর নেই। এ যে আমার কি পরম ব্যথা তা বলতে পারি নে, যাকে নিজের গৃহলক্ষ্মীর আসনে প্রতিষ্ঠা করেছি, তাকেও আপনার করে পেলাম না। ভয়ের আমার সীমা নেই, পাছে আমার কোনো আচরণে সে মৰ্ম্মাহত হয়, পাছে সে মনে করে, তাকে নাস্তিক &89 আমি প্রতারিত করেছি, সেই ভয়েই সৰ্ব্বদা তটস্থ থাকি । বিলাসের উপকরণেরও কিছুমাত্র অভাব নেই তার,আবারও তার অফুরন্ত ; এটা চাই, ওটা চাই—প্রতিদিনই দাবীর মাত্র অব্যাহত বেড়ে চলে। গহনা, গ্রামোফোন, শাড়ী, জামা, সাবান এসেন্স—নিত্য নতুন সব তার চাই। আব্দার পূরণে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ নেই, এ যেন তার পাওন। অর্থাভাবে তার দাবী পূরণে এতটুকু ক্রটি হ’লে অনর্থপাত অপরিহার্য্য । আমি বঁচি কি মরি, অামার কাজ হোক, কি না হোক, তা আর দেখবার প্রয়োজন নেই, ইচ্ছাও নেই, তার দাবী পূর্ণ হলেই হ’ল । যাকু-গে এ সব কথা। কই তোমার শরীরটাও ত তেমন ভাল দেখছি নে—তবে কি জগতে আমার মত সকলকারই দুঃখ-কষ্ট আছে! • ?. -- * ই, কি বলছিলে ?—শশাঙ্ক কোথায় আছে ?— সে যেখানে আছে, সেখানকার খবর কেউ জানে না, অজি পৰ্য্যস্ত কেউ জানতে পারে নি। তুমি জান তার সেই নিৰ্ব্বোধের মত চেহারাটা দেখলেই ছেলেবেলায় আমার হাসি পেত। তার বুদ্ধি কম ছিল বটে কিন্তু তার প্রাণ ছিল । ধৌবনের স্বরুতেই সংসারের জন্যে কি অসাধারণ খাটুনিই না সে খাটত । তার সেই রোগ ঢ্যাঙ চেহারা কাঠির মত হাত-পাগুলি, কোটরগত চোখদুটি, মুখখন সৰ্ব্বক্ষণ বিষাদাচ্ছন্ন—এখনও যেন চোখের উপর ভাসে । আমি তখন সবে এখানে ডাক্তার হয়ে এসেছি । একদিন তার বৃদ্ধ বাপ কেঁদে এসে আমায় বললেন, বাবা, আমার শশাঙ্ককে একবার দেখবে এস, তাকে বুঝি আর বঁাচাতে পারলাম না । শশাঙ্কের বাবার কথা তোমার অবশ্যই মনে আছে, সেই সহৃদয় অতিদরিদ্র বুদ্ধ এখানকার স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, অথচ তিনি যে কোনদিন লেখাপড় কিছু শিখেছিলেন তা কিন্তু তাকে দেখলে বা তার সঙ্গে কথাবাৰ্ত্তা কইলে কখনই মনে হত না । আমি গিয়ে দেখি শশাঙ্ক একেই ত রোগ। মানুষ, তার উপর রোগে ভুগে ভুগে তার দেহে মাংসের কণামাত্রও ছিল না। একখানা ক্যাওড়া কাঠের তক্তপোষে মলিন