৫ম সংখ্যা ] প্রয়াগের চিঠি ձ*« III “মা গো ! এত বড় মেয়ে ঘরে রেখেছে কেমন করে ! এই ত আমার মিনি, চোদয় পড়তে-না-পড়তে তার বিয়ে হয়ে গেল । তাতেই লোকে কত কি যে বললে । হাতী মেয়ে, ধিঙ্গি মেয়ে, অত বড় মেয়ে ঘরে রেখে অন্নজল মুখে রোচে কি করে ?—শুনতে শুনতে আমার কান দুটো একেবারে ভোতা হয়ে গেল।” বলিয়া মুহূৰ্ত্তকাল কি ভাবিয়া হঠাৎ স্বরবালা বলিয়া উঠিল, “ষোল বচ্ছর বয়েস ! না, ও মেয়ের সঙ্গে আমি ছেলের বিয়ে দেব না।” কৃষ্ণবিহারী স্বরবালার মুখের কাছে ডান হাতটা নাড়িয়া মৃদুস্বরে বলিলেন, “তুমি বোঝ না । মেয়ের বয়স হয়েছে, তাতে আমাদের সুবিধে বই অসুবিধে নেই। এখন মেয়ের বাবাকে যে দিকে ঘোরাব, সেইদিকে ঘুরবে,—যা চাইব, তাই দেবে। পাওনাটা বেশ মোটামুটি রকমই আদায় করতে পার। যাবে।” স্বরবালা মৃদু হাসিয়া বলিলেন, “তা যদি হয়, সে ত বেশ ভাল কথা । এই দেথ না কেন, আমার ঐটুকু ত মেয়ে, তার বিয়েতে কত টাকাই যে খরচ করতে হয়েছে। বাবা ! রবি সেনের ঘরের সে দেন। আজও শোধ হয়নি । মেয়ের বিয়ের স্বদে আসলে আদায় করা চাই কিন্তু । ষ্ট্য। আমাদের বুঝি কেউ ছেড়ে কথা কয়েছে তখন ?” Sు রামলোচন রায়ের সাংসারিক অবস্থা দিন দিন হীন হইয় পড়িতেছিল । আয় হইল অল্প, অথচ ব্যয়ের মাত্র বাড়িয়া উঠিল –ইহাতে যে রাজার ভাণ্ডারও শূন্ত না হইয়া যায় না। কিন্তু সম্লান্ত বংশের সন্তান বলিয়া গ্রামের মধ্যে র্তাহীদের যথেষ্ট খাতির মর্য্যাদা ছিল । এজন্য রামলোচন মনে মনে বেশ গৰ্ব্ব অনুভব করিতেন । পূৰ্ব্বে রায়-পরিবারের অবস্থা সচ্ছল ছিল । গ্রামের মধ্যে র্তাহীদের জমিজমা, বিষয়-সম্পত্তি বেশ ভাল মতই ছিল। কিন্তু ক্রমে বংশবৃদ্ধি হওয়ায় সম্পত্তি কতকগুলি ংশে বিভক্ত হইয়া ছিন্ন ভিন্ন হইয়া যায়। উত্তরাধিকার- . সূত্রে রামলোচন যাহা পান, তাহাতেই তাহার ক্ষুদ্র পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদন চলিয়া আসিতেছিল। সঞ্চয় না হইলেও তাহার সংসারে কোনো অভাব ছিল না। কিন্তু a-سی-by o একটির পর একটি কন্যাদায় উপস্থিত হইয়া রামলোচনকে বিব্রত করিয়া তুলিল। প্রথম কন্যা স্বৰ্যমুখীর বিবাহ তিনি বেশ ধুমধামের সহিত স্বসম্পন্ন করিয়াছিলেন ; এজন্য র্তাহাকে মহাজনের দ্বারে হাত পাতিতে হয় নাই। দ্বিতীয় কন্যা চারুবালার বিবাহ তেমনি ভাবেই হইল বটে, কিন্তু কিঞ্চিৎ ঋণ না করিয়া-পারিলেন না । তারপর কয়েক বৎসর যাইতে-ন-যাইতে তৃতীয় কন্যা নলিনীবালা বিবাহযোগ্য হইয়া উঠিল । রামলোচন . মনে মনে কন্যার বিবাহের জন্য সচেষ্ট হইলেন ;—দেখিতে শুনিতে চেষ্টা করিতে নলিনীর বয়স হিন্দু বিবাহ-পদ্ধতির গওঁী ছাড়াইয়। অনেক দূরে চলিয়া গেল। কুল-কিনারী কিছুই . হইল না। দুশ্চিন্তায় দুর্ভাবনায় রামলোচনের অন্তরাত্মা শুকাইয়া উঠিতে লাগিল । একটু পূৰ্ব্বে পার্থের বাড়ীর প্রবীণার আসিয়া মেয়ের বিবাহের কথা লইয়া যে বাক্যবাণ বর্ষণ করিয়া গেলেন, তাহাতে ব্ৰজেশ্বরী জলিয়া পুড়িয়া মরিতে লাগিলেন। এরূপ ঘটনা যে সংসারে বিরল নয়, এই ভাবিয়া তিনি কতকটা শান্ত হইলেন বটে, কিন্তু প্রতি পদক্ষেপে তাহাকে যেন কাটার মত বিধিতে লাগিল । শেষটায় র্তাহার সব ক্রোধ গিয়া পড়িল স্বামীর উপর । রামলোচন চটি জোড়াট। পায়ে দিয়া বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করিতেই ব্রজেশ্বরী উত্তেজিত কণ্ঠে বলিয়া উঠিলেন, "আচ্ছা, তুমি মনে ভেবেছ কি বল ত ?” রামলোচন স্ত্রীর প্রদীপ্ত মুখখানার পানে চাহিয়া বলিলেন, “এখন আবার তোমার কি হ’ল ?” “ব’ল তুমি মনে কি ভেবেছ ?” “আরে ছাই, বলই না কথাটা খুলে ।” "কেন, মেয়ের বিয়ে কি দিতে হবে না ? এমনি আইবুড় আর কতকাল থাকবে ব’ল ? ষোল পেরিয়ে সতেরোতে পড়বে ” - রামলোচন একটা ঢোক গিলিয়া বলিলেন, “চেষ্টা ত করছি।” ব্ৰজেশ্বরী আর একটু স্থর চড়াইয়া বলিলেন, “তুমি চুপ
পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৮৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।