পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QQやり প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ১ম খণ্ড এ সংসারের মজা এই যে, বিপদের পিছনে পিছনে তার সমাধানও আসতে থাকে। সে এক অভাবনীয় ব্যাপার। দুশ্চিন্তায় অম্বু ডাক্তারের মন যখন প্রায় বিবশ তখন একখানি চিঠি পেলেন তিনি। চিঠিখানি র্তার এক দূরসম্পর্কের শাল লিখেছিলেন । স্বস্ব ডাক্তারের পঠদ্দশায় এর সঙ্গে ভাল পরিচয়ই ছিল। নামটি তার মনোমোহন । মনোমোহনের হয়েছিল কঠিন অসুখ । তাই চাকুরি করা সম্ভব নয়, চিকিৎস হওয়াও শক্ত। অম্বু ডাক্তার কিছু সাহায্য করেন । চিঠির উত্তরে অন্ধু ডাক্তার তাকে অবিলম্বে আসতে লিখে টাকা পাঠিয়ে দিলেন । আসার কিছুদিন পরেই মনোমোহন মারা গেলেন। তিনি সপরিবারে এসেছিলেন ; স্ত্রী এবং একটি মাস-ছয়েকের ছেলে । স্ত্রী বিমলা এমনি করে এসে অম্বু ডাক্তারের আশ্রয় পেলেন। তিনিই মোহিতকে মামু্য করতে লাগলেন। মায়ের অভাবে মোহিতের মাতৃদুগ্ধ জুটল। স্ত্রীর অভাবে অস্ব ডাক্তারের সংসারে গৃহিণী এলেন । হরণ-পূরণের মালিকের এ কি অপূৰ্ব্ব ব্যবস্থা ! কিন্তু আত্মীয় প্রতিবেশীর সঙ্গে এই নিয়ে লেগে গেল (5f II সত্যের সরল সংকীর্ণ পথে চলা শক্ত বটে। কিন্তু তাই তার কেবল মাত্র বাধা নয়। বাধা বৃহত্তর করে রেখেছে, চতুদিকের মানুষের অযথা নিষ্ঠুরতা, অকারণ কপটতা, আর হিংস্র পর শ্রীকাতরতা । তবুও অস্তু ডাক্তারের ছিল টাকা, ছিল ডাক্তারির কাজে গভীর পারদর্শিতা। তাই তিনি সংসারের চাপে মারা ন পড়ে, পিছলে বেরিয়ে গেলেন সেই চক্র থেকে । বিমলাকে নিয়ে নিজের পৈতৃক সম্পত্তির খুদ-কুঁড়োটি পৰ্য্যন্ত বিক্রি ক’রে দিয়ে অম্বু ডাক্তার বেরিয়ে দাড়ালেন সংসারের অনস্ত পথে । একদিন এসে বিশ্বেশ্বরের চরণের তলায় আশ্রয় পেয়েছিলেন । এই তার কাশী আসার ইতিহাস । বিমলা বিধবা হয়ে অন্যের ঘরে বাস করতে বাধ্য হলেন। আর মোহিতকে বাচাবার জন্ত অম্বু ডাক্তারের বিমলাকে ঘরে স্থান দেওয়া ছাড়া গতি ছিল না। এই সম্বন্ধের মধ্যে যারা কালসৰ্প দেখে শিউরে উঠল, তাদের তুষ্ট করলে দুদিকের ক্ষতি। বহু তর্ক-বিতর্ক করে শেষে একদিন অন্ধু ডাক্তার বিমলাকে ডাকলেন। তিনি বিমলাকে বললেন, বিমলা, তুমি ঘরে থাক, বাইরের খবর জানার স্থবিধা হয় না। কিন্তু তোমার আমার ঘরে বাস করা নিয়ে হয়ত অনেক লাঞ্ছনী, গঞ্ছনী সইতে হবে ; হয়ত এমন একদিন আসবে তোমার ছেলে আমার ছেলেরাও সেদিন এটিকে ভাল চোখে দেগে উঠতে পারবে না। ভবিষ্যং কৰ্ত্তব্য অকৰ্ত্তব্য সম্বন্ধে ভেবে চিন্তে তোমার সঙ্গে পরামর্শ করে স্থির করতে চাই, তাই তোমাকে ডেকেছি— বিমলা কেঁদে অম্বু ডাক্তারের পায়ে পড়ে বললে,— পৃথিবীতে আর আমার আপনার বলার কেউ নেই ; যদি আপনি আমায় আশ্রয় না দেন ত কেমন ক’রে আমার ছেলেটি পঁাচ বে ? o অনেক ভেবে অস্ব ডাক্তার বললেন,–কিন্তু বিমলা এই জন্যে অনেক নিন্দ প্লানি আমাদের দুজনকেই হয়ত সইতে হবে, তার জন্য কি তুমি প্রস্তুত ? বিমলা ছিল তীক্ষুবুদ্ধিশালিনী, সে আর কান্নাকাটি ন৷ ক'রে বললে,—ছেলের প্রাণ বড়, না আমার নাম বড় ? ঈশ্বর রইলেন সামনে, আমি কোনো নিন্দ গঞ্ছনাকে ভয় করব না । তার কয়েকদিন পরেই নিজের বিষয়সম্পত্তি বেচে দিয়ে—শ্রীরামপুর থেকে রাজপুতানায় একটা চাকরি নিয়ে তিনি চলে যান। অবশেষে ঘুরতে ঘুরতে শেষজীবনে এলেন কাশীতে । Vo তখন ললিত, মোহিত আর বক্ষু বেশ বড় হয়েছে। অম্বু ডাক্তার কাশীতে এসে বাঙ্গালী পল্লীতে রইলেন না। অল্প বাড়ীভাড়া দিয়ে, বিদেশীদের সঙ্গে বনিয়ে চলাই তিনি সহজ এবং বুদ্ধির কাজ মনে করতেন। তাই করে