পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QQbア প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড এসো গে না । একচোকো , ললিত, ললিত ! ললিত বিলেত থেকে এসে ওর ছাতা দিয়ে মাথা রাখবে..••• আর আমি এলুম ভেসে... বিমলা কাদতে কঁদিতে অন্য ঘরে চলে গেলেন । একথা অম্বু ডাক্তারের কানে উঠলে কি হ’ত বলা শক্ত , কিন্তু বিমল প্রাণপণে মোহিতের সকল দোষ র্তার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতেন। একটি ছোট ওষুধের দোকান খোলা হ’ল বটে ; কিন্তু সে মোহিতের নামে নয়, বঙ্কুর । বিমলার শত আপত্তি অম্বু ডাক্তার শুনলেন না, বললেন, বস্তু শাস্তশিষ্ট ছেলেটি, ওর ধীর বুদ্ধি, ও পারবে কম্পাউণ্ডারি করতে, দোকান চালাতে। মোহিতের ও কৰ্ম্ম নয়। . মোহিত খুব ভাল ক’রেই জানত যে বিমলার কোনো পরামর্শই ছিল ন। এতে। তবুও সে রাগে অধীর হয়ে এসে বললে, কি ? নিজের ছেলের জন্যে ডিসপেনসারি খুলিয়েচ ত–মালিনী মাসী । বিমলার দু'চোখ জলে ভরে গেল । — ছিঃ বাবা মোহিত, আমার সঙ্গে কি আমন ক’রে কথা কইতে আছে ? তোর সঙ্গে বঙ্গর তুলনা হয়, বন্ধু তোর পায়ের কড়ে আঙ্গুলেরও সমান নয়। আমার দুধ খেয়ে যে মাস্থ্য তুই বাবা, আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করতে হয় না । মোহিত বলসে, ও সবে মোহিত ভোলে না, বলে দিচ্চি। আমার এথ খুনি দশ টাকার দরকার, দিতে যদি পারত— ভাল। নইলে আজ রাতে বন্ধুকে মেরে তার সিন্দুক ভেঙে—মোহিত লম্বা দেবে। বাক্স-পেটরা খুজে পেতে বিমলা দশটি টাকা বার ক’রে দিলেন । - কিন্তু একথা অম্বু ডাক্তারকে বলা তার সাধ্যে হ’ল না। রঙ্গিণী রাগে ফুসতে লাগল। § মোহিতের নজর রঙ্গিণীর উপরেও ছিল । যে অন্যায় করে সে জানে যে, অসত্য আচরণ অন্যায় ; সে জানে, গুরুজনকে অপমান ক’রে কটুবাক্য বলাও অন্যায়। হয়ত কোন সময়ে এই সবের জন্য মোহিতের মনে অমুতাপও দেখা দিত। কিন্তু সে একটা সাময়িক ব্যাপারমাত্র। তালপাতায় আগুন যেমন দপ, ক’রে জলে, মোহিতের মনেও রাগ, লোভ, লালসা তেমনি সহসা জলে উঠলে, তাকে সংযত করার শক্তি তার ছিল না । ভালবাসা দিয়ে রঙ্গিণীর মন জয় করার কাজ বহু ধৈয্য, বহু সংযমের কথা । সে পথে মোহিত যায় নি মোহিত সরল মেয়েটিকে ভুলিয়ে পথে বার করবার মতলব মনে মনে আঁটছিল । কিন্তু তাতে টাকার দরকার। সেই টাকা তার হাতে না আসাতেই তার মারমূৰ্ত্তি প্রকাশ পেত । কিন্তু সে সুযোগ একদিন মোহিতের কপালগুণে ঘটে গেল । সেদিন বিমলা গিয়েছিলেন এক জমিদারের বাড়ীতে তাদের মেয়েদের সেলাই শেখাতে। অন্ধু ডাক্তার গিয়েছিলেন একটা দূরের ‘কলে । তাড়াতাড়িতে লোহার সিন্দুকের চাবিট। টেবিলের উপর পড়েছিল। মোহিত কি করতে বাড়ী এসে এই স্ববৰ্ণ হযোগটিকে বৃথা বয়ে যেতে দিলে না। সিন্দুকে যা ছিল সব আত্মসাৎ ক’রে এসে রঙ্গিণীকে বললে, দেখ, আজ আমি সার্কাস দেখতে যাচ্চি, চারটে থেকে ছটার মধ্যে, তুই যাবি দেখতে ? প্রকাণ্ড দুটা সিঙ্গী এনেছে—তাদের ভীষণ লড়াই হবে। ওদিক দিয়ে মাসীকে ওরা নিয়ে যাবে, তুই যাবি ? রঙ্গিণীর দোষ ছিল যে, সে সব তাতেই নেচে উঠত। আর পৃথিবীতে কোনো মানুষকেই অবিশ্বাস করত না । সে রাজি হ’য়ে বেরিয়ে পড়ল। পথে যেতে যেতে মোহিত বললে,--বড় খিদে পাচ্চে, কি বলিস, কিছু খেয়ে নেওয়া যাক, এখনও অনেক দেরি। গাড়ি থেকে নেমে অনেক খাবার কিনে নিয়ে এসে রঙ্গিণীর হাতে দিয়ে বললে, খা, আর এই পান রাখ। রঙ্গিণী খেতে লাগ ল । সে খাবারে ছিল সিদ্ধি মেশান। কিছুক্ষণের মধ্যে রঙ্গিণীর বোধ-বিবেচনা চলে গেল। সে বললে,— মোহিত-দা, কত দূর যাব ?