পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q○○ সাহিত্য, দর্শন, মনোবিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব, ইতিহাস, জীবনচরিত প্রভৃতি সকল প্রকার গ্রন্থই আছে। কিন্তু মামাকে বলিতে শুনিয়াছি এত দার্শনিক গ্রন্থ ভারতবর্ষের আর কোনো এক লাইব্রেরীতে আছে কি না সন্দেহ উপন্যাসের বইগুলি তিনি হাজারিবাগ ইউনিয়ন ক্লাবে ও আমাদিগকে দিয়া গিয়াছেন। মামার বিদ্যার পরিমাণ করিতে যাওয়া আমার পুষ্টত । তিনি ইংরেজী, বাঙ্গালা, সংস্কৃত, পালি ও গ্রীক ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন । যখন দেখিলেন খৃষ্টধৰ্ম্ম আলোচনা করিতে গ্ৰীক ভাষার সাহায্য প্রয়োজন, তখনই বুদ্ধবয়সে ভগ্নশরীরে গ্রীক ভাষা অধ্যয়ন আরম্ভ করিলেন এবং কিয়ং পরিমাণে কৃতকায্যও হইলেন। খৃষ্টতত্ত্ব সম্বন্ধে অনেক অভিনব কথা তিনি শুনাইঃা গিয়াছেন। পালি ভাষা শিক্ষা করিয়া বৌদ্ধধৰ্ম্মের অমূল্য উপদেশ-সকল জগতকে দান করিলেন । শ্রদ্ধেয় রামানন্দবাবু ঠিকই লিখিয়াছেন—“দেশের কল্যাণ তিনি অধ্যাত্মিক রাজ্যে যাহা করিয়াছেন তাহ লোকের উপলব্ধি করিতে সময় লাগিবে ।” তাহার একটি কারণ এই বৌদ্ধ শাস্ত্র হইতে তিনি সংগ্ৰহ করিয়| দেখাইয়াছেন যে, বুদ্ধের নির্বাণ ও উপনিষদের ঋষিগণের ব্রহ্ম, এই দুইয়ের মধ্যে চল্লিশ পয়তাল্লিশটি স্বরূপের একতা রহিয়াছে। বুদ্ধদেবকে পাশ্চাত্য পণ্ডিতের একরূপ নাস্তিকই সাব্যস্ত করিয়া রাখিয়াছেন। র্তাহার এই আবিষ্কারে সে মত অনেক পরিমাণে পণ্ডিত হইয়াছে। বাইবেল সম্বন্ধেও তিনি অনেক নুতন কথা বলিয়াছেন। সংস্কৃত সাহিত্যে তাহার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল । তাহার রচিত ছন্দোগ্য ও বৃহদার্যণকের টীকা ও টিপ পনীতে পণ্ডিতেরাও মুগ্ধ হইয়াছেন। যাজ্ঞ্যবন্ধ প্রভৃতি ঋষির দার্শনিক মত অতি প্রাঞ্চল ভাষায় ব্যাখ্যা করিয়া গিয়াছেন । অল্প কিছুদিন পূৰ্ব্বেও তিনি ভগ্নদেহে রুগ্নাবস্থায় গীত-তত্ত্ব বিষয়ে যেসকল সন্দভ প্রকাশ করিয়াছেন, তাহ পণ্ডিতদিগের ও গবেষণার বিষয় । বৈদিক ভাষাতেও তাহার যথেষ্ট দখল ছিল। তাহার সমগ্র লেথাবলী সংগৃহীত হইলে বড় বড় গ্রন্থ হইবে । তিনি বিদ্যার্জন করিয়াছেন জ্ঞানলাভের জন্য । সকল জ্ঞানের শ্রেষ্ঠ জ্ঞান ব্রহ্মজ্ঞান তিনি লাভ করিয়াছিলেন এবং ব্রহ্মধ্যান-নিরত ব্রহ্মনিষ্ঠ গৃহস্থের প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩৭ জীবন যাপন করিয়া অস্তে ব্রহ্মে আত্মসমর্পণ করিয়া লোকাস্তরিত হইয়াছেন। ব্রহ্মসঙ্গীত শুনিতে শুনিতে তিনি ভাবে বিভোর হইতেন। প্রতিদিন সন্ধ্যাকালে তাহার শয্যাপাশ্বে বসিয়া দুইটি ব্রহ্মসঙ্গীত করিতাম । সঙ্গীত শুনিতে শুনিতে তিনি কোন রাজ্যে চলিয়া যাইতেন, সে রাজ্যের খবর আমার জানা নাই। সঙ্গীতাস্তে কোনো কোনো দিন তাহাকে যেন সংজ্ঞাশূন্ত অবস্থায় পড়িয়া থাকিতে দেখিয়াছি। এমন কি, কোনে। কোনো দিন ভয়ও পাইয়াছি । জ্ঞানের এরূপ একনিষ্ঠ সেবক সচরাচর মিলে না । তনি দারপরিগ্রহ করেন নাই । জীবনে যাহা কিছু উপজিন করিয়াছিলেন জ্ঞানার্জনে ব্যয় করিয়া গিয়াছেন । দারপরিগ্রহ করেন নাই বলিয়। যে তিনি পারিবারিক দায়িত্বভার গ্রহণ করেন নাই, তাহা নহে। এ বিষয়েও তাহার ত্যাগ অতুলনায় । যখন চল্লিশ টাকা মাত্র বেতন পাইতেন তখন ভাগিনেয়ীদিগকে কলিকাতায় বোর্ডিংয়ে রাগিয়া শিক্ষা দিয়াছেন, তখন তাহার প্রাতঃকালীন জলযোগ ছিল ভাত ও আলুসিদ্ধমাখা এক দল। । কিন্তু সেকথা তিনি আমাদিগকে জানিতে দেন নাই, পাছে আমর খরচ কমাইয় আপনাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যাঘাত করি। এক ভাগিনেয়কে কলিকাতায় রাখিয়া পড়াইতেন । যখন তাহার এম-এ পরীক্ষার জন্য টাকা পাঠাইলেন, তখন মামার সেভিংস্ ব্যাঙ্কের খাতায় গোটাকয়েক পয়সা মাত্র রহিল । সেদিনও এক ভাগিনেয়—যে তাহার অল্পমতি না লইয়াই বিদেশ চলিয়া গিয়াছে, তাহার দুরবস্থার কথা শুনিয়! অনেক টাকা পাঠাইলেন, যদিও সে র্তাহার কাছে টকা চাহিতে সাহস করে নাই । কোন প্রার্থী র্তাহার নিকট আসিয়া প্রত্যাখ্যাত হয় নাই । যদি কেহ ধার করিতে আসিত এবং বুঝিতেন যে তাহার ধার শোধ করিবার ক্ষমতা নাই, পুনরায় ফিরিয়া পাইবার আশা ত্যাগ করিয়াই তাহাকে টাকা দিতেন । তিনি নিজে কষ্টে পড়িয়া ও কখনও ঋণ করেন নাই । দোকানদারের টাক মাস পড়িবামাত্ৰ দিয়া আসিতেন। কোনো পাওনাদার টাকার তাগাদায় কখনও তাহার বাড়ী আসে নাই। সকল সংকায্যে তিনি মুক্তহস্ত ছিলেন ।