পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] অনেকেই হয়ত শুনিয়া আশ্চৰ্য্যাম্বিত হইবেন যে, সমুদ্রের লবণ দ্বারা পৃথিবীর বয়স নিৰ্দ্ধারণ করা যায়। অধ্যাপক যলী (Joly ) অতি সহজ উপায়ে তাহ সম্পাদন করিয়াছেন। পূর্বেই বলা হইয়াছে, সাগরের জন্মের সময় উহার জল বিশুদ্ধ ছিল এবং বৃষ্টির জলে পাহাড় পৰ্ব্বতের লবণ ধৌত হইয়া নদীপথে সাগরে গিয়া পড়িয়া উহার জল ক্রমশঃ লবণাক্ত হইয়া উঠিয়াছে । অধ্যাপক জলী প্রথমত: রাসায়নিক পরীক্ষ দ্বারা পুথিবীর সমস্ত মহাসাগরের জলে কি পরিমাণ লবণ এখন আছে এবং বৎসরে প্রধান প্রধান নদনদীর জলের সঙ্গে কি পরিমাণ লবণ সাগরে গিয়া সঞ্চিত হয় তাহ নিৰ্দ্ধারণ করিয়াছেন । র্তাহার গণনা মতে পুথিবীর বয়স ১০কোটি হইতে ২০কোটি বৎসর বলিয়া অনুমিত হইয়াছে। সাগরের জলে লবণের পরিমাণ শতকরা তিন ভাগের চেয়ে কিছু কম । যদি এই জল পূর্ণভাবে লবণাক্ত হইত তাহ হইলে উহাতে শতকরা ৩০ হইতে ৪০ ভাগ লবণ থাকিত । সুতরাং দেগ। ধাইতেছে, এখন ও পৃথিবীর শৈশবকাল । পূর্ণভাবে লবণাক্ত হইতে পৃথিবীর এখনও নানাধিক দুই তিনশত কোটি বৎসর লাগিবে । একশত ভাগ সাগরজলে প্রায় তিন ভাগ লবণ আছে । পৃথিবীর প্রায় চারিভাগের তিনভাগ সমুদ্র অর্থাৎ সমুদ্রের বিস্তৃতি মোটামুটি প্রায় ১৪ই কোটি বর্গমাইল । গড়ে সমুদ্রের গভীরতা প্রায় পৌনে তিন মাইল । স্বতরাং সাগরপুষ্ঠের প্রতি বর্গমাইল জলের নীচে প্রায় তিন কোটি ত্রিশ লক্ষ টন লবণ গলিত অবস্থায় আছে । এই হিসাবে সমগ্র সমুদ্রজলে লবণের পরিমাণ হয় s৫,৪০০,০০০,০০০,০০০,০০০ অর্থাৎ চারিশত চুয়াম কোটি কোটি টন। সমস্ত ইউরোপের উপর এই পরিমাণ লবণ সমভাবে স্তুপীকৃত করিলে সেই স্তপের উচ্চতা হইবে চারি পাচ মাইল । ইহা কি কম বিস্ময়ের কথা ! অবশু সকল সমুদ্রের জলই সমান লবণাক্ত নহে । মরু-সাগরের ( Dead Sea ) জলে শতকরা সাড়ে পচিশ ভাগ লবণ। আমেরিকার যুক্তরাজ্যে ইউটার ( Utah ) লবণ-হ্রদও এই শ্রেণীর অন্তর্গত। এই হ্রদটি দৈর্ঘ্যে ৭৫ মাইল ও প্রশ্বে ৫০ মাইল। স্বতরাং ইহাকে সাগর লবণ-রহস্য ૧૨૧ --- -ر ----------------------- - - - - - - বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। এই হ্রদে মানুষ ডুবে না বরং অতি স্বচ্ছন্দে জলের উপর ভাসিয়া বেড়াইতে পারে । এই শ্রেণীর হ্রদ স্বৰ্য্যতাপের প্রভাবে শুষ্ক হইয়া গেলে প্রভূত পরিমাণে লবণ তলদেশে পড়িয়া থাকে। কালের প্রভাবে এই লবণস্তরের উপর মাটি চাপ পড়িয়া খনির হুষ্টি হয় । আজকাল যে-সকল লবণের খনি আবিষ্কৃত হইয়াছে তাহদের উৎপত্তিও বোধ হয় এই রূপেই হইয়াছে । * পুথিবীর কোন কোন অংশে যে-সকল বিরাট সৈন্ধব বা সিন্ধু লবণের জমাট খনি দেখিতে পাওয়া যায় তাহা অতীব বিস্ময়কর। জাৰ্ম্মেনীর থ্রাস্ফুট নামক স্থানে লবণের যে, স্তর আছে, তাহ কোন কোন স্থানে অদ্ধ হইতে এক মাইল পুরু । অষ্ট্রিয়ার ভিলিংস্কাতে যে লবণ স্তর আছে তাহ। ماهه ويين মাইল, প্রস্থে ২০ মাইল এবং গভীরতায় গড়ে ১,২০০ ফুট হইলেও, অনেক স্থলে তাহ ৪,৬০০ ফুটেরও অধিক। এখানকার লবণের খনিগুলি সম্ভবত পৃথিবীর মধ্যে সৰ্ব্বাপেক্ষ আশ্চৰ্য্যজনক । এখানে জমাট লবণ কাটিয়া সুরঙ্গ করিয়া সেই পথে ভিতরে যাতায়াতের স্ববিধা করা হইয়াছে । খনির অভ্যস্তরে শুভ্র ঝলমলে চকচকে লবণ-স্তর খুদিয়া অসংখ্য গহবরের স্থষ্টি করা হইয়াছে। মাঝে মাঝে বহু উজ্জল উন্নত স্তম্ভরাজি সেই সকল গহবরের ছাদে সংযুক্ত হইয় যে অপূৰ্ব্ব শোভার কষ্টি করিয়াছে তাহা বৰ্ণনাতীত । এই খনিগর্ভে প্রায় ৩০ মাইল পরিমিত স্থান ব্যাপিয়া এইরূপ শতাধিক কক্ষ এক বিরাট গোলকধাঁধার স্বষ্টি করিয়াছে। পাতালের এই লবণপুরী ৫ হইতে ৭ তালা বিশিষ্ট । প্রত্যেক তালাতেই অসংখ্য খিলানযুক্ত প্রকোষ্ঠ আছে। কক্ষ হইতে কক্ষাস্তরে ও একতালা হইতে অন্য তালায় যাইবার জন্য লবণের সিড়ি রহিয়াছে। শুধু তাহাই নহে। সেই পাতালপুরীতে লবণ খুদিয়া একটি বিশাল খৃষ্টীয় ভজনালয় প্রস্তুত করা হইয়াছে। এই গির্জার বেদী, আসন, আসবাব, দরজা, মহাপুরুষেদর মূৰ্ত্তি প্রভৃতি যাবতীয় জিনিষ লবণেই প্রস্তুত । ইহার নাম সেণ্ট এণ্টনীর গির্জা । ১৬৯৮ খৃষ্টাব্দে ইহা নিৰ্ম্মিত হয় ।