পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা । তাহার কোন কথার লুকান কি অর্থ আছে, ইহাই ভাবিতে ভাবিতে মায়া ঘুমাইয়া পড়ে। প্রেমের সিংহদ্বারে এই তাহার প্রথম আগমন, ভয় এবং আনন্দ মিশিয়া এক আশ্চৰ্য্য অন্তভূতিতে তাহার বুক দুর দুর করিয়া কাপিতে থাকে । এতদিন সে কেবল ইহার নামই শুনিয়াছে উপন্যাসে, কাব্যে ; বন্ধুবান্ধবকে ইহা লইয়া ঠাট্টা করিয়াছে, চলচ্চিত্রে ইহার বিকাশ দেখিয়া হাসিয়াছে বা গোপনে চোখ মুছিয়াছে । কিন্তু নিজের জীবনে প্রেমের ছোয়াচ তাহার কখনও লাগে নাই। মাতা বাচিয়া থাকিতে এসব কথা চিন্তা করাই ত তাহার পাপ বলিয়া মনে হইত। যদিই-ব! কৈশোরের নিয়মে কথনও প্রভাস সম্বন্ধে তাহার কল্পলোকে কোনে রঙ্গীন চিত্র সে আঁকিতে বসিত, অল্পক্ষণের মধ্যে নিজের কাছেই নিজে অপরাধী হইয়। থামিয় ঘাইত। ছি ছি, হিন্দুর মেয়ের এ সকল কথা ভাবিতেও নাই । রেঙ্গুনে আসার পর তাহার অবশ্য মতের পরিবর্তন অনেক দিক দিয়াই ঘটিতেছিল। কিন্তু বিবাহের পূৰ্ব্বে ভালবাসা উচিত, কি অকুচিত, সে বিষয়ে মায় এখনও কিছু ভাবিয়া স্থির করিতে পারে নাই। রেঙ্গুনে আসিবার সময় মনে মনে অনেক সঙ্কল্প লইয়াই সে আসিয়াছিল । পিত। তাহাকে যতই পাশ্চাত্য শিক্ষ। দিন, সে নিজে যাহা ভাল বলিয়া বুঝিয়াছে, তাহা কখনও ভুলিবে না। সে নিরঞ্জনের মেয়ে যেমন, সাবিত্রীর তেমনই। একের খাতিরে অন্য জনের সকল শিক্ষাদীক্ষা কখনই বিসর্জন দিবে না, বিশেষ করিয়া মাতার শিক্ষাকেই যখন সে সত্য বলিয়া মনে করে। আহার সম্বন্ধে এতদিন পৰ্য্যন্ত সে খুব আচারবিচার রক্ষা করিয়া চলিয়াছে। পূজাপাৰ্ব্বণ প্রভৃতিতেও শ্রদ্ধাসহকারে যোগ দিয়াছে, যদিও অন্য সকল দিকে সাহেবীআনার অস্ত তাহার ছিল না । পূজা ইত্যাদিতে সে সত্যই বিশ্বাস করে কিনা, তাহা কখনও ভাল করিয়া ভাবিয়া দেখে নাই, ভাবিতে গেলে বিপদ হইতে পারে জানিয়াই যেন জোর করিয়া ভাবে নাই। কিন্তু নিরঞ্জন তাহাকে বিলাত পাঠাইতে চান, তাহ সে জানিত, bూసె= ) মহামায়া AMMA SAMMAMMMAMMMMMMMAMAMMMAAA AAAASASASS নিজেরও তাহার এখন কিছু অমত ইহাতে ছিল না । তাহার টাকার অভাব হইবে না, ইচ্ছামত বন্দোবস্ত করিয়াই সে বিলাতে থাকিতে পারিবে। আগে অাগে অনেক ভারতীয় মেয়েই ত এইভাবে আচার বঁাচাইয়া বিদেশবাস করিয়া আসিয়াছেন, সে কেন পরিবে না ? মোটের উপর অন্যেরা তাহাকে যতই মেমসাহেব বলিয়া ঠাট্টা করুক, সে জানিত সে হিন্দুর মেয়েই আছে । সাবিত্রী যদি আজ পরপার হইতে ফিরিয়াও আদেন, তবু কন্যাকে কোলে তুলিয়া লইতে র্তাহার কোনখানে বাধিবে না। কিন্তু সংগ্রাম মুরু হইল এইবার । বিবাহ-সম্বন্ধে স্বেচ্ছাচারিতাকে সাবিত্রী অত্যন্তই ঘৃণার চক্ষে দেখিতেন, এবং এ-বিষয়ে তাহার মতামত এমনই স্পষ্ট ছিল যে, ভুল করিবার সম্ভাবনামাত্রও সেখানে" ছিল, না । তাহার কন্যা হইয়। মায়া কি শেষে তাহাই করিবে ? শুধু তাহাও ত নহে! দেবকুমার কায়স্থ, সে ব্রাহ্মণ-কন্ত। হিন্দুশাস্ত্রমতে তাহাদের বিবাহ হইতেই পারে না । দেবকুমারকে বিবাহ করিতে হইলে চিরদিনের মত তাহাকে সনাতন ধৰ্ম্মের গণ্ডী ছাড়িয়া যাইতে হইবে । ইহা ত শুধু ধৰ্ম্মত্যাগ নহে, পরলোকবাসিনী জননীর সঙ্গে তাহার জন্মজন্মান্তরের বিচ্ছেদ । সাধারণত মাতা এবং কন্যার ভিতর যে সম্বন্ধটা থাকে, মায়া এবং তাহার জননীর সম্বন্ধটা তাহা হইতে কিছু অন্য ধরণের ছিল । সাবিত্রী সঙ্গন্ধে নিরঞ্জন ন্যায়বিচার করেন নাই, এ ধারণা এখনও মায়ার মন হইতে যায় নাই । সাবিত্রীর জীবন শেষ হইয়াছিল, অনাদর অবহেলার মধ্যে। নিজের জীবনে নিরঞ্জনের কৃত অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত করিতে মায় সঙ্কল্প করিয়াছিল । সত্য বটে সাবিত্রী এখন পরলোকে, স্বামীর অবুহেল বা কন্যার প্রায়শ্চিত্ত কিছুতেই তাহার কিছু আসিয়া যায় না, তবু মায়ার একান্ত ইচ্ছা ছিল, এই ব্রত হইতে কখনও ভ্ৰষ্ট হইবে না। কিন্তু প্রলোভনের প্রথম সাক্ষাতেই কি তাহার পরাজয় ঘটিল ? যতক্ষণ দেবকুমারের সহিত কথা বলিত, ততক্ষণ এ সকল ভয়, ভাবন সংশয় তাহার মনের কোথাও