পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سا وان " [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড মনে অাছে অনেকদিন আগে ့ ့ ့ ့ তাহার দিদি যেবার মারা গিয়াছিল, সেবার শীতের দিনে বৈকালে নদীর ধারে বসিয়া ভাবিত, দিদি কি নরকে গিয়াছে ? সেখানকার বর্ণনা সে মহাভারতে পড়িয়াছিল, ঘোর অন্ধকার নরকের দেশে শত শত বিকটাকার পাপী ও তাহাদের চেয়েও বিকট যমদূতের হাতে পড়িয় তাহার দিদির কি অবস্থা হইতেছে ! কথাট। মনে আসিতেই বুকের কাছটায় কি একটা আটকাইয়া যেন গল বন্ধ হইয়। আসিত—চোগের জলে কাশবন শিমুলগাছ ঝাপসা হইয়। আসিত, কি জানি কেন সে তাহার হাস্যমুখী দিদির সঙ্গে মহাভারতোক্ত নরকের পারিপাশ্বিক অবস্থার সঙ্গে যেন কোনমতেই খাপ খাওয়াইতে পারিত না । তাহার মন বলিত না—না—দিদি সেখানে নাই—সে জায়গা দিদির জন্য নয় । তারপর ওপারের কাশবনে স্নান সন্ধ্যার রাঙা আলো যেন অপূৰ্ব্ব রহস্য মাখানো মনে হইত—আপন। আপনি তাহার শিশুমন কোন অদৃশ্ব শক্তির নিকট হাতজোড় করিয়| প্রার্থনা করিত—আমার দিদিকে তোমরা কোনো কষ্ট দিও না—সে অনেক কষ্ট পেয়ে গেছে— তোমাদের পায়ে পড়ি তাকে কিছু বোলো না-- ছেলেবেলার সে সহজ নির্ভরতার ভাব সে এগনও হারায় নাই । এই সেদিনও কলিকাতায় পড়িতে আসিবার সময়ও তাহার মনে হইয়াছিল—যাই না, আমি ত একটা ভাল কাজে যাচ্ছি – কত লোক ত কত চায়, আমি বিদ্যে চাচ্চি—আমায় এর উপায় ভগবান ঠিক করে দেবেন— তার এ নির্ভরতা আরও দৃঢ় ভিত্তির উপর দঁাড় করাইয়াছিলেন দেওয়ানপুরের হেডমাষ্টার মিঃ দত্ত । তিনি খৃষ্টান ছিলেন—ভক্ত ও বিশ্বাসী পৃষ্ঠান। তিনি তাহাকে যেসব কথা বলিতেন অন্য কোনে। ছেলের সঙ্গে সে ভাবের কথা বলিতেন না । শুধু গ্রামার এ্যালজেব্রা যাহ। অপর ছেলেদের সঙ্গে কহিতেন তাহা নয়—কত উপদেশের কথা, গভীর বিশ্বাসের কথা, ঈশ্বর, পরলোক, অন্তরতম অস্তরের নানা গোপন বাণী । কেমন করিয়া তাহার মনে হইয়াছিল এ বালকের মনের ক্ষেত্রে এ সকল উপদেশ সময়ে অঙ্কুরিত হইবে। 菁 普 举 শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি, রাস্তায় ফেরিওয়ালা হাকিতেছে পেয়ারাপুলি আম’, ‘ল্যাংড়া আম’–দিন রাত টিপ, টিপ বৃষ্টি, পথেঘাটে জল কাদা। এই সময়টার সঙ্গে অপুর কেমন একটা নিরাশ্রয়তা ও নিঃসম্বলতার ভাব জড়িত হইয়া আছে, আর-বছর ঠিক এই সময়টিতে কলিকাতায় নতুন আসিয়া অবলম্বনশূন্য অবস্থায় পথে পথে ঘুরিতে হইয়াছিল, কি ন৷ জানি হয়, কোথায় না জানি কি সুবিধা জুটিবে—এবার ও তাই । • ঔষধের কারখানায় এবার আর স্থান হয় নাই । এক বন্ধুর মেসে দিনকতক উঠিয়াছিল, এখন আবার অন্য একটি বন্ধুর মেসে আছে । নানাস্থানে ছেলে-পড়ানোর চেষ্টা করিয়া কিছুই জুটিল না, পরের মেসেই ব| চলে কি করিয়া ? তাহা ছাড়া এই বন্ধুটির ব্যবহার তত ভাল নয়, কেমন যেন বিরক্তির ভাব সৰ্ব্বদাই – তাহার অবস্থা সবই জানে অথচ একদিন তাহাকে জিজ্ঞাসা করিয়া বসিল সে মেস খুজিয়া লইতে এত দেরী কেন করিতেছে—এ মাসটার পরে আর কোথাও সিট কি খালি পাওয় যাইবে ? অপু মনে বড় আহত হইল। কিছু না বলিয়া সে গলির ভিতর হইতে বাহির হইয়! শুনিল মোড়ের মাথায় কাগজ বিক্রেতার হাকিতেছে, ভারি কাও হ’ল বাবু, জারমানি জাহাজ ডুবিয়ে দিল বাবু। খবরের কাগজ বিক্রয় করিলে কেমন হয় ? কলিকাতার খরচ চলে না ? মাকেও ত... . অপু সব সন্ধান লইল । তিন পয়সা দিয়া নগদ কিনিয়া আনিতে হয় খবরের কাগজের আপিস হইতে, চার পয়সায় বিক্রী, এক পয়সা লাভ কাগজপিছু। কিন্তু মূলধন ত চাই, কাহারও কাছে হাত পাতিতে লজ্জা করে, দিবেই বা কে ? এই কলিকাতা সহরে এমন একজনও নাই যে তাহাকে টাকা ধার দেয় ? সে স্বদ দিতে রাজী আছে । সমীরের কাছে যাইতে ইচ্ছা হয় না, সে ভাল করিয়া কথা কয় না । ভাবিয়া চিন্তিয়া অবশেষে কারখানার তেওয়ারী-বৌয়ের কাছে গিয়া সব বলিল । তেওয়ারী বেী স্বদ লইবে না। লুকাইয়া দুটা মাত্র টাকা