পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাদশাহী বিচার-পদ্ধতি ও দণ্ডনীতি শ্ৰীকমলকৃষ্ণ বসু, এম্-এ ভারতে সৰ্ব্বপ্রথম মুসলমান আক্রমণ সপ্তম শতাব্দীর প্রথমার্দ্ধে আরম্ভ হলেও খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর গোড়ায় আরবদেশীয় কাসিমের নেতৃত্বে উত্তর-পশ্চিম প্রান্তস্থ সিন্ধু প্রভৃতি দেশসমূহের বিরুদ্ধে যে অভিযান হয় তাহ আগেকারগুলোর তুলনায় ছিল বেশ বড় রকমের। দেশজয়ের পর আরবর সিন্ধুদেশে যে রাজ্য স্থাপন করেন তার বিস্তার ছিল যেমন কম, তেমনি ছিল তার অস্তিত্ব অল্পস্থায়ী। তিন অঙ্কে সমাপ্ত মুসলমান কর্তৃক ভারত আক্রমণ বিষয়ক নাটকটির প্রথম অঙ্ক এখানেই শেষ হয় ; দ্বিতীয় অঙ্কের আরম্ভ তুকী বংশীয় ঘজনী অধিবাসী মামুদের আক্রমণে এবং ইহার শেষ ঘোর-দেশজাত মহম্মদের ভারতজয়ের সঙ্গে ; মোগল বংশীয় বাবরের আক্রমণ তৃতীয় অঙ্কের প্রারম্ভ এবং তাহার বংশধরগণের অধীনে রাজ্যস্থাপন ও বিস্তারে ইহার পরিসমাপ্তি। সিন্ধুপ্রদেশে মুসলমান আমীর, বা সম্বাস্ত সর্দাররাই নিজেদের জমিদারীতে ইংলণ্ডের“ফিউড্যাল” যুগের ব্যারনদের মত ছিলেন দণ্ডমুণ্ডের কৰ্ত্তা । কোরাণ অনুযায়ী বিচার করতেন কাজী—মুসলমানের উপর ত বটেই, হিন্দুরাও তা থেকে বাদ যেতেন না, বিশেষ যখন হিন্দুমুসলমানে কোনো মামল হ’ত। আর এ ক্ষেত্রে হিন্দুরাই হ’ত বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত, বিজিত যেমন হয়ে আসচে বিজেতার হাতে সেই আদিকাল হ’তে । রাজনীতিঘটিত মামলায় কি হিন্দু কি মুসলমান সকলের পক্ষে একই আইন ছিল। বাদী প্রতিবাদী উভয়ে হিন্দু হ’লে সে মামলা পেশ হ’ত হিন্দুদের পঞ্চায়েতীতে, যেখানে তারাই ছিলেন বিচারের সৰ্ব্বেসৰ্ব্ব কৰ্ত্তা। সাধারণ সরকারী বিচারালয়গুলো ছিল হিন্দুদের উপর পীড়ন করবার এক একটা যন্ত্র-বিশেষ। তখন যাজকদের ক্ষমতা ছিল অপরিসীম, আর যাজকীয় বিধি না মেনে চলবার শক্তি বা সাহস স্বয়ং বাদশাহেরও দেখা যেত না । - খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীর গোড়ায় এলেন ঘজনীর মামুদ তার উদ্ধাম প্রচণ্ড জিঘাংসা সঙ্গে নিয়ে। তিনি যেখানেই গেলেন সেখানেই রেখে গেলেন র্তার প্রতিনিধিস্বরূপ বিরাট ধ্বংসের প্রতিচ্ছায়া আর আৰ্ত্তের গগনভেদী মৰ্ম্মঘাতী হাহাকার । গৃহবিবাদনিরত মৃতপ্রায় হিন্দুজাতি তখন অধঃপতনের শেষসীমায় উপনীত ; শক্তি ছিল না তাদের এই দুৰ্দ্ধৰ্য আক্রমণকারীর গতির বেগ রোধ করে জননী-জন্মভূমির বা নিজেদের স্ত্রীকন্যার মধ্যাদা অক্ষুঞ্জ রাখে। লুটপাট করতেই মামুদের ভারতবর্ষে আগমন ; রাজ্যস্থাপনের দিকে তার ঝেণক ছিল না ’ মোটেই, তাই লুটের বিপুল সামগ্ৰী নিয়েই তিনি নিজের জন্মভূমির দিকে ফিরলেন। - মামুদের পদামুসরণ করে এলেন মহম্মদ, ঘজনী ও হিরাট মধ্যস্থিত দুৰ্জয় দুরাক্রম গিরিসস্কুল উপত্যকা ‘ঘোর দেশ হ’তে । মধ্যযুগের খৃষ্টানগণ র্তাদের সেই চিরবাঞ্ছিত জেরুজালেম মুসলমানদের করতলগত হ’লে তার উদ্ধারকল্পে যুদ্ধযাত্রা করাটাকে যেমন ধৰ্ম্মকাৰ্য্য মনে করতেন, খাটি মুসলমান ঘোর-এর মহম্মদ হিন্দুদের বিরুদ্ধে ‘জিহাদ করতে তার চেয়ে কিছু কম গৌরব মনে করেন নি। ভারতে মুসলমান-রাজ্যের পুনরুদ্ধার বা পুনঃস্থাপন মানসে ও সেই সঙ্গে কাফিরদের বেশ একটু বড় রকমের শিক্ষা দিবার উদ্দেশ্বে র্তার বিরাট বাহিনীর দুৰ্ব্বার শক্তি ভারতের উপর প্রয়োগ করলেন। জয়ের পর তার অধীনস্থ কুতুবুদ্দীনের উপর অধিকৃত রাজ্য দিল্লীর শাসনভার দিয়ে নিজের দেশে ফিরে গেলেন। আর এখান হ’তে স্বরু হ’ল রীতিমত বাদশাহী আমল । তুকী-বংশসস্তৃত ও পরে দাসশ্রেণীভুক্ত কুতুব ও র্তাহার বংশধরগণ যারা ভারত ইতিহাসে ‘দাস’ রাজা নামে খ্যাত এবং এদের পরবর্তী বাদশাহরা যথা খালজী, তুঘলক, লোদি, ও সৈয়দবংশীয়গণ যথাক্রমে ভারতের