পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা } “এক শালার বাবু ধরে ফেলেছিল আর একটুকুন হ’লে দ’ঠাকুর, আরে কলকেতায় আছি আজ বিশ বচ্ছর— সহদেব কি তেমনি কঁাচ ছেলে ?” বলিয়া সে হা হা করিয়৷ হাসিতে লাগিল । রুমালট। পকেটে রাখিয় দিয়া আবার বলিল, “পাচ সাত শাল। তেড়ে এল, দিলে হারামজাদ ব্যাটার জামাটা ছিঁড়ে, এই দেখ ন দা’ঠাকুর—” বলিয়া, জামার ছিন্ন স্থানগুলি সে অত্যন্ত কাতর মুখ করিয়া দেখাইল । “তার পর এ-গলি, সে-গলি,—লে শীলার এখন কি কবি কর।” সহদেব অত্যন্ত গসিতে আরম্ভ করিল, সে হাসি আর থামিতে চায় না । থক্ করিয়া এক ড্যাল পথ ঠোট ডিঙ্গাইয়। চিবুকের উপর গড়াইয়| আসিল,—ডান হাতের জামার অস্তিনট। দিয়া সেট মুছিয়' ফেলিয়া সহদেব বলিল, “দা ও দিকিনি, দ ঠাকুর, নারকেল দড়িটে এগিয়ে, একবার বিড়িটে পরাষ্ট ।” তাহার কথ। কিছু বুঝি নাই ;-এতক্ষণ পরে প্রথম জিজ্ঞাস করিলাম, “কিন্তু সহদেব, ব্যাপারখান| কি বল দিকিনি পরিষ্কার করে ?” একট। প্রচণ্ড টানে বিড়ির মাথার আগুনটাকে তলায় নাম।ইয়া আনিয়, কণ্ঠস্বর করুণ করিয়া সহদেব বলিল, “আর থাকব না। এ শালার দেশে, দা’ঠাকুর,— এখানে ভাল মানুষের কদর নেই,—সন্ন্যাসী হ’ব । মাইরি বলছি, দা’ঠাকুর, আজই রাত্তির বেলা এখান থেকে চলে যাব, বিবাগী হ’ব । ওই যে গো তোমার অহীনবাবু ন ফহীনবাবু, তারই এগারো বারে বচ্ছরের ছেলেট, রোজ শিকি দিয়ে গাড়ী চড়ে ইস্কুলে ধায় আসে। দল আছে আবার ওদের । যখন টিকিটু কাটতে যাই, অমনি কোথেকে এসে উঠে পড়ে, টিকিট কাটা রেখে তেড়ে এলেই ঝুপ করে নেমে যায় । রোজ বলি, "যেদিন ধরতে পারবো, সেদিন ফাদ দেখিয়ে ছাড়ব ।’ তা ব্যাটাদের ধবৃতে গেলে চটপট, সরে পড়ে। কিন্তু কতদিন আর ফাকি দেবে ? আজ ধরলুম ওই তোমার অহীনবাবুর ছেলেকে, বাকী সব ক’টা পালাল । অন্তরে বাহিরে Գ Ֆ:Տ বললুম, 'বাছাধন, এবার কি হয় ? ছোড়াট। চোখ রাঙিয়ে বলল, . ‘ভালো চাও ত ছেড়ে দাও বলছি।’ আরে, মুনিবের নিমক খাই, রোজ রোজ চালাকী ! কিন্তু এত করি শাল মুনিবের জন্তে, তব বলে, তোমাকে দিয়ে কাজ হবে না, দূর করে দেব একদিন । আর ছোড়াটা কি বদমাইস্ দেখ দা’ ঠাকুর | একফোট বিষ নেই, কুলোপান চক্কর! গাড়ী ছাড়ল ফল ইম্পিড়ে, শালার ছেলেকে বললুম, “এইবার ঠ্যালাগান বোঝ –আস্তে আস্তে ধরে করে এক ধাক্কা, –পড়ল চাকার তলায়। রাস্তা গেল ললে লাল হয়ে—হুররে— রে— । দা ও দিকিনি, দা’ঠাকুর, একটা কঁচি সিগরেট, একটু মুখ বদলাই ।” বাহিরের আকাশ বৈশাখের শুকুন। মেঘে ক'লোয় কাল হইয় গেছে । ঝড়ের সম্মুখের উড়িয়। আসে হা হা করিয়া, ধূলার কণাগুলা চোখে মুখে আসিয়া লাগে, যেন কাহাকেও ক্ষমা করিবে না । সহদেব সিগারেট ফুকিতে লাগিল। বলিল, “আজই যাচ্ছি, দা’ঠাকুর, ছিচরণে কত অপরাধ করে গেম, কিছু যেন মনে কোরোনি ।” সেই ছেলেটির কথা মনে পড়িল, অহরহ কত ছুটাছুটি করিতে দেখিয়াছি কাছাকাছি রাস্ত দিয়া, সারাদিনের মধ্যে কত অসংখ্যবারই না তার উল্লাসচঞ্চল খেলাধুলা চোখে পড়িয়াছে, উজ্জল, সঙ্কোচহীন, পৃদ্ধিদৃপ্ত দৃষ্টি,— সপ্রতিভ হাস্যমুখর বাক্য । ছাতটি। করিয়া উঠিয় দাড়াইলাম, দোকানের ঝাপ বন্ধ করিয়া অহীনবাবুর বাড়ী গেলাম, থানায় গেলাম। ঘণ্টাখানেকের পরে দারোগা আসিল, কনেষ্টবল আসিল । আস্তিন গুটাইয়া সহদেব বলিল, “ওই বক্তগত বামুন শালাকে খুন করে ফার্সী যাব।” মারলুম জোর হাতে আকাশে আকাশে মেঘের খেল, বিদ্যুতের খেলা, স্রেফ খেলা, শুধু খেল, দুই একটা বাজ পড়ে না, ডাকেও না, আকাশ যায় পরিষ্কার হইয়া !