পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লবণ-রহস্য শ্ৰীযোগেন্দ্রমোহন সাহা, এম-এসসি দীনতম ভিখারীর পূর্ণকুটার হইতে অতুল ঐশ্বৰ্য্যপূর্ণ রাজপ্রাসাদ পৰ্য্যস্ত সৰ্ব্বত্রই যেমন লবণের সমান ব্যবহার ও সমান আদর, তেমনি এই বিরাট বিশ্বের রন্ধ, অন্ত্ররন্থ প্রায় সকল স্থানেই লবণের অস্তিত্ব দেখিতে পাওয়া যায় । যাবতীয় পাহাড়, পৰ্ব্বত, নদ, নদী, হ্রদ ও ঝরণা, সাগর ও মহাসাগর সর্বত্রই প্রকাশ্ব ও অপ্রকাশ্যভাবে মৃIনাধিক পরিমাণে লবণ বিরাজিত । অতি প্রাচীনকালেও লোকে লবণাম্বুরাশি স্বৰ্য্যতাপে শুষ্ক করিয়া লবণ সংগ্ৰহ করিত । অধিক লবণাক্ত বলিয়া নদনদীর জলের তুলনায় সমুদ্রaras strafra gaz (specific gravity ) «fr | এইজন্য মালপূর্ণ জাহাজ সমুদ্র হইতে নদীতে প্রবেশ করিবার পূৰ্ব্বে উহার ভার লাঘব করা হয়, নতুবা ডুলিয়! যাইবার বিশেষ ভয় থাকে । কিন্তু লবণ কোপ হইতে কি প্রকারে আসিল ? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হইলে পুথিবীর শৈশব-ইতিহাসের আলোচনা করা অবিশ্ব্যক । ভূতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতগণ বলেন, আমাদের এই স্নজল সফল শস্যশ্যামলা পুথিবী সৃষ্টির প্রারম্ভে রক্ত-তপ্ত গলিত গোলাকার বিরাট বস্তু-পিগু মাত্র ছিল । সপ্তসমূদ্রের জল সেদিনে পুঞ্জীভূত তপ্ত ধন বাষ্পাকারে এই পি গুকে চারিদিকে বেষ্টন করিয়৷ ছিল । পর এমেই শীতল হইতে ঐ মেঘ হইতে পতিত জলের সঞ্চার আরম্ভ হইল । বলা বাহুল্য, এই জল বিশুদ্ধ ও পরিশ্রুত ছিল । বস্তুতঃ, অনেক ভূতত্ত্ববিৎ পণ্ডিত অহুমান করেন যে, সেই স্বপ্রাচীন যুগের সাগর-সলিল নিৰ্ম্মল ও বিশুদ্ধ ছিল এবং ক্রমশঃ লবণ-দুষ্ট হইয়াছে । তাহার আরও বলেন যে, সৃষ্টির প্রারম্ভ হইতেই পৃথিবীর স্তরে স্বরে লবণ রহিয়াছে । পুষ্টির জলে তাহ ধৌত হইয়া ক্রমশঃ সাগরে আসিয়া সঞ্চিত হইতেছে। সূৰ্য্যতাপে সাগরের জল অদৃশু লঘু বাম্পে বত লাগিল এবং উহার বুকে পরিণত হইয়া আকাশে উঠিয় মেঘের আকার ধারণ করিতেছে। এই মেঘ বায়ু-ভরে পাহাড়-পৰ্ব্বতে গিয়া তথাকার শীতল বায়ুসংস্পর্শে আসিয়া পৃথিবীতে বারিপাত করিতেছে । এই জল পুনরায় লবণাক্ত হইয়। নদনদীপথে সাগরে গিয়া মিশিতেছে। এই চক্রবং পরিবর্তন সৃষ্টির আদি হইতে অবিরাম চলিয়া আসিতেছে ও অনাগত অনন্ত ভাবী কালেও চলিবে । অথচ প্রতিবারেই লবণ পশ্চাতে পড়িয়া থাকে এবং প্রতি জলধারাই সাগরের বকে কিছুনা-কিছু লবণ বহিয়া আনে। ভূতত্ত্ববিং পণ্ডিতগণ গণনা করিয়া বলিয়াছেন যে, প্রতি কয়েক হাজার বৎসরে সপ্তসমুদ্রের সমস্ত সলিল একবার বাষ্পাকারে উড়িয়া পৃষ্টি হইয়া পুনরায় সাগরে ফিরিয়া আসে । যুগযুগান্তব্যাপী এই অপচয় সত্ত্বেও পাহাড় পৰ্ব্বত খনি গঙ্গবর প্রভৃতিতে এখনও এত লবণ আছে যে, আরও কোটি বৎসরেও তাহ নিঃশেষ হইবে না । কিন্তু এখনও সাগরসলিল ‘পূর্ণ লবণাক্ত’ (saturated with salt) es RtR i কিন্তু অবশেষে এমন একদিন আসিবে যখন মহাসাগরের লবণ-তৃষ্ণার বিরাম হইবে—সামান্য পরিমাণ লবণও আর সে জলে দ্রবীভূত হইবে না। ফলে এই হইবে যে, সাগরের তলদেশে ও তীরভূমিতে স্তরে স্তরে দানাদার লবণ সঞ্চিত হইতে থাকিবে । জল এত গাঢ় হইবে যে, তাহাতে মৎস্য, কুৰ্ম্ম, কচ্ছপ, তিমি প্রভৃতি যাবতীয় প্রাণীর পক্ষে নিমজ্জিত হইয়া বাস করা অসম্ভব হইয়া উঠিবে। তাহারা জলের উপর ভাসিয়া বেড়াইবে ও অকাতরে মাতুষের হাতে প্রাণবিসর্জন করিবে। ঝড় বৃষ্টিতে জাহাজ ডুবিলেও সে জলে মাচুর্য ডুবিয়। মরিবে ন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হইবে এই যে, তখন হইতে ক্রমে নদনদী, খালবিল প্রভৃতির জলও লবণাক্ত হইতে থাকিবে ও আজিকার সাগরজলের ন্যায় তাহাও মানুষের পক্ষে অপেয় হইয়া পড়িবে। 缘