পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] শশাঙ্কের বুড়ি পিসিম যেন বদ্ধ ঘরের ফণক দিয়ে বার বার উকি মারছেন। তার সে অগ্নিদৃষ্টি আমায় বার বার পুড়িয়ে দিতে লাগল। তারপর থেকে যতদিন তার এখানে ছিলেন আর কোনে দিন তার মুখের দিকে তাকাতে পারি নি । কিন্তু এসব করুণ কাহিনী ব’লে তোমায় দুঃখ দিচ্ছি মাত্র। আর এসব নয় । দু’একট। মজার কথা বলি । বলব না ? –বেশ, যা বল। সত্যি বলতে কি, দুঃখের কাহিনী ছাড়া বলবার মত আমার জীবনে কিই-বা আছে । জীবনটাই আমার একট। বিরাট দুঃখের মঙ্গ প্ররিত । গুই শোন, গ্রামোফোন চলছে । কোনো দুঃখ নেই, কষ্ট নেই, ভাবনা-চিন্তা নেই, বেশ আছেন। গ্রামেফোন আমি কিন্তু দু' চক্ষে ও দেখতে পারি নে, গ্রামেফোনের স্বর আমায় জাগ্রত রাখে, উত্যক্ত করে, কিন্তু গৃহিণী-দিনরাত লোকজন নিয়ে গ্রামোফোন বাজান । আমি কৰ্ম্মক্লাস্ত হয়ে ঘরে ফিরে শোবার ঘরে বসে একদৃষ্টিতে শাস্তির ছবিখনোর দিকে চেয়ে থাকি ! পাড়ার যত মেয়ে এসে গৃহিণীর সঙ্গে বসে জটলা করে, আমার অস্তিত্ব তাদের মনে কোনো উদ্বেগই এনে দেয় না। ওই যে লোকটিকে দেখছ, ও তার কেমন সম্পর্কে দাদা নাকি । এ লোকটির আনাগোন সম্প্রতি বড়ই হামেশা হয়ে দাড়িয়েছে । সময় সময় ঘর ছেড়ে এই গাছটার নীচে এসে বসে থাকি। কতদিন যে এমনি নিঃসঙ্গ প্রবাস-জীবন যাপন করতে হবে কে জানে । শান্তি তাকে একদিনও ত মা বলে ডেকেছে, এই জন্যেই তাকে কিছু বলতে পারি নে হয় ত, কিন্তু তোমায় ব’লে রাখছি বিনোদ, যদি কোনদিন এখানে কাউকে খুন কর। হয়েছে বলে শোন, আর সে খুনের সঙ্গে তোমার ডাক্তারবন্ধুর নাম সংশ্লিষ্ট থাকে, তাহ’লে বিস্মিত হয়ে না, কেন-না বিস্মিত হবার তাতে কিছু নেই। তুমি ভাবছ হয় ত, যে-লোক একটা পিপড়েকে ' মারতে ইতস্তত করে, সে কেমন করে একট। মাহুষ খুন করবে, কেমন, তাই না ? কিন্তু ভাই, আমি একেবারে বদলে গেছি—প্রতিদিনই বদলাচ্ছি। এক এক সময় হাস Neసె --సె নাস্তিক ©8☾ পাতালের রূপোর মত চকুচকে অস্ত্রগুলির দিকে নিপলক দৃষ্টিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকি। এক একসময় হাসপাতাল থেকে বাড়ী আসবার জন্যে রাস্তায় বেরিয়ে এসেও ফের অজানার আকর্ষণে হাসপাতালে ফিরে যাঈ এবং যে-ঘরে অস্ত্রগুলি থাকে সে ঘরের আলোট। জেলে অস্ত্রগুলির দিকে তাকিয়ে থাকি । অনেকক্ষণ সেখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কত-কি ভাবি । আমার কল্পনায় অস্ত্রগুলি যেন জীবস্ত হয়ে ওঠে । তারা যেন দন্ত ভরে আমায় ডাকে। আমি চোরের মত চুপি চুপি আলমারী খুলে অস্ত্রগুলি নাড়াচাড়। করি । অষ্টুভব করি, একদিন আমায় খুনে হতেই হবে হয় ত - - , কে ডাকছে না আমায় ?--সম্ভবত পুহিণী , দেখি, কি হুকুম হয় । তুমি একটু বস ভাই, আমি এখুনি আসছি ।-- বেশী দেরী হয় নি। গৃহিণীর সেই ভাই এসেছেন, তাকে খাওয়ান হবে —টীক চাই । দিয়ে এলাম । কি বিনোদ, চোথ রাঙাচ্ছ যে ! জানি তার হুকুম মেনে চলতে গিয়ে ভিক্ষুকেরও অপম হয়ে গেছি। আমার যেন অস্তিত্বই নেই। তাও বলি, রাগ করেই ব! কি করব, কাকে তাড়াব ? তাতে ত নিজেরই কলঙ্ক—লোকে হসেবে । তুমি কি এখনই যেতে চাও নাকি ? বেশ, যাবে যাওঁ । মধ্যে মধ্যে খোজ নিয়ে । এই ত ছোট নদী, ওপারেক্ট ত তোমার কৰ্ম্মক্ষেত্র । কত দিন এসেছ বদলি হয়ে ? - পনর দিন ? —ত হবে । এতদিন কাছে ছিলে না, তাই নিজেকে বড় একাকীই মনে হয়েছে। এখন মধ্যে মধ্যে তোমায় কাছে পেলে তবু মনে একটু সময়ের জন্যে ৪ হয় ত শান্তি পাব । আজ যখন চলে যাবে, আমি তখন এখানে একাকী বসে বসে জীবনের পাতা উলটিয়ে যাব—কত লোক এসেছে, কত লোক চলে গেছে—কত স্মৃতি বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গেছে । ঘরের আলে| তখন আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকবে—চোখ মুছে ধীরে ধীরে ঘরে ফিরব ।