৫ম সংখ্যা ] অস্বরের মত প্রকাও এক জোয়ান এগিয়ে এল । একটু কুজো-মত লোকটা—লম্বা হাত দুখান হাটু যেন ছাড়িয়ে যায়—কপাল এত ছোট যে দেখাই যায় না—ঘাড় বলে শরীরে কোন অঙ্গ নেই—মুখে তার বোকার মত হাসি, বিব্রতভাবে সে ভ্ৰ খুটতে লাগলো। ভাঙা গলায় সে বললে, “এখানে করবার আছে কি ?” দলপতি সভার দিকে ফিরে বলতে লাগল, “এই সিসোয়াজীর বিশেষত্ব হচ্ছে সিন্দুক, লোহার বাক্স ইত্যাদি টাকাকড়ি রাখবার যত রকম আধার, তা ইনি খুলতে পারেন। রাত্রে কাজের সুবিধা করবার জন্যে ইনি মাঝে মাঝে ইলেকটিক কারেন্ট দিয়ে ধাতু গলিয়ে ফেলেন ; দুঃখের বিষয়, এখানে এমন কিছু নেই যাতে এর বাহাদুরী প্রকাশ পায়। যেমন জবরদস্ত তালা হোক না কেন ইনি অবলীলায় খুলতে পারেন.আচ্ছ এই দরজাটা তো বন্ধ রয়েছে , ‘’ পাশের একট। দরজার দিকে সবার চোখ পড়ল— তার উপরে বড় হরফে লেখা—“সাজঘর—প্রবেশ নিষেধ ।” সভাপতি বললেন, “হু, দরজাটা তো বন্ধই দেখছি।” দলপতি সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে বলল, “বেশ ; সিসোয় বাবুজী-দয়া করে একবার...” সিসোয়া অলসভাবে বললে, “আরে এর আবার...” পরক্ষণেই সে দরজার কাছে গেল। খুব সাবধানে সেটাকে নাড়া দিলে, পকেট থেকে চকচকে কি একটা ছোট যন্ত্র বার করলে, তার পর দরজার কলে কয়েকটা সামান্য খুটখাট করে বড় দরজাট সটান খুলে ফেললে । সভাপতি ঘড়ি-হাতে বসেছিলেন—ব্যাপারটা দশ সেকেণ্ডেই শেষ হ’ল । দলপতি হেসে বললে, “বহুত আচ্ছ। বাবুজী ! আপনি এবার বিশ্রাম করুন।” সভাপতি একটু ভয় পেয়েছিলেন। তিনি বললেন, “অবশ্ব ব্যাপারটা খুবই চমৎকার, কিন্তু আপনার বন্ধু কি দরজাটা ফিরে বন্ধ করতে পারেন ?” “মাপ করবেন -কথাটা ভুলে গিয়েছিলুম।” দলপতি বিনীত উত্তর দিয়ে আবার সিসোয়াকে ডাকলে । সে নিষ্কলঙ্ক ৬৬১ যেমন নিঃশব্দে কপাটখানা খুলেছিল, তেমনি অলক্ষ্যকৌশলে তরিত্বে বন্ধ করে দিল। তারপর লম্বা দুখান৷ বাকা ঠোটে হাসির রেখা ফুটিয়ে থপথপ করে নিজের জায়গায় গিয়ে বসল। “এইবার আমার আর এক বন্ধুর কৃতিত্ব দেখাব। ইনি রেল-ষ্টেশনে বা থিয়েটারে লোকের পকেট মারেন।” বক্তা বন্ধুটির দিকে সভার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, “আমার এ বন্ধুর বয়স এখনও খুব কম, তবে এর বর্তমান কাজ দেখে আপনার বেশ বুঝতে পারবেন যে, রীতিমত সাধনায় এর ভবিষ্যৎ কি বিরাট ও অদ্ভূত হতে পারে। ইয়াস ” - ডাক শুনে ইয়াস এগিয়ে এল। রং সামান্ত ময়লা, গায়ে নীল রেশমের জাম, পায়ে চকচকে নরম চামড়ার বুট । বেদের মত তার পোষাক, পালোয়ানের মত দম্ভভরা চলার ভঙ্গী, একচোখে ঈষৎ ভ্ৰকুটি। 總 দলপতি আবার সভার দিকে ফিরে বললে, “যদি আপনাদের মধ্যে কেউ দয়া করে একবার পরীক্ষার জন্যে উঠে আসেন তবে যথেষ্ট বাধিত হব । আশা করি আমায় বিশ্বাস করবেন—এ শুধু খেলা দেখানো—আপনাদের লোকসানের কোনো ভয় নেই।” দলের মাঝ থেকে ভাটার মত বেঁটে মোট এক অল্পবয়সী ব্যারিষ্টার উঠে এল । দলপতির দিকে ফিরে হাসিমুখে বললেন, “আজ্ঞে আমি প্রস্তুত।” ইয়াসা এতক্ষণ একমনে তার রেশমের দড়ি-জড়ানো কোমরবন্ধের মোট ঝুরিটা নিয়ে খেলা করছিল, এবার সে ব্যারিষ্টারের গ৷ ঘেযে দাড়াল। তার বা হাত ঢেকে একখানা বড় রেশমী রঙ্গীন রুমাল ঝুলছে। “মনে করুন আপনি ষ্টেশনে কাউকে তুলে দিতে গেছেন কিংবা কোথাও ভিড়ের মাঝে দাড়িয়ে আছেন—” ইয়াস ব্যারিষ্টারের সঙ্গে কথা বলতে স্বরু করল। গলাটি তার ভারি নরম, কথার অবাধ গতি। —“দেখেই বুঝলুম ‘মাল’—কিছু মনে করবেন না, ধরুন আপনিই যেন ‘মাল’— না না, আমি অন্যায় কিছু বলিনি। আমাদের ভাষায় শাসাল লোক যার কাছে কিছু পাবার আশা রাখি—কি পাব তা ঠিক নেই, তবে একবারে যে ভুয়ো নয় এই আর কি !
পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭১৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।