পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭૧૨ প্রবাসী—ভাদে, : ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ১ম খণ্ড তারা করত কি ? এরা নিজেদের মামলা, অভিযোগ প্রভৃতি কখন স্থানীয় পঞ্চায়েং, কখন বা শালিসের কাছে নিয়ে যেত। আর এখানে যে ফয়সাল হ’ত ত’ তাদের মেনে নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। আবার এ-ও দেখা যায় ষে, তা’র কখন কখন বা নিজেদের লাঠির জোরে যা-হক একটা কিছু নিম্পত্তি করত। এক্ষেত্রে লাঠি যার মাটি তার । এই ত গেল মোগল আমলের বিচার-পদ্ধতির কথা ; এবার সে-সময়কার আইন-কাতুন সম্বন্ধে দুই চারিটি প্রয়োজনীয় কথা বলা যাক । এটা সহজেই অল্পমেয় যে, তখনকার ব্যবহার-বিজ্ঞানের উৎপত্তি ভারতবর্ষের বাইরে হয় । কোরাণ বা তাহার টীকা অনুসারে বিচার চলতি। প্রধানতঃ কোরাণের চারটি টীকাই দেখতে পাওয়া যায়, যথা হনাফি, মলফি, সফি, ও হনবালি। এর মধ্যে প্রথমটিরই ভারতবর্ষে মোগলদের আমলে বেশী চলন ছিল । কোরাণ ছাড়া নজিরের উপরও দৃষ্টি রাখার বিধি দেখতে পাওয়া যায় ; আইন-ব্যবসায়ীর মতামত যে মোটেই লওয়া হ’ত না এমনও নয়। কোরাণ ছাড়া নজির বা ব্যবহারশাস্ত্রজীবীর মতামতের মূল্য কম না হলেও বা সেই অনুসারে বিচারকার্য্য পরিচালিত হলেও বাদশাহের বা কাজীর স্বীয় মীমাংসার দ্বারা কোনো রীতি-নিৰ্দ্ধারণ বা কোরাণের কোনো অস্পষ্ট ধারাকে স্পষ্ট করার মোটেই ক্ষমতা ছিল না ; নজির ও আইনজ্ঞদের মত কোরাণকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা ছাড়া অপর কোনো নূতন কামুন বা মূলনীতি র্তারা প্রণয়ন করতেন না। বস্তুতঃ কাৰ্য্যক্ষেত্রে বিচারকগণকে সদাসৰ্ব্বদা আরবীয় লেখকগণ অনুমোদিত আইনশাস্ত্রের একটি চুম্বক নিজেদের নিকট রাখতে হ’ত । মাঝে মাঝে বিভিন্ন বাদশাহের রাজত্বসময়ে বিচারকার্য্যের সুবিধার জন্য একটি আইনের চুম্বক বা সারসংগ্রহ করা হয়। প্রায় দুইলক্ষ টাকা ব্যয়ে বড় বড় আইনবেত্তার সাহায্যে আইনের যে বইটি ঔরংজীব সঙ্কলন করান, সেটির নামকরণ হয়—“ফতোয়াই-আলমগিরি।” * মোগল আমলে মুসলমান বা হিন্দুদের জন্য ভিন্ন আইন ‘চলিত ছিল না—উভয়ের জন্য এক আইন বিধিবদ্ধ ছিল । - بیہِ مِھمبه همسیح مسمومی হিন্দুদের জন্য যে একমাত্র কাজীর বিচারালয় ছিল এমন নয়। তাদের মধ্যে স্বজাতীয় আদালত বা শালিসি-করণের ব্যবস্থাও লক্ষিত হয়ে থাকে। তবে উহার বেশী প্রচলন ছিল দক্ষিণাপথে। উদারনীতিজ্ঞ আকবরের সময় হিন্দুদের জন্য আলাদা আদালত স্থাপিত হয়। এখানে মন্থর ব্যবস্থা মত বিচারকার্য্য সম্পন্ন হ’ত। কোনো কোনো ইংরেজলেখক হিন্দুদের আদালতে যে আইন প্রচলিত ছিল তাকে ‘জেন্ট, কোড বলে অভিহিত করেছেন । বাদশাহী আমলে অপরাধীকে কি দগু দেওয়া হ’ত জানার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, মুসলমান ব্যবহারশাস্ত্রে অপরাধকে তিনটি পর্য্যায়ে ভাগ করা হয়েছে ; যথা— ১ । ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অপরাধ ২ । সমাজ, জাতি, বা রাজার বিরুদ্ধে অপরাধ ৩। ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে অপরাধ । প্রথম অপরাধের শাস্তিবিধান-করণ স্বয়ং ঈশ্বরের অধিকার ; দ্বিতীয় বা তৃতীয়টির উপর ব্যক্তিগত অধিকার । কিন্তু কি আশ্চর্য্যের বিষয়, নরহত্যা প্রথম পৰ্য্যায়ভুক্ত নয়, হত্যাকারীরা হত ব্যক্তির আত্মীয়কে খেসারৎ দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারলেই দায় হ’তে রেহাই পেত। আর যেখানে আত্মীয়েরা ক্ষতিপূরণে সন্তুষ্ট না হ’ত, সেখানে কাজীকে বিচার করে প্রাণদণ্ডের আজ্ঞা দিতে হ’ত । সেকালে শাস্তিবিধান-কার্যের চারিটি শ্রেণীবিভাগ ছিল, যেমন হিদ, তাজির,কিসস, ও তহসীর । যে শাস্তিতে খাস ঈশ্বরের অধিকার ছিল, তাকে বলত হিদ। কোরাণ অচযায়ী এই শ্রেণীর শাস্তির কোনরূপ ব্যতিক্রম করার কারও ক্ষমতা ছিল না—তা তিনি, যিনিই হন না কেন । এই প্রকার শাস্তিবিধান নিতান্ত উদ্দেশ্যবিহীন ব’লে মনে হয় না ও প্রজাগণকে অপরাধ হতে বিরত রাখাই এরূপ দগুবিধানের প্রধান লক্ষ্য ছিল । হিদের কয়েকটি নমুনা দেওয়া গেল – ১। ব্যভিচার দোষে অভিযুক্ত দোষীদের পাথর ছুড়ে মারা হত। অবিবাহিত স্ত্রী-পুরুষের অবৈধ সঙ্গমের জন্য একশটি বেত্ৰাঘাতের ব্যবস্থা ছিল ।