পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪থ সংখ্যা ] অনেক দূর - রঙ্গিণী, সে অ-নে-ক দূর। বল ত কোথায় ? —জানি, ব’লে রঙ্গিণী হাসে । —বল না ? —ক’লকাতায় নিয়ে যাচ্চ আমাকে সার্কাস দেখাতে ? দুদিন পর্যন্ত রঙ্গিণীর ঠিক জ্ঞান হয় নি। জ্ঞান হ’য়ে সে দেখলে যে, খাচার পাখীর মত বন্দিনী হ’য়ে সে আছে । মোহিত যায় আসে, তাকে প্রবোধ দেয়, কিছু তোর ভয় নেই, তোকে আমি বিয়ে ক’রে বাড়ী ফিরিয়ে নিয়ে যাব । রগিণী কঁদে, বলে,—তোমাকে কেন বিয়ে করতে যাব আমি ? মোহিত নিষ্ঠুর হাসি হেসে বলে, তুই না করিস, তোর ঘাড় করবে। দেখবি শেষ পয্যন্ত । রাগ করতে করতে মোহিত চলে যায়। কল্পনায় কাজটা যত সহজ মনে হয়েছিল, বাস্তবিক কিন্তু তত সহজ হল না। একজন বুড়াও আস্ত মধ্যে মধ্যে রঙ্গিণীকে বোঝাতে । সে বলত কেন রাজি হচ্ছিস্ ন ম ? মোহিতবাবুর মত পত্তির কে কোথায় পায় ? হাতে অগাধ টাকা, তোকে রাজরাণী করে রাখবে। রঙ্গিণী কথার উত্তর দিত না, কেঁদে কেঁদে তার চোখ দুটো ভাটার মত হয়ে গিয়েছিল । একদিন মোহিত এল রাতে মুখ থেকে বিশ্ৰী একটা কিসের গন্ধ বেরুচ্ছে । চোখ দুটে লাল টকটকে । জিব যেন এড়িয়ে গেছে । এসে বললে, আজ একটা হেস্তনেস্ত করে ফিরব, নইলে এই দেখ,বলে সে একটা প্রকাণ্ড ছোরা বায় করে বললে, এই দিয়ে তোকে দুখানা করে কেটে তারপর ঝুলব গিয়ে ফাসি কাঠে। রঙ্গিণী ঠক ঠক ক’বে কেঁপে বললে, তোমার পায়ে পড়ি মোহিত দাদা । —দাদা ! নেকি, খবরদার দাদা-টাদ। নই তোর, বল আমার বিয়ে করবি কি না ! 命 রঙ্গিণী বললে—করব যদি তুমি কাশীতে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে ডাক্তারবাবুর মত করতে পার। মোহিত বললে, দেখ, এর নড়াচড় হবে না ? (t(సి تھا۔ امیہد —না | —তিন সত্যি কর । —তিন সত্যি করচি ! মোহিত সেইখানেই ঘুমিয়ে পড়ল। সে গভীর রাতেও খাচার দরজা গোল পেয়ে পার্থী উড়ল । রঙ্গিণীর ভয়-ডর কোথায় উড়ে গেল ! গোল। পথের মুক্ত বাতাসে এসে, তার জীবনের আশ হল । এ পৃথিবীতে সবাই মোহিতের মত দুৰ্ব্বত্ত নয়। সে প্রাণপণে এগিয়ে চলল, দূরে, দূরে, মোহিতের কাছ থেকে যত দূরে পালিয়ে যাওয়া যায় । সে রাতে ক’লকাতার পথে অfলে ঝলমল করে, লোক দুটে-একটা, হয় মাতাল, নয়ত ভারি মতন আর কেউ । মাতাল দেখে সে চিনতে পারলে, তাপ চলায়, পথের একদিক থেকে আর একদিকে চলেছে, টলতে টলতে । সে থমকে দাড়ায়, কাজ নেই ওর আগে গিয়ে । রঙ্গিণী অল্প কয়েকদিনের মধ্যে বুদ্ধিতে অনেকখানি অসম্ভব রকম বেড়ে উঠেছিল । হঠাৎ পিছনে একটা চীংকার শুনে সে চম্কে উঠল। একটা গলির আড়ালের মধ্যে লুকিয়ে পড়ে সে দেপতে লাগল, কার হটগোল ক’রে চলেছে। マ を二 কাছে এসে লোক গুলো আবার চেচালে, বল হরি, হরি বোল! সেই নিস্তব্ধ পথের দুদিকের বাড়ীর দরজা-জানলাগুলো যেন ঝনঝনিয়ে বেজে উঠল । একজন বললে,—ওরে দাড়া, কুঁধি বদল করি। আর একজন বললে, ভারি কঁাধটা ভেরে গেছে, একট রাখবে। সেইখানে খাট রেখে লোকগুলো বসে বিড়ি টানতে লাগল । রঙ্গিণী চুপ ক’রে দাড়িয়ে তাদের কথা শোনে । খানিক পরে দুজন স্ত্রীলোক গুম্রে গুম্রে কঁদিতে কাদতে এসে সেখানে পৌছল। একজন কাচে, আর একজন তার সঙ্গে কেঁদে কেঁদে বোঝাচ্চে, ছিমা, চুপ কর, এ সময় কাদতে নেই। মেয়েটি তবুও কঁাদে, বলে, ওগে, এমনি ক’রেই ত এবার থেকে কেঁদে কেঁদেই আমার দিন কাটবে, ওঁর সামনে কেঁদে নি, প্রাণ ভরে.