পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

J8 రి প্রবাসী—ভাদে, SOHණු [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড সাহিত্যে সমানভাবেই চলিয়া আসিয়াছিল। মধ্যে বৈষ্ণব-সাহিত্যের জোয়ার কিছুকাল প্রবলভাবে চলিয়াছিল, তারপর পদ্য-সাহিত্যে নানা অনাচার দেখা দিয়াছিল। খাটি সাহিত্যের প্রেরণা লইয়া বড় আর কোন কবি সাহিত্যের আসরে নামিত না। কবি হতাশ হন নাই ; তাই আক্ষেপ করিয়া বলিয়াছিলেন— ও রব নীরব হবে না, রহিবে এদেশে । অক্ষয় মৃদঙ্গ তুই বাজিবি রে শেষে । কবির সেই ভবিষ্যদ্বাণী আজ সার্থক হইয়াছে। বিশ্বকবি-সভায় রবীন্দ্রনাথকে পাইয়া আমরা ধন্য হইয়াছি। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সনিৰ্ব্বন্ধ অকুরোধে কাক ও কোকিল, পৰ্ব্বত ও ভুজঙ্গ, ব্যাঘ্র ও মুকুর-বিক্রেতা, প্রভাত প্রভৃতি আরও কয়েকটি খণ্ড কবিতা লইয়া তাহার পদ্যসূত্র প্রথমভাগ রচিত হয় । তারপর প্রাঞ্চলভাষায় লিখিত পদ্যসূত্র দ্বিতীয়ভাগ প্রকাশিত হয়। পাঠকের কৌতুক নিবারণের জন্য পদ্যসুত্র প্রথমভাগের প্রভাত শীৰ্ষক কবিতার কিয়দংশ নিম্নে উদ্ধৃত হইল— গেল রাতি নানা জাতি, দিক ভাতি শোভিল । সুধাময়, সুসময়, উমা হয় উদিত ॥ ভাল ভাল উলাকাল হিমজাল ঘেরিল । উপবন সুচিকণ, সুশোভন হুইল । ক্ষিতিতল, সুশীতল, সুশীতল মাধবে । দিক দশ, করে বশ পুষ্পরস সৌরভে। ফুল ফুটে ভৃঙ্গ ছুটে মধু লুটে উদ্যানে । পার্থী সবে প্রেমোৎসবে ডাকে তবে গগনে ॥ কবি গৃহের অনতিদূরে বাগানের মধ্যে চণ্ডীমণ্ডপে নিজের স্থান করিয়া লইয়াছিলেন । তিনি উহার নাম রাখিয়াছিলেন–শান্তিনিকেতন। তাছার শাস্তিনিকেতনের একমাত্র সঙ্গী ছিল দুর্গাচরণ পাঠক বলিয়া এক ব্রাহ্মণ-তনয় । দুর্গাচরণের যত্বে রসিকচন্দ্রের একাদশ পাচালী, ঘোর মম্বস্তর, জীবনতারা, শ্ৰীকৃষ্ণ, প্রেমাঙ্কুর, হরিভক্তি চন্ত্রিকা,পদাঙ্কদূত, দশমহাবিদ্যা,বৈষ্ণবমনোরঞ্জন, শকুন্তলা-বিহার, বৰ্দ্ধমানচন্দ্রোদয়, নবরসাঙ্কুর, কুলীনকুলাচার, শ্বামাসঙ্গীত প্রভৃতি কবিতা পুস্তক ক্রমান্বয়ে প্রচারিত হয়। রসিকচন্দ্র, গোবিন্দ অধিকারী, রাধাকৃষ্ণ, নবীন গুই, মহেশ চক্রবর্তী ও লোক ধোবাকু যাত্র ; সোনাপটুয়া, শশী চক্রবর্তী ও ত্রিপুরা বিশ্বাসকে পাচালী ; বাবুরাম প্রভৃতিকে কবি এবং নরোত্তম দাস, নকুড় দাস প্রভৃতিকে আবশ্বক মত কীৰ্ত্তন গীত ও ছড়া রচনা করিয়া দিতেন। একবার জনৈক পাশ্চাত্য শিক্ষাভিমানী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধিধারী শিক্ষক প্রসঙ্গক্রমে বলিয়াছিলেন— “রায় মহাশয়ের ছন্দ অনেকটা একঘেয়ে। মাইকেলী ছন্দে তিনি যদি কিছু লিখিতে পারেন তবেই বুঝি তিনি লেখক।” নূতন ছন্দ - কথাটি শুনিয়া তাহার কৌতুহল হইল। পরে যদুগোপালের পদ্যপাঠ তৃতীয় ভাগে লক্ষ্মণের শক্তিশেল, দশরথের প্রতি কৈকেয়ী, সীতা ও সরমার কথোপকথন পাঠ করিয়া ছন্দটি তাহার ভাল লাগিল । ইহার ফলেই কবির নবরসাঙ্গুরের স্বষ্টি । বিদ্যাসাগরের বিধবা-বিবাহ প্রচারে সমাজ যখন তোলপাড়, রায় মহাশয় সেই সময়ে উক্ত প্রথা প্রচলনের বিরুদ্ধে তদানীন্তন যা খাওয়ালা নবীন গুইকে এক কৌতুকাবহ পালা রচনা করিয়া দেন। এই সময় হইতেই বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সহিত র্তাহার বন্ধুত্ব আরও গাঢ়তর – হয় এবং তাহার নির্দেশক্রমে রায় মহাশয় কুলীন-কুলাচার নামক একখানি বহুবিবাহ-নিবারক পুস্তক প্রণয়ন করেন । তাহা বিনামূল্যে সাধারণের নিকট বিতরিত হয়। রায় মহাশয় বহুবিবাহ ও বিধবা-বিবাহ উভয়েরই বিপক্ষে ছিলেন। কবির নবরসাঙ্গুর নয়টি রস বর্ণনা করিয়া অমিত্রাক্ষর ছন্দে লিখিত হইয়াছিল, পরে মিত্রাক্ষর ছন্দে দ্বিতীয় পৰ্য্যায় নবরসাস্কর রচনা করেন। উহার কয়েকটি পদ্য তৎকালীন জন্মভূমি পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছিল। নিম্নে একটি কবিতা উদ্ধৃত হইল। ভগ্নকুটীরে ব্রহ্মময়ী দর্শনে ফুল্লরা— কে তুই স্বন্দরী নারী, ব্যাধের আলয় । ও তোর বদনে যেন চাদের উদয় ॥ স্বন্দরী স্বঙ্গর রূপ দেখি যে গো তোর। আসিতে পথে কি তোরে দেখে নাই চোর ॥ থাকা তেলাকুচা যেন ছুইখানি ঠোট । অথবা তুলনা দিলে শিউলির বোট । শেষবয়সে তিনি তদানীন্তন অনেক সাপ্তাহিক,