পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫২ করেন। তিনি শ্ৰীশ্রীরামচন্দ্রের অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও অবিসম্বাদী ভক্ত,—প্রাচীন, প্রাজ্ঞ, সর্বশাস্ত্রে স্থপণ্ডিত, ‘বোটানির’ বিশেষজ্ঞ, ভারতের গৌরবস্থল এবং চিরস্মরণীয়। তিনি অমর বলেই আজ আমরা তাকে লাভ করবার সৌভাগ্য লাভও করেছি। গৃন্নারের এক মাতব্বর ওজস্বিনী ভাষায় প্রস্তাবটি সমর্থন করলেন । ‘বন্দে রঘুবরম্ ধ্বনির মধ্যে মহাবীরজী একটি উচ্চশাখে আসন গ্রহণ করলেন । বলাই বাহুল্য—সম্মানীরা সকলেই ডেলো-ডায়সে আসন পেয়েছিলেন। শ্ৰীযুক্ত সভাপতি তখন সমাগত সভ্যদের সম্বোধন করে বললেন— শ্রদ্ধেয় জাম্বুবান এবং স্নেহাস্পদ প্রতিভাজন নাতী নাতনীরা ! উচ্চাসনে আমাদের জন্মগত অধিকার, তবে আজ এই সভায় সৰ্ব্বোচ্চ আসন দান করে আমাকে যে সম্মান দিলে, জানি না আমি সেই আসনের সম্মান রক্ষা করতে সমর্থ কি না । পূর্বে সভাসমিতি যে ছিল না তা নয় । সে ছিল,— বিবাহ-সভা, স্বয়ম্বর-সভা, পঞ্চায়েৎ প্রভৃতি। ক্রমে তা হরিসভায় এসে থেমেছিল । তাতে খোলের আওয়াজ ছাড়া গোলের কিছু ছিল না। প্রসাদ খেয়ে যে-ধার নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে বাড়ী যেত, অপরের মাথায় কেউ হাত বুলুতে না । কিছু কাল হতে সভার বাড়বৃদ্ধি এবং নামরূপ দ্রুত বেড়ে চলেছে – —কি শাস্ত্রে, কি সাধনায় স্বার্থত্যাগই ছিল তখন লক্ষ্য । এখন স্বার্থরক্ষার তরেই এত সভাসমিতির স্বষ্টি ও বৃদ্ধি। সব দেশের সব জাতই দল বেঁধে সভা ফেদেছে,—ধোপ-সভা, গোপ-সভা, ডাক্তার-সভা, মোক্তার সভা ;–ধনিক, বণিক, শ্রমিক কেউ বাদ নেই। কেরাণী সভা কম-জোর ; তাদের মেরে রেখেছে—মুদী, ম-ষষ্ঠী আর আপিস-মাষ্টার ৷ বসেনি কেবল লেখক-সভা, তাদের অবস্থা নাকি কেরাণীরও নীচে, যেহেতু তারা কেৰল লিখতেই পারে, কথা কইতে পারে না। কনফারেন্সে কথার কসরৎ আর কথার কারবারেরই কদর। সকলেই তাদের ബ്ബാ আর পুলিস্ । যারা দেশের মনের খোরাক যোগায় তাদের পেটের খোরাক নেই, সভার ডাকও নেই ! আছে কেবল দুৰ্গতি, তাই নিয়ে তারা বেশ আছে। শুনে একটি ধীমান বলে উঠলেন,—কথাটা বুঝলুম না, দুৰ্গতি অবলম্বনে লোক বেশ থাকে কি প্রকারে এবং কেন ? সভাপতি বললেন,—দীর্ঘজীবী হও । উত্তম প্রশ্নই করেছ বাবাজী ! সৰ্ব্বাগ্রে এটা কিন্তু মেনে নেওয়া চাই ঘে লেখকেরা বুদ্ধিবিদ্যা ছ-ই রাখেন (মতামত বা ভুলভ্রাস্তির কথা স্বতন্ত্র )—সে-কারণ মান-মৰ্য্যাদা জ্ঞানও রাখেন। যদি কেউ সহসা তাদের বলে বসেন ( যেহেতু তা বলাটা খুবই স্বাভাবিক এবং সহজ )—লেখবার জন্যে তোমাদের মাথার দিব্বি দেয় কে ? লিখতে বলেছিলুম কি ? —বেচারাদের জবাব আছে কি ! শুনে তাদের মাথা কাটা যায় ; ভাবে—তরোয়ালদে হলেই ভাল ছিল ! নিরস্ত্র দেশে তাদের সে সুখও নেই। তাই বোধ হয় তারা কো-অপারেশ্বন আর কিসমৎ নিয়ে থাকেন। বিদ্যায় বিনয় বাড়ে। এতে সেই প্রমাণই পাওয়া যায়। খুবই আনন্দের কথা । আমরা এতদিন ওই পথ ধরেই ছিলুম,— আজ ব্যতিক্রম ঘটায় তাদের কাছে আমাদের হটে যেতে হ’ল, তাই কথাটা তোমাদের জানিয়ে রাখচি । সম্ভলপুর, সমাগত জনৈক সভ্য বললেন,—আপনি সম্ভবত সংবাদপত্রাদি দেখা ছেড়ে দিয়েছেন, সাহিত্যিকসভা বা সাহিত্য-সভার অধিবেশন হয় বই কি । —হয়, বৎস, হয়। সেখানে গভীর গবেষণামূলক প্রবন্ধ পাঠ ছাড়া অন্য কথা বন্ধ । লেখকদের কথা কমই হয় । লেখক যদি কাতরে বলেন— “সকলি দিলাম তুলে ধরে বিশ্বরে এখন আমারে লহ করুণা করে ।” তখন শুনতে হয়— “ঠাই নাই ঠাই নাই | ছোট এ তরী আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।" তখন যে ‘তোমারি’ সোনার ধান ‘আমারি’ হয়ে দাড়ায়, সে-যে তখন সকলের-বিশ্বের। তুমি সরে পড়।