পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৫২ প্রবাসী—ভাদে, ১৩৩৭ ['৩eশ ভাগ, ১ম খণ্ড میرسیم. বাহিরের শত্রু এবং বন্য জন্তুর আক্রমণ হইতে গ্রামকে রক্ষণ করিবার জন্য চারিদিকে কাঠের বেড়া থাকিত । গ্রামস্থ যুবকেরা পালা করিয়া রাত্রে গ্রাম পাহারা দিত। শিকারে ও যুদ্ধে আগে তীর ব্যবহৃত হইত, পরে বন্দুকের প্রচলন হইয়াছে। পাহাড়ীদের মধ্যে এমন যুবক নাই, যে বন্দুক ব্যবহার করিতে জানে না। সাপের মাথা হইতে বিষ কৌশলে তীরের ফরাতে মাখাইয়া রাখা হইত। সেই তীর যাহাকেই বিদ্ধ করুক তাহার আর নিস্তার ছিল না। কুকি অধিকৃত স্থানগুলি ইংরাজের অধিকারে আসিবার পূর্বে ইহাদের নিজেদের মধ্যেও যথেষ্ট যুদ্ধবিগ্ৰহ হইয়াছে। কুকিদের মধ্যে অবরোধ-প্রথা নাই। ছেলেমেয়ের বিবাহ পিতামাতাই দিয়া থাকেন। বিবাহের পর বধু শ্বশুরঘরে গিয়া বাস করে ও শ্বশুর-শাশুড়ীর সেবা করে । কুকিরা ভাত হইতে এক প্রকার মদ তৈয়ারী করে। তাহা পান করিলে বেশী নেশা হয় না বা বিশেষ কোন অনিষ্টও হয় না। যুবক-যুবতীর ক্ষেত্রে কাজ করে। বৃদ্ধবৃদ্ধারা বাড়ী ঘর ও ছোট ছোট ছেলেমেয়ের তত্ত্বাবধান করে। ক্ষেতে মাইবার পূৰ্ব্বে গ্রামের সমুদয় যুবক-যুবতী মদ্য পান করিয়া একত্রে দলবদ্ধ হইয়া ক্ষেত্রে রওয়ানা হয়। যুবকদের মধ্যে যাহার কণ্ঠস্বর অতিশয় মিষ্ট সেই দলের নেতা হয় । উক্ত নায়ক একটি ঢোলক ও শিঙ্গা বাজাইয়া গান করিতে থাকে। তাহার সঙ্গে সকলেই গান করিতে করিতে অগ্রসর হয়। সঙ্গীতের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত দিন ধরিয়া ক্ষেতের কাজ চলিতে 叫忆夺目 যদিও খৃষ্টান মিশনারীগণ অস্বীকার করেন—তবুও আমরা কুকি সমাজকে বিরাট হিন্দুজাতিরই একটি অংশ মনে করি। সরকারী গণনায় কুকিদিগকে হিন্দু লেখা হয় না ; পাৰ্ব্বত্যধৰ্ম্মী বলিয়া লেখা হয়। তাহার নানা কারণ আছে,—তাহ! এখানে আলোচনা করা নিম্প্রয়োজন। কুকিরা পরমেশ্বরে বিশ্বাসী । ইহার পরমেশ্বরকে “পাথিয়ান” বলে। হিন্দুদের অমুরূপ বহুদেবতার পূজা শ্রাদ্ধাদি ও পিতৃদেবতার পূজা কুকিদের মধ্যে প্রচলিত আছে। প্রচারিত আছে যে পাৰ্ব্বত্যজাতির ভূতোপাসক । ভূতের পূজা আমাদের মধ্যে প্রচলিত আছে, তাহা অস্বীকার । করি না। খৃষ্টান ও মুসলমানদের সয়তান, বা বৌদ্ধদের মারের সম্বন্ধে যে বিশ্বাস, আমাদের ভূত সম্বন্ধে বিশ্বাসও তদপেক্ষ বিশেষ নিকৃষ্ট নহে । আমরা শিব, কালী, গঙ্গা, রামলক্ষ্মণ, ও লক্ষ্মীর পূজা, করি। কুকিদের বিশ্বাস, দেবতারা মুখসম্পদ দেন-ভূতেরা শুধু রোগ, শোক ও দুঃখ দেয়। হিন্দুসমাজের যে-কোনও নিম্নস্তরের ধৰ্ম্মবিশ্বাস ও আচরণের সঙ্গে আমাদের বিশেষ পার্থক্য নাই। পূজাতে পশুবলি হয়। মদ্যপান, নৃত্য, বাদ্য ও সঙ্গীত সবই হয়। আমাদের দিনগুলি ভালভাবেই চলিয়া ধাইত । • আমাদের অভাব অতি সামান্ত ছিল এবং তাহা পূরণের জন্য বিশেষ বেগ পাইতে হইত না । গ্রামস্থ সমুদয় লোক এক পরিবারের লোকের মত বাস করিত । একজন অন্যজনকে বিপদের সময় প্রাণ দিয়াও সাহায্য করিত । সমুদয় অশান্তির মূল “স্বার্থ’ জিনিষটি আমাদের মধ্যে বড় ছিল না । অন্ধকার যুগের কথা সংক্ষেপে বল, হইল-এইবার আলোকিত যুগের কথা। পূর্বেই বলিয়াছি – মিশনারী মহাত্মারাই আমাদিগকে প্রেম দিয়া হঠাৎ এই আলোকে লইয়া আসিয়াছেন। অন্ধকার হইতে হঠাৎ এই তীব্র আলোকে আসিয়া আমাদের চোখে ধ"ধ লাগিয়াছে। অন্ধকারে আমরা ছিলাম বরং ভাল। আলোকে যে চোখ যায় ! পথও খুজিয়া পাইতেছি না। আমাদিগকে পথের সন্ধান কে দিবে ? গৃহবিবাদে ও যুদ্ধবিগ্রহে দুৰ্ব্বল পাৰ্ব্বত্যজাতি ইংরেজদের বহুত স্বীকার করিল। শাদ-লোক তাহাদের চোখে এক ভীতির বস্তু। সেই সময় মিশনারীরা গিয়া প্রচার করিতে লাগিলেন,—‘প্রভূ যীশুকে বিশ্বাস কর—তোমরা পরিত্রাণ পাইবে। যীশু আমাদিগকে তোমাদের নিকট পাঠাইয়াছেন। তোমরা পশু, তোমরা অসভ্য, মূৰ্খ, বৰ্ব্বর, ভূত। তোমরা কিছু জান না । তোমরা খ্ৰীষ্ট ধৰ্ম্ম গ্রহণ কর। ইংরাজ খ্ৰীষ্টান, তাই দেখ কত বড় । দেখ—যীশু আমাকে কেমন সুন্দর