পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অন্তরে বাহিরে ক্রীতাশীষ গুপ্ত বাহিরে— সাইনবোর্ড-ওয়ালাটাকে দেওয়ার সময়ে অনেক চিস্তা করিয়াছি। পিছু চার চারটা পয়স করিয়া নিজের নামটা তাই অনেক ইতস্তত করিয়া বাদ দিয়াছি। কম পয়সায় নাম লিথান ঘাইবে এমন নামও পিতামাতা রাখেন নাই,- কুলকুণ্ডলিনীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় । চহার উপরে বাংলায় স্বত্বাধিকারী ন। লিপিয়া ইংরেজী কেতায় ‘প্রোঃ লিখিলে মোটমাট দাড়ায় যোলোটা অক্ষর, তাহার সহিত যদি যোগ করি M. A.তবে হয় আঠারোট, সদি করি এম্-এ, তবে হয় উনিশট। সৰ্ব্বশেষে, যদি নিজেকে ‘শ্ৰীমণ্ডিত করি, তাহা হইলে গিয় দাড়ায় কুড়িটাতে । এই সকলই বাদ দিয়াছি, পাচসিকা তানদাজ পয়সা লাচিয়াছে । মোহনলাল সাহা লেন, আর বিষ্ট, বহু ষ্টট এই দুইটি আট হাত চওড়া গলির মোড়ে, যে-কোনও চক্ষুষ্মান ব্যক্তিই 'দি গ্রেট ডিফারেনসিয়াল অন্নপূর্ণ। ষ্ট্রোস”-এর সাইনবোর্ড দেপিতে "পাইবেন। চাল, ডাল, তেল, ঘি হইতে আরম্ভ করিয়া কাগজ, কলম, দোয়াত, পেন্সিল, হেজ লিন, পোমেড, পাউরুটি, বিস্কুট, লেমনেড, বিড়ি, সিগারেট—সকলই পাওয়া যায়। যদি কিছু না মেলে, তবে পূৰ্ব্বাষ্ট্রে সংবাদ দিলে যত্বের সহিত মাল সরবরাহ করিয়া থাকি, ভেজাল দিই না একটুও। পরীক্ষা প্রার্থনীয়। খোলার ঘর, মাসে ছয় টাকা করিয়া ভাড়া । সামনে গোল নদম । কাদার উপর দিয়া ভাতের ফ্যান, অগস্তাকুড়ের আবর্জনা গড়াইয়া চলে। একখানা পুরু তক্তা নর্দমার এ ধার হইতে ওধার অবধি ফেলা আছে । কিছু দূরে একটা জলের কল, সকাল হইতে বেলা দশটা পৰ্য্যন্ত সেখানে অবিশ্রান্ত ভিড়। কোলাহল এবং গালাগালির বিরাম নাই। চারিদিকে খোলার বন্তি । সাইনবোর্ডট লিখিতে লোকটা অক্ষরচার্জ করিয়াছে। সকালবেলা, সবেমাত্র ঘুম হইতে উঠিয়া, "অন্নপূর্ণ। ষ্টোস”-এর ঝাপ খুলিয়া গঙ্গাজলের ছিটা দিয়াছি, এমন সময় সহদেব আসিয়া হাত কচলাইতে কচ লাইতে হাসিমুখে কহিল, ‘প্রাতোপেশ্লাম দা’ঠাকুর, শরীর গতিক ভাল ত?’ উপরের তাকে-রাখা একটা থামে সাদা রং করা গণেশ মূৰ্ত্তিকে নমস্কার করিতে করিতে জানিলাম যে, আজ যদি সহদেবকে ধারে পাচ সের চাল না দিই, তাহ। হইলে সে ওই নর্দমার উপর পড়িয়া গোহত্যা, ব্ৰহ্মহত্য। হইবে, এবং সে সকলের দরুণ ধাহ! কিছু পাপ সকলই নাকি আমাকে স্পর্শ করিবে । সহদেব ছিল কণ্ডাক্টার, মাসে উনিশ টাক মাহিন পাইত, চোখ দুইটা দেখিলে ভয় হইত, যেন ভিতরকার সমস্ত বন্ধন ছাড়াইয় তাহার। বাহির হইয়া আসিবে । সামনের গুটিতিনেক দাত নীচের পুরু ঠোঁটটা ছাড়াইয়৷ অগ্রসর হইয়া আসিয়াছিল। গাঢ় হলুদ সেইগুলার রং, সমস্ত মিলিয়া মনে হইত, যেন একটা হিংস্র রক্তলোলুপ জীব, যে-কোন মুহূৰ্বেই ঘাড় মট্কাইতে পারে । - সহদেব হাসিতে লাগিল, বলিল, “মাইরি দা’ঠাকুর, শালার আপিসে গেল মাসে পাচ পাচট টাকা ফাইন করে দিলে, তাইতেই ত ধার চাইছি, নইলে,-- আচ্ছা, তুমিই বল না, পিসে, সহদেব কি কোনদিন কারও ঠেয়ে এক পয়সা ধার করেছে, ন, কারও একমুঠো খেয়েছে । হাজার হোক একটা পিরিনসিপুল আছে उ ।' সহদেব বলিত, সে কায়েতের ছেলে, কুলীন কায়স্থের সন্তান সে,~ থার্ড ক্লাস অবধি পড়িয়াছে। বস্তির সরকারী পিসে কালীচরণ, ঘরামী এবং মহাশয় ব্যক্তি, সমস্ত শাস্ত্র সে জানে, ব্যাখ্যা করিতে