পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

❖ ፅõ ബ ছায়াপাত করিত না, কিন্তু তাহা ভিন্ন আর সমস্ত সময়ই তাহার দুশ্চিন্তার সীমা থাকিত না । কি করিবে সে, কোন পথে যাইবে ? সম্মুখে কৰ্ত্তব্যের পথে দারুণ অন্ধকার, নিরাশা এবং বেদনা, মায়ার প্রাণ আতঙ্কে শিহরিয়া উঠিত । অন্য পথে অাশা ও আনন্দের রঙীন আলোতে উদ্ভাসিত কল্পলোক, ইহার দুৰ্দ্দমনীয় আকর্ষণ হইতে কখনও কি সে নিজেকে রক্ষ করিতে পারিবে ? ক্রমেই নিজের সম্বন্ধে তাহার সন্দেহ বাড়িয়া চলিয়াছিল। এই তিন দিনের ভিতরেই সে এক রকম স্পষ্টই বুঝিতে পারিতেছিল, ইহা ক্ষণিক মোহমাত্র নয়, এই আশ্চৰ্য্য অনুভূতি তাহার জীবনকে একেবারে স্পর্শমণির ছোয়ার মত আমূল পরিবর্তিত করিয়৷ ফেলিয়াছে। সপ্তাহমাত্র আগে যে মায় ছিল, তাহার সম্পূর্ণ মৃত্যু ঘটিয়াছে, আর তাহাকে ফিরাইয়া আনিবার কোনোউপায় নাই । এ-সকল ভাবনা ত তাহাকে সারাক্ষণ পীড়িত করিত, কিন্তু ইহা ছাড়াও তাহার অন্য ভাবনা ছিল । সম্প্রতি সেইগুলিই তাহার যথেষ্ট বেশী বেদনার কারণ হইয়া উঠিয়াছিল। নিজের মন বুঝিতে তাহার বিলম্ব হয় নাই, ভাল করিয়াই সে বুঝিয়াছিল। দেবকুমারের দিক হইতে মনকে ফিরাইবার আর তাহার উপায় নাই । নিজে সে নিঃশেষেই চিত্ত সমর্পণ করিয়াছে। তাহার ভবিষ্যৎ জীবনের সুখদুঃখ আর তাহার নিজের নিয়ন্ত্রিত করিবার সাধ্য নাই, সে ক্ষমতা এখন অন্যের হাতে চলিয়া গিয়াছে। এত শীঘ্র এমন ঘটনা যে ঘটিতে পারে তাহা এতদিন সে কবি ও ঔপন্যাসিকের ক্ষষ্টিতে ভিন্ন বাস্তবজগতে সম্ভব বলিয়াই মনে করিত না। কবির ভাষাতেই তাহার ক্রমাগত মনে হইতেছিল, “দৈবে যাহারে সহস বুঝায় সে ছাড় সে কেহ বোঝে ন কত্ব।” কিন্তু দেবকুমারের মনের কথা বুঝিবার তাহার কোনো উপায় ছিল না। সেও কি মায়ার প্রতি কিছুমাত্র আকৃষ্ট হইয়াছে, ন, ইহা ক্ষণিকের থেলামাত্র ? সে পুরুষ, সবেমাত্র বিদেশ হইতে ফিরিয়াছে ; সেখানে এরকম অভিনয় সদাসৰ্ব্বদাই চলিতেছে। ইহা ষে খেলামাজ, তাহা উভয় পক্ষই মানিয়া লয়, এবং খেলা ভাঙিয়া গেলে প্রবাসী—ভাদ্র, ১৩৩৭ - ৩৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড কেহই কিছু মনে করে না । ‘ফ্লার্টিং-ব্যাপারটাকে দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ একটা ব্যাপার বলিয়াই সেদেশে সকলে জানে। দেবকুমার যদি তাহাই মনে করিয়া থাকে ? মায়া শিক্ষিতা, বিদেশের হালচাল সবই জানে, দেবকুমার যদি আশা করিয়া থাকে মায়া জিনিষটাকে তাহারই মত হালকাভাবে গ্রহণ করিবে ? জাহাজে সময় কাটে না, সেই সময়টুকুর জন্যই কি দেবকুমার মায়াকে এতটা বন্ধুত্ব দেখাইতেছে। ইহার ভিতর আর কিছুই কি নাই ? যাতনায় যেন মায়ার কণ্ঠরোধ হইয়া আসিল, সে প্রাণপণে এই অসহনীয় চিন্তাকে মন হইতে দুর করিয়া দিল । এই ভাবনাই এখন তাহার মনে সকলের চেয়ে প্রবল হইয়া উঠিতেছিল, অথচ ইহার কোনে সমাধান তাহার হাতে ছিল না। দেবকুমার নিজে ধরা না দিলে মায়ার কোনো কিছুই জানিবার উপায় নাই । কিন্তু বৰ্ত্তমানের এই অমূল্য ক্ষণগুলিকে হেলায় বহিয়া যাইতে দিতে সে পারে না ; মায়া কাজ সারিয়া উঠিয়া পড়িল, রঙীন সজ্জায় নিজের লাবণ্যকে উজ্জলতর করিম ভাবনা-চিন্তাকে সবলেই যেন মন হইতে দূর করিয়৷ দিল । তাহার পর কেবিনের দরজায় তালা বন্ধ করিয়৷ ডেকের সিড়ির দিকে চলিল । মাঝপথেই দেবকুমারের সঙ্গে দেখা হইয় গেল। সে এরই মধ্যে পুরা সাহেব সাজিয়া ফিটফাট হইয় আসিয়াছে । মায়ার মনে হইল এত সুন্দর মাকুয ইতিপূৰ্ব্বে সে কখনও দেখে নাই। নিজের রূপের গৰ্ব্ব তাহার যথেষ্টই ছিল, কখনও সহজে সে কোনো মাছুষকে সুন্দর বলিয়৷ স্বীকার করিত না । দেবকুমারই প্রথম তাহাকে হার মানাইল । মায়া ভাবিল, দেবকুমার তাহার চেয়ে আরও কত সুন্দর, ইহার কাছে তাহার নিজের রূপ-লাবণ্যের আকর্ষণ কতটুকুই বা হইবে ? মনটা তাহার ভার হইয়া আসিল । নিজের অজ্ঞাতেই মুখের ভাবটাও একটু বিষন্ন হইয়া আসিল । দেবকুমারের চোখে সবটাই ধরা পড়িল, যদিও সে তাহার অর্থ ঠিক বুঝিতে পারিল না। জিজ্ঞাসা করিল, “আপনি কি আমার সাহেবী পোষাক দেখে বিরক্ত হলেন । এ বিষয়ে আপনার কোনো বিরুদ্ধতা