পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سولانا ل W দাশরথি রায় সারা বাংলায় সমাদর লাভ করিতে পারিয়াছিলেন । তখন বাংলা-সাহিত্যের অতি দীন অবস্থা । বিদ্যাসাগরের প্রবল চেষ্টায় মাতৃভাষার অনুশীলন চলিতেছে। লোকের মনোরঞ্জন করিতে হইলে, এবং লোকশিক্ষার আদর্শ স্থাপন করিতে গেলে অনেক জিনিষেরই আশ্রয় লইতে হয় । তাই পাঁচালীকারদের অনেক কবিতায় তদানীন্তন সমাজ, জাতির গলদ ও পাশ্চাত্য-সভ্যতাকে তীব্রভাবে নিন্দ করা হইয়াছে এমনও দেখিতে পাওয়া যায়। দাশুরায়ের সমসাময়িক অার একজন পাচালীকার ংলা-সাহিত্যে অনেকখানি স্থান জুড়িয়া বসিয়াছিলেন । সারা বাংলা তার নাম না জানিলেও তার কণ্ঠ এখনও নীরব হয় নাই । তাৎকালিক প্রধান প্রধান ব্যক্তিগণের নিকট তিনি সাহিত্য-স্রষ্টারূপে বিশেষ সমাদর লাভ করিয়াছিলেন । অভিধানকার স্ববলচন্দ্র মিত্র মহাশয় এই রসিক-সাহিত্য সম্বন্ধে সুপরিচিত ছিলেন । তিনি র্তাহার অভিধানে রসিকচন্দ্র ও তাহার সাহিত্য সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত পরিচয় লিপিবদ্ধ করিয়াছেন । সমগ্র পশ্চিম বাংলায় তার নাম আজও ছড়াইয়া আছে। কয়েকখানি পুস্তক তিনি অনুরোধে পড়িয়া প্রকাশ করিয়াছিলেন । সমগ্র গ্রন্থাবলী প্রকাশের তার কোনদিনই আগ্রহ ছিল না । নিরহস্কার কবি আপনাকে প্রকাশ করিতে চাহিতেন না । পল্লীমায়ের কোলের অন্তরালে থাকিয়া নিজের সরল জীবন যাপন করিতেন। কবি বুঝিয়াছিলেন— “অপরার সমুমতি অবশু বাঞ্ছিত অতি, পরীবিদ্যা কিন্তু গতি জেনে মনে সার ।” গোল ও খঞ্জনীর তালে তালে পাচালীর গান আজকাল বাংলার পল্লীতে বড় দেখা যায় না । পুস্তকের আকারে দাশরথি রায়ের পাচালী বাজারে এখনও কিনিতে পাওয়া যায়। কিন্তু কবির পাচালী আজও হয়ত বটতলার দোকানে খোজ করিলে মিলিবে কি না সন্দেহ। তবুও তাহা এখনও হুগলী, বৰ্দ্ধমান, চব্বিশ পরগণা, হাওড়া প্রভৃতি জেলার পল্লীতে পল্লীতে কালেণ্ডত্রে গীত হইয় থাকে। ইহা শ্ৰীযুক্ত গৌরমোহন মুখোপাধ্যায়ের প্রবাসী—ভাদে, ১৩৩৭ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড পাচালী বলিয়া এখন কথিত । তিনি স্বকণ্ঠে উহ গাহিয়া থাকেন । পশ্চিম-বাংলায় গৌরবাবু একজন নামজাদ পাচালীকার, একথা নিঃসঙ্কোচে বলা যাইতে পারে। এখনও অনেকেই বেতারে গৌরমোহন মুখোপাধ্যায়ের পাচালী শুনিয়া থাকেন। বাড়ীর গিল্পীরা এখনও গৌরবাবুর পাচালী শুনিতে আগ্রহ প্রকাশ করিয়া থাকেন। কবি চলিয়া গিয়াছেন, কিন্তু কবির বাণী এখনও নীরব হয় নাই । ১২২৭ সালের বৈশাখী পূর্ণিমায় কবিবর রসিকচন্দ্র রায় তাহার মাতুলালয় পাড়াল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিত হরিকমল রায় হুগলী জেলার অন্তর্গত হরিপালে বাস করিতেন । বড় গ্রামের কিয়দংশ তাহার মাতামহের জমিদারী । মাতামহের সন্তান-সন্ততি না থাকায় রসিকচন্দ্র সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন ও মাতুলালয়ে বড় গ্রামেই আসিয়া বাস করেন। তখনকার যুগে ইংরেজী শিক্ষার্থীরা অনেকেই উচ্ছখল আচরণ করিতেন। তজ্জন্ত পিতা হরিকমল ছেলেকে উচ্চশিক্ষা দিতে নারাজ ছিলেন। তাই হ্রাম্য পাঠশালার তখনকার যুগে শিশুবোধক, চাণক্য শ্লোক ও পত্রদলিল পড়িয়া তাহার পাঠ সমাপ্তি হয়। তখন হইতেই রসিকচন্দ্রের কবি-প্রতিভার বিকাশ আরম্ভ হয় । দশ বৎসর বয়সে তিনি ছড়ার মত কবিত। বলিতে পারিতেন । এই অল্প অনুশীলনের ফলেই তিনি একাদশ খণ্ড পাচালী ও বহুতর খণ্ডকবিতা রচনা করিয়া একজন স্বকবি বলিয়৷ খ্যাতি লাভ করেন । ষোল বৎসর বয়সে রসিকচন্দ্র তাহার এক সহাধ্যায়ী কর্তৃক অমুরুদ্ধ হইয়া রাধিকার রূপ-বর্ণনা লিখিয়াছেন— বর্ণ হেরে, স্বর্ণ পোড়ে চাপ পায় লাজ । হিঙ্গুল মিশ্রিত হরিতালেই কি কাজ । চরণ বরণ হেরে জব যায় দূর। অরুণ কোথায় লাগে কি হার সিছুয় ॥ রূপের তুলনা দিতে কে আছরে আর।. . থাকুক উৰ্ব্বণী বসি ব্লভ। কোন ছার ॥ তিলোত্তম তার কাছে তিল উত্তম নয় । রতিরূপে রতিতুল্য হয় কি না হয়। আঠার বৎসর বয়সে কবির প্রথম পুস্তক জীবন-তারা