পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহামায়া ট্রীসীতা দেবী ( こ> ) আজ জাহাজ রেঙ্গুন পৌছিবার দিন। সকাল হইতেই যাত্রীদের মধ্যে জিনিষপত্র গুছাইয়৷ পোটল"পুটলি বাধিবার বড় ধুম লাগিয়া গিয়াছে। ডাঙার জীবের প্রাণ কয়েকদিন জলের উপর থাকিয়াই একেবারে ক্টাপাইয়া উঠিয়াছিল, আজ আবার ডাঙায় নামিবার সম্ভাবনায় সকলেই উৎফুল্ল । যাহার এই তিন দিন পালি মুড়ি দিয়া শুইয়া থাকিয়াই কাটাইয়া দিয়াছে, তাহারাও আজ উঠিয় বসিয়াছে, সহযাত্রীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলিতেছে। যাহারা নূতন ব্রহ্মদেশ যাইতেছে তাহার পুরানো বাসিন্দার কাছে চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া মগের মুল্লুকের গল্প শুনিতেছে । পুরাতন প্রবাসীও নিজের বহুদিন-সঞ্চিত অভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়া বেশ একটা আত্মপ্রসাদ লাভ করিতেছে। জলের রং ফিকা সবুজ হইয়া আসিয়াছে, দিক্‌চক্রবালের কাছে তটভূমির অস্পষ্ট রেখা দেখা যায়। যাত্রীদের মধ্যে মহিলা যাহার, তাহারা এরই মধ্যে সব কাজকৰ্ম্ম সারিয়া নামিবার জন্য ফিটফাট হইয়। বসিতে পারিলে বাচেন । ছেলেমেয়েদের সাজসজ্জা এরই মধ্যে একরকম সারা হইয় গিয়াছে । কৰ্ত্তাদের কোনোই তাড় দেখা যায় না, কেহব। নিশ্চিন্ত মনে খবরের কাগজ পড়িতেছেন, কেহ চুরুট ফুকিতেছেন, এমন কি এক আধজন তাস থেলিবার জোগাড় পর্য্যস্ত করিতেছেন। গিন্নিদের তাড়া আসিলে বলিতেছেন, "রোস রোস, এখনও কম করে চার ঘণ্ট। দেরি আছে । তার ভিতর পঞ্চাশবার কাপড় ছাড়া হয়ে যাবে। এখনই কি জলে ঝাপিয়ে পড়ে সাতরে যেতে চাও?” ● মায়ার কেবিনেও গোছান চলিতেছিল। একলা মানুষ, কাজ বেশী নাই, কিন্তু তাও যেন অগ্রসর হইতে চাহিতেছিল না । মায়ার মুখ বড় গম্ভীর, কি যেন একটা ভাবনা তাহার মনে গভীর ছায়াপাত করিয়াছে, কিছুতেই ক্ষণমাত্র ও সেটার হাত হইতে তাহার নিষ্কৃতি নাই । অন্যমনস্কভাবে সে কাপড়-চোপড় পাট করিয়া স্কটকেসে ভরিয়া রাখিতেছিল। হঠাৎ কেবিনের দরজায় ঠক্ঠা করিয়া শব্দ হইল । মায়ার মুখে একটুখানি হাসি দেখা দিল । সে উঠিয়া আসিয়া দরজা খুলিয়া বলিল, “এখনও আমার ঢের কাজ বাকি, প্রায় ঘণ্টাপানেক লাগবে ।” আগন্তুক যে দেবকুমার তাহ বলাই বাহুল্য। সে বলিল, “যেমন-তেমন করে ঠেসে রেখে দিন না ? এর পর ত খুলে আবার গুছিয়ে রাখতেই হবে।” মায় হাসিয়া বলিল, “কিন্তু জিনিষগুলোর চিরদিনের মত শ্রাদ্ধপিণ্ডি হয়ে যাবে যে ! আপনারও বোধ হয় এখনও গোছান হয়নি? আপনার হতে হতে আমারও হয়ে যাবে।” দেবকুমার ক্ষীণ হান্ত করিয়া বলিল, “আমার আবার গোছান ? পুরুষমানুষকে ভগবান গোছান জিনিষ অগোছাল করবার জন্যই স্তষ্টি করেছিলেন । দেখেন না যে পরিবারে গৃহিণী খুব গোছাল হয়, কৰ্ত্ত হয় ঠিক তার উণ্টে । মেয়ে অগোছাল ঘেমন দেখতে বিশ্ৰী লাগে, গেছিল পুরুষমানুষ দেখলে তেমনি হাস্যকর লাগে ।” মায়া বলিল, “মন্দ নয়। নিজেদের দোষগুলোকেও গুণ বলে থাড়া করে দিচ্ছেন ? ভগবান আপনাদের নিশ্চয় ওরকম করে সৃষ্টি করেন নি, বাড়ীর আত্মীয়স্বজনে আদর দিয়ে দিয়ে ওরকম করে তুলেছে। বিশেষ করে মা-মাসীর দল ! আমাদের দেশের মেয়েদের ধারণা যে, ছেলেদের দিয়ে কোনো রকম কাজ করান ভয়ানক অশোভন ব্যাপার। তারা শুধু স্থলে গিয়ে পড়বে, এবং বাড়ী এসে আবদার করবে এবং সর্দারী করবে। তাই সব এ রকম ছেলে তৈরি হয়।”