পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] বিবিধ প্রসঙ্গ—স্কুলকলেজের কতৃপক্ষগণ ও বর্তমান প্রচেষ্টা N9 సె করিবে, তাহাতে অভিভাবকদের মত থাকিলে কান কথা উঠিবে না ; কিন্তু অভিভাবকদের মত না থাকিলে দেশের কাজে নিযুক্ত কৰ্ম্মীদের ব্যয়নিৰ্ব্বাহ কে করিবে, জানিতে হইবে । এ কথা বিশেষ করিয়া কলিকাতার সেই সব ছাত্রদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাস্য যাহারণ মফঃস্বল হইতে আসিয়াছে। পড়াশুনা বন্ধ করিলে অনেক পিতামাতা তাহীদের কলিকাতার খরচ ন দিতে পারেন । পিতামাতার অমতে দেশের কাজের জন্য তাহারা কলিকাতায় থাকিলে দুটি প্রশ্ন উঠে । কে তাহীদের খরচ জোগাইবে ? পিতামাতার অবাধ্য হওয়া কি উচিত ? যদি কোন ব্যক্তি, ব্যক্তিসমষ্টি, বা সমিতি টাকা দেন, তাহা হইলে প্রথম প্রশ্নের উত্তর হইয় গেল । দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর সাধারণ ভাবে দিতে গেলে বলিতে হয়, সাধারণতঃ পিতামাতার অবাধ্য হওয়া উচিত নয়। কিন্তু স্থলবিশেষে অবস্থাবিশেষে নিজের বা দেশের শ্রেয়োলাভের জন্য গুরুজনের অমতেও কাজ করা কৰ্ত্তব্য হইতে পারে। অবগু, সেস্থলে কৰ্ম্মীকে গুরুজনের নিকট হইতে সাহায্য পাইবার আশ ছাড়িতে হইবে । এইরূপ যুক্তি শুনিয়াছি, পিকেটিঙের উদ্দেশু, শিক্ষণ বন্ধ হইলে অনেক ছাত্র মফঃস্বলের গ্রামে নগরে চলিয়৷ যাইবে ও সেখানে দেশের কাজ করিবে । কিন্তু কয়জন করিবে ? R যাহার দেশের কাজ করিবে, তাহারা যদি স্বেচ্ছায় করে, কিম্বা যুক্তিতর্কের ফলে দেশের কল্যাণার্থ অবলম্বিত কোন পস্থায় বিশ্বাসবান হইয়া করে, তাহ হইলে ভাল । নেতৃত্বের কথাও বিশেষ করিয়া ভাবিতে হইবে । যুবা বয়সে নেতৃত্বের শক্তি চরিত্রের দৃঢ়তা কাহারও জন্মে ন, এমন নয়। কিন্তু সাধারণতঃ নেতা হইবার যোগ্যতা বকশিত হয় অভিজ্ঞতা হইতে এবং তাহা একটু বয়স ন হইলে হয় ন| বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শ্রেণীর ছাত্রদেরও বয়স সাধারণতঃ তত নয়। মহাত্মা গান্ধীর তি নেতার পরিচালনায় সকল বিষয়ে সংযত, শুচি ও নয়মাহূবত্তী হইয়া দেশের কাজ করা স্থমহং শিক্ষা— হি৷ স্কুলকলেজে হয় না। কিন্তু গান্ধী ত দেশে একটি ; এবং তাহার সমতুল্য না হইলেও তাহার সদৃশ বহু নেতা iারাগারে। ছাত্রদিগকে চালাইবে কে ? আমর বশেষ করিয়া কলিকাতার কথাই বলিতেছি । কেহ কেহ প্রশ্ন করিয়াছেন, অনেক শিক্ষিত অৰ্দ্ধশক্ষিত লোক ত বেকার বসিয়া আছে ; তাহাদিগকে দশের কাজে লাগাইবার চেষ্টা না করিয়া ছাত্রদিগকে ইয়াই কেন টানাটানি করা হইতেছে ? বেকার লোকদিগকে দেশের কাজে লাগাইবার চেষ্টা হইতেছে কিনা, এবং অন্ততঃ সেরূপ কতক লোকও দেশের কাজ করিতেছেন কিনা, বলিতে পারি না -- কারণ, কোন প্রচেষ্টার সহিত আমাদের যোগ নাই। হয়ত এরূপ কতকগুলি শিক্ষিত লোক দেশসেব ক হইয়াছেন। ছাত্রদের উপর বেশী করিয়া টান পড়িবার ও দাবী হইবার কারণটি ভুলিলে চলিবে ন । , যাহাদের শিক্ষা বা অৰ্দ্ধশিক্ষা সমাপ্ত হুইয়া গিয়াছে এবং যাহাদিগকে সংসারের ভার লইতে এবং পোষ্য পোষণের চিস্তা করিতে হইতেছে, তাহাদিগকে নানা ধান্দায় ফিরিতে হয়। সেই কারণে দেশসেবার চিস্তা তাহারা করিতে পারে না, অবসরও পায় না। যদি বলেন, যত দিন কোন কাজকৰ্ম্ম না জুটিতেছে, বৃত্তি নিৰ্ব্বাচন ন হইতেছে, ততদিন । তাহারা দেশসেবক হউন না ? তাহার উত্তর এই, যে, তাহাতে কাজকর্মের চেষ্টা করা চলে না ; এবং আজকাল দেশের কাজে কেহ একবার নামিলে তাহার সরকারী কাজ পাওয়া দুর্ঘট হয়, সওদাগরী আপিসে ঢোকাও শক্ত হয়, এবং পুলিসের খাতায় নাম উঠায় স্বাধীন দোকানদারী আদিতেও ব্যাঘাত ঘটে । এইরূপ নানা কারণে, এখন আমাদের দেশে—এবং বোধ হয় স্বাধীনতালিপ্ত সব দেশেই— যৌবনের আদর্শপরায়ণতা, অভয়, দুঃখসহনক্ষমতা, উৎসাহ, শক্তি, সাংসারিক ক্ষতি লাভ গণনায় অনাসক্তি ও অনভ্যাস এবং সংসারভারবিমুক্ততা ছাত্রছাত্রীদের যে-পরিমাণে আছে, অন্য কোন শ্রেণীর লোকের সে পরিমাণে নাই । এই কারণে শৃঙ্খলিত বিপন্ন দেশের প্রকৃত উদ্ধারার্থী নেতাদের এবং ব্যক্তিগত প্রাধান্তলোভী ব্যক্তিদের দৃষ্টি বেশী করিয়া ছাত্রদের উপর পড়ে। প্রকৃত দেশহিতকামী ব্যক্তিদের প্রভাব যে-সকল ছাত্রের উপর পড়িবে, তাহাদের কল্যাণ হইবে। র্তাহারা নিজে অগ্রণী হইয়। বলিবেন, “এসো” । অন্যেরা আরামে ঘরে থাকিয়া বিপৎসস্কুল কৰ্ম্মক্ষেত্রের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া বলিবে, “যাও”। স্কুলকলেজের কর্তৃপক্ষগণ ও বর্তমান প্রচেষ্টা যে-সব স্কুলকলেজের কতৃপক্ষ শিক্ষালয় বন্ধ করাইবার চেষ্টার বিরোধী—বিরোধী তাহারা সবাই—র্তাহারা বলেন, লেখাপড়া বন্ধ করিলে ছাত্রছাত্রীদের মহা অনিষ্ট হইবে, শিক্ষালয়গুলি উঠিয়া যাইবে, তাহাতে দেশের প্রভূত ক্ষতি হইবে, ইত্যাদি । আমরাও বিশ্বাস করি, দেশের সকল অবস্থাতেই শিক্ষালয়ের প্রয়োজন । কিন্তু স্কুলকলেজের কৰ্ত্তারা একটু চিন্তা করিবেন, তাহার কিরূপ শিক্ষা দেন, এবং ছাত্রদের ও দেশের ভবিষ্যতের