পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪থ সংখ্যা ] উপাধিধারী শিক্ষিত যুবকের ভাগ্যে ঘটে নাই । সম্প্রতি ইণ্ডিয়া অফিসের নূতন আবাস-গৃহ অলঙ্কত ও চিত্রিত করতে ভারত-সরকার নিজব্যয়ে উপযুক্ত পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করে পাঁচজন ভারতীয় শিল্পীকে বিলাতে পাঠিয়েছেন, তার মধ্যে চারজন বাঙ্গালী,–এবং বাংলার নবীন পদ্ধতির চিত্রকলার কুতী সাধক। এর কেহই ‘লিখিত পঠিত বিদ্যায় পারদশী নহেন, কিন্তু তুলি চালাতে বেশ ক্ষিপ্ৰহস্ত। বাঙ্গালীর কলমের খোচায় অনেক অসম্ভব জিনিষ সম্ভব হয়েছে, বাঙ্গালীর তুলির খোচায় নূতন কীৰ্ত্তি অসাধ্য সাধনে প্রবৃত্ত হয়ে ক্রমশঃ গৌরবের বস্তু হয়ে উঠেছে। বাংলা দেশে শিল্পসাধনার শিক্ষণকেন্দ্র দুই চারটি আছে । তাহার মধ্যে সৰ্ব্বাপেক্ষা প্রাচীন হ’ল সরকারী স্কুল অফ অট’ । বে-সরকারী যে কয়টি স্কুল অাছে তাহার মধ্যে প্রধান হ’ল বিশ্বভারতীর “কলাভবন ও কলিকাতার &libi oftoforo (Indian Society of Oriental Art) সংলগ্ন কলাশালা। এই কলাপরিষদের সাম্ববৎসরিক প্রদর্শনী কলিকাতার শিক্ষিত ও মনীষী সমাজে খুব খ্যাতি-প্রতিপত্তি লাভ করেছে। ভারতের নানা স্থান ও বিদেশ থেকে অনেক সমঝদার সমালোচকেরা এই প্রদর্শনী প্রতিবৎসর দেখতে আসেন ও প্রীতি ও শ্রদ্ধার মাল্য দিয়ে যান । কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, আচায্য অবনীন্দ্রনাথের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই পরিষদের একটি ছোট স্কুল ও বিস্তৃত সাজপাটের স্বন্দর কলাশাল আছে । এই স্কুলের প্রবেশিক ও শিক্ষার ব্যবস্থা প্রচলিত সরকারী স্কুল হতে অনেক স্বতন্ত্র। সাধারণ স্কুলের কড়া নিয়মের বাধা-ধরা এই শিল্পশালায় বর্জন করা হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষাণীদের মধ্যে একটা উচ্চ-মঞ্চের ব্যবধান এখানে খুজে পাওয়া যায় না। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে পাশাপাশি বসে ছবি অঁাকেন। ভারতের প্রাচীন শিল্পশালায় এই ব্যবস্থাই প্রচলিত ছিল। গুরু ও শিষ্যের মধ্যে খুব একট খনিষ্ঠ অতি-পরিচয়-লাভের স্ববিধা ও স্বঘোগ, এই শিক্ষারীতির প্রধান অঙ্গ ৷ গুরু বা শিক্ষকের শিক্ষাপদ্ধতি হ’ল, নিজে হাতেকলমে কি রীতি প্রণালীতে চিত্র করছেন, শিষ্যকে তাহার অমুশীলন করবার স্বযোগ দান । চিত্রশিল্পের চাক্ষুষ পরীক্ষা-ক্ষেত্রে (experiment) হাতেকলমে চিত্র-চর্চার ও পট-লিখনের দেখবার সুযোগে বেশ একটা "ছোয়াচ’, একটা মাদকতা আছে, - যা শিক্ষকের ‘কথার ব্যঞ্জনায় পাওয়া যায় না। চিত্র-বুদ্ধি ও কল্পনা শক্তির সহজ ফুরণ হয় চিত্র-চর্চার মধুর পরিবেশের মধ্য দিয়ে,–ছবি তৈয়ারীর প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ পর্বের মধ্য দিয়ে । এক প্রদীপ থেকে যেমন আর একটি প্রদীপ জলে উঠে, তেমনই সাধক-শিল্পীর সাধনার ঘনিষ্ঠ সঙ্গলাভে তার সাধনকালের উন্মীলিত ও উদ্বুদ্ধ সৌন্দৰ্য্যশক্তির প্রজ্জ্বলিত মানসিক স্পর্শ পেয়ে, শিক্ষার্থীর নিজের ভিতরের শক্তি ও সৌন্দর্য্য-বুদ্ধি আপনি ফুটে উঠে। এই বিকাশ, এই উন্মীলন,—কোন ও যাম্বিক বাচনিক, কৃত্রিম, শিক্ষা-প্রণালীদ্বারা সিদ্ধ হয় না। এই শিক্ষাপদ্ধতির ফলে দেখা গেছে, যে, দু-এক বৎসরের মধ্যে শিক্ষার্থীরা শিল্পতত্বের মূলসূত্রগুলি অনায়াসে আয়ত্ত করে আপনার পথ অতি সহজেই আপনি কেটে নিতে পারেন । এদের শিক্ষা খুব একটা কৃত্রিম, যান্ত্রিক, অভ্যাস-তালিকার (programme) তাড়নায় ঘটে না, শিল্পসাধনার চাক্ষুষ পৰ্য্যবেক্ষণ ও অনুশীলনের ফলে আপনি ফুটে উঠে । - এই পরিষদের স্কুলে কোনও পরীক্ষার বালাই নাই, কোনও সার্টিফিকেটের ছাড়-পত্ৰ নাই। কোনও শিক্ষার্থীর শিক্ষা-পৰ্ব্ব শেষ হয়েছে কি না সেটা আচাৰ্য্য বিচার করে বলে দেন। কোনও ছাত্র কর্তী হয়ে উঠেন দু-বং সরে, কারুর লাগে তিন, কারুর লাগে চার বৎসর। ইতিপূবেব_ কোনও ছাত্র আশাপ্রদ হাতের কাজ দেখাতে না পারলেই বিদ্যালয় থেকে আগেই অবসর নিতে হয় । সম্প্রতি এই বিদ্যালয়ে একটি নূতন মহিলা-বিভাগ খোলা হয়েছে। এর বেশ একটা সার্থকতা আছে বলে মনে হয় । বাংলা দেশের মহিলারা শুধু যে জ্ঞানের ক্ষেত্রে, সাহিত্যের ক্ষেত্রে, তাদের শক্তির প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন তা নয়, সম্প্রতি রাজনীতির কঠিন ও বিপদ সঙ্কুল পথে র্তারা স্বচ্ছন্দে বিচরণ করে অদ্ভূত সাহস, সহিষ্ণুতা ও শ্রমশীলতার পরিচয় দিয়েছেন।