পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২ প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড এই প্রকার মনোবৃত্তির উচ্ছেদ করিতে না পারিলে আমরা কিছুতেই আমাদের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী সভ্য মানবজাতির সহিত প্রতিযোগিতায় এই ভীষণ জীবনসংগ্রামের দিনে আত্মরক্ষা করিতে পারিব না, এখন এই কথা প্রত্যেক হিন্দু নরনারীকে বুঝাইতে হইবে।-- এই মহাভিত্তির উপর অকম্পিতপদে দাড়াইয়া সৰ্ব্বাগ্রে আমাদিগকে করিতে হইবে—গ্রামে গ্রামে নগরে নগরে পল্লীতে পল্লীতে জাতীয়ভাবে স্ত্রীশিক্ষা প্রবর্তন, সীতা সাবিত্ৰী দময়ন্তী, লোপামুদ্রা অরুন্ধতী মৈত্রেয়ী গাগীর স্থায় ললনাকুলললামভুত নারিগণের পুণ্যপাদধূলিনিবহে পুণ্যতম এই ভারতে প্রত্যেক নারীই শিক্ষায় দীক্ষণয় চরিত্রে সাহসে বিজ্ঞানে ও আধ্যাত্মিকতাসম্পদে সমগ্র পৃথিবীতে মাতৃত্বের ভগিনীত্বের দুহিতৃত্বের ও সর্বাপেক্ষ পূহনীয় মনুষ্ঠত্বের সমুজ্জ্বল আদর্শ স্বষ্টি করিয়া এই পাপতাপ বৈমনস্ত বিষাদগ্ৰস্ত সংসারকে নন্দনকাননে পরিণত করিতে পারেন, তাহারই জন্ত আমাদিগকে কণয়মনোবাক্যে কঠোর উদ্যমের সহিত কাৰ্য্যক্ষেত্রে অগ্রসর হইতে হইবে ।-- ঞ্জিতেন্দ্রিয়তার সঙ্গে দৈহিকবলের সমাবেশ ব্যতিরেকে স্বরাজলাভের কোন উপায় অাছে বলিয়া আমার মনে হয় না, প্রতি গ্রামে প্রতি নগরে প্রতি পল্লীতে আমাদিগের বালকগণের গুপ্ত ব্যায়ামশালা স্থাপিত করিতে হইবে লাঠি, ছুরি ও তরবারি প্রভৃতি অস্ত্রনিচয়ের কৌশলপূর্ণ চালনার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করিতে হইবে, শুধু বালকগণকে নহে—আমাদিগের বালিকাগণও যাহাতে এই সকল শিক্ষণ পায় তাহার জন্ত বিশেষ চেষ্ঠা করিতে হইবে । বাংলার পল্লীতে পল্লীতে প্রাতঃকালে ও সন্ধ্যার সময় বালক বালিকা, যুবক যুবতী, ব্রাহ্মণ ক্ষত্ৰিয় বৈহু শূদ্র ও তথাকথিত নীচজাতির সমর্থ ব্যক্তিমাত্রকে দেবমন্দির বা ভজর্ণমন্দিরে সমবেত হইতে হইবে, তথায় বিশুদ্ধভাবে দেহমনকে সংস্কৃত করিয়া সকলে মিলিত হইয়া শ্ৰীভগবানের নাম লীলা ও গুণমহিমার কীৰ্ত্তণ করিতে হইবে, গ্রামের নগরের জনপদের প্রত্যেক সাধারণ জলাশয়ে জাতিবর্ণনিধির্বশেষে সকলকেই জলগ্রহণ করিবার অধিকার দিতে হইবে, সাধারণ দেবমন্দিরে হিন্দুমাত্রেই প্রবেশ করিয়া যাহাতে দেবদর্শনের সুবিধা পায় তাহার ব্যবস্থা অচিরেই করিতে হইবে । এই সকল কায্যের নামই—হিন্দুসংগঠন। কায্য শৃঙ্খলার সহিত সন্ত শীঘ্র অনুষ্ঠিত হইবে আমাদিগের স্বরাজ ততই নিকটবৰ্ত্তী হইবে, একথা যেন সকল হিন্দুর মনে সৰ্ব্বদা জাগারুক থাকে । শ্রীপ্রমথনাথ তর্ক ভূষণ শিশুর ভয় ভীর বলিয়া বাঙ্গালীর একটা অপবাদ অাছে ; অনেকের ধারণা এই দোধটি তাহার জন্মগত । কথাটা এই হিসাবে ঠিক যে, যে পারিবারিক শিক্ষার আওতায় সে লালিতপালিত হইয়াছে, সেই সব অবস্থা ও ব্যবস্থার ভিতর যাওয়া-না-যাওয়া তাহার ইচ্ছাধীন ছিল না, এই মাত্র । কিন্তু এই অবস্থা ও ব্যবস্থা আমাদের দীর্ঘ যুগের জাতীয় কুশিক্ষার ফলে এরূপভাবে পরিণতি লাভ করিয়াছে যে, আমরা ইহাকেই স্বাভাবিক বলিয়া মনে করি ; এবং ইহাদের প্রভাবে শিশুদের যে-সকল মনোবৃত্তি স্বঃ হয়, সেগুলিও শিশুদের জন্মলব্ধ বলিয়া মানিয়া লই। বস্তুতঃ কোন একটি বিশেষ মনোবৃত্তি লইয়া কোন শিশু জন্মগ্রহণ করে না। পারিপাশ্বিক অবস্থাই মনোবৃত্তির স্বষ্টি করে।... যে উপায়ে ভবিষ্যতে আমরা একটি সুস্থচিত্ত সৎসাহসী জাতি গঠন করিতে পালি,—সকল দিক বিবেচনা করিয়া তাহার একটি বিধিমত ব্যবস্থা করিতে হইবে । তাঁহা করিতে হইলে সৰ্ব্বাগ্রে দেখা উচিত—আমাদের আসল গলদ কোথায় ? এই গলদের অনুসন্ধান করিতে হইলে শৈশবে এমন কি অতি শৈশবে আমরা কিরূপ শিক্ষ। পাইয়াছি এবং আমাদের শিশুরা এখনও কি শিক্ষণ পায়, তাহ বিশেষরূপ্লে পরীক্ষা করিয়া দেখিতে হইবে । কারণ পাঠশালায় যাইবার আগেই ভয়, ভালবাসা, হিংসা, ক্রোধ প্রভৃতি বৃত্তি লইয়া শিশুচিত্তের একটি মোটামুটি গড়ন স্থির হইয়া যায় ; এবং একবার ঠিক হইয়া গেলে, ইচ্ছামত তাহাকে অন্তভাবে লইয়া যাওয়া অতিশয় কষ্টসাপেক্ষ ; এমন কি, একরূপ অসম্ভব বলিলেও চলে । সকলেই জানেন, দুঃস্ত শিশুকে শাসনাধীন করিবার জন্য ভুত, প্রেত, জুজুর আশ্রয় গ্রহণ করা হয় । ইহ। যেমনি সহজ তেমনি জনপ্রিয় । শিশু-চিত্তের উপর এই সব বীভৎস রস যে কি অনিষ্টকর প্রভাব বিস্তার করে, তাহা অনেকেই জানেন না, অথবা জানিয়াও জানিতে চাহেন না। সহজ উপায়ে কায্যোদ্ধারের চেষ্টায় আমরা ভুলিয়। যাই যে, মে-জুজুর কাল্পনিক মুৰ্ত্তি আমরা শিশুর মনে আঁকিয়া দিই, সেই জুজুই সত্যকার মূৰ্ত্তি পরিগ্রহ করিয়া ভবিষ্যৎ জীবনে পদে পদে তাহার পপ আগলাইয়। দাড়ায় --- আধুনিক বৈজ্ঞানিকের বলিয়া থাকেন যে, ভয়ের স্বাভাবিক হেতু সংপ্যায় অতীব অল্প । বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার দ্বারা জানা গিয়াছে যে, উচ্চ শব্দ ও আশ্রয়চুতি এই দুইটিই ভয়োৎপাদনের একমাত্র অকৃত্রিম কারণ । অন্যাস্য যে-সমস্ত কারণে শিশু ভয় পায়, তাহ সমস্তই কৃত্রিম ; এবং পারিপাশ্বিক অবস্থার প্রভাবে সেগুলি ভয়ের কারণ হইয়া দঁাড়ায়।... সাপ, ব্যাঙ, কুকুর, অন্ধকার, অগ্নি, ভূত, জুজু, পুলিশ সাহেব, এদের যে-কাহাকেও অতি-শিশুর সামনে ধর, সে ভয় পাইবে না । কুকুর দেখিয়া শিশু ছুটিয়া যাইতেছে,—কুকুর উচ্চশব্দে চীৎকার করিয়া উঠিল,—-চীৎকার শুনিয়া শিশু ভাত হুইল । পরে কুকুরের সহিত আবার তাহার সাক্ষাৎ হইল ; কুকুর তখন চীৎকার করিল না ; কিন্তু তবুও শিশু তাহাকে দেখিয়াই ভয় পাইল—ইহার কারণ কি ? কুকুর ও উচ্চশব্দ এই দুইটি তাহার সম্মুখে উপস্থিত হওয়াতে, উচ্চ শব্দের ভয় স্বষ্টি করিবার যে স্বাভাবিক শক্তি আছে, শিশু-মন সে শক্তি কুকুরে আরোপ করিয়াছিল। তাই দ্বিতীয়বার কুকুর শব্দ না করিলেও প্রথম উচ্চশব্দজনিত যে প্রতিক্রিয় শিশুর মনে জাগরকে হইয়াছিল এ ক্ষেত্রেও তাহাই হইল। এরূপে কুকুর সদৃশ যে কোনও জন্তুতে, এমন কি, কোনও রোমশ নিৰ্জ্জীব পদার্থেও ঐ প্রতিক্রিয়৷ তারোপিত হইতে পারে। ফলে শিশু ঐক্কপ কোনও জন্তু বা বস্তু দেখিলেই ভীত হইবে । অগ্নি দেখিয় শিশু তাহ ধরিতে চলিল, জননী উচ্চ চীৎকার করিয়। তাহাকে নিবারণ করিলেন । শিশুর চিত্ত তখন অগ্নিই সম্পূর্ণ রূপে অধিকার করিয়া আছে। তাই উচ্চ চীৎকুারজনিত যে স্বাভাবিক ভয় শিশুর মনে উদিত হইল, সে অগ্নিতেই তাহ আরোপ করিয়া বসিল । সেই হইতে তাহার মনে অগ্নিভয় স্বল্প হইল ।... অধিকাংশ স্থলেই কোন একটি উচ্চশব্দ লক্ষ্য করিয়া ঐ ভূত ডাক্‌চে—ধরে নিয়ে যাবে’ প্রভূতি বলা হইয়া থাকে। উচ্চশব্দ শুনিয়াই শিশুরা ভীত হইয় পড়ে—ভুত, জুজু তাহাদের ভয়ের স্বষ্টি করে না 1••• বে ব্যক্তি অসাবধানে কোলে লইয়া বা কোল হইতে নামাইয়া, বাকানি দিয়া অথন্স লোফালুফি করিয়া শিশুদিগকে আশ্রয়চুতির ভয়ে ভীত করিয়া গেলেন, ভবিয়াতে আশ্রয়চুতির ঐসব কারণ বিদ্যমান ন৷