পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳԵ-Հ অবশিষ্ট সহস্ৰ সহস্র মুসলমানের পক্ষে উর্দুই কথ্যভাষা ছিল। অথচ অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ পৰ্যন্ত ভারতীয় মুসলমানেরা উর্দুতে সাহিত্য স্বষ্টি করিতে, ইতিহাস রচনা করিতে, চিঠিপত্র ও আদালতের কার্য্যাবলী লিখিতে ঘৃণা করিতেন ; বেতনভোগী কেরানী দ্বারা এসব কাজ ফারসী ভাষায় করা হইত। অর্থাৎ ভারতীয় মুসলমানদের নিজস্ব সাহিত্য ছিল না । আওরঙ্গাবাদ নগরবাসী ওয়ালী ( ১৭১০–৩০ ) প্রথম উর্দ পদ্য ভদ্রসমাজে অধিক প্রচার করেন এবং পঞ্চাশ যাঠ বৎসর পরে তাহাই সাৰ্ব্বজনীন হইয়া উঠে । দাক্ষিণাত্যে ওয়ালীর অনেক পূৰ্ব্বে রাজা উজীর রেথ তায় পদ্য লেখা আগৌরবের বিষয় মনে করিতেন না, কিন্তু এই রীতি উত্তর-ভারতে আসে নাই । হিন্দু ও মুসলমান ধৰ্ম্মের মধ্যে ঘাত-প্রতিঘাতের ফল এই যে এত শত বৎসর ধরিয়া হিন্দু মুসলমান একই দেশে একই রাজার অধীনে বাস করিয়া আসিয়াছে, ইহার ফলে এই দুই ধৰ্ম্ম ও সমাজের মধ্যে পরস্পরের কি কি প্রভাব, কি কি আদান-প্রদান ঘটিয়াছে ? প্রথমে ইহারা শত্রু ছিল, একের সহিত অপরের অস্তিত্বও যেন অসম্ভব, প্রকৃতির নিয়মের বিরোধী । কিন্তু আট শত বৎসরেও একে অপরটিকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে নাই, লোপ করিয়া দেয় নাই। দুইজনেই জীবিত আছে, কিন্তু অশেষ পরিবর্তন গ্রহণ করিয়া । শিখ জাতির বিখ্যাত ঐতিহাসিক কানিংহাম মুসলমান-বিজয়ের নৈতিক ফল এইরূপে বর্ণনা করিয়াছেন – “এই নবাগত জাতি বীরত্বে ক্ষত্রিয়দের অপেক্ষা কম নহে, অথচ ব্রাহ্মণদের শ্রেষ্ঠতা মানে না, এবং একেশ্বরবাদ প্রচার ও মূৰ্ত্তিপূজার অবৈধতা ঘোষণা করে । ইহাদের দৃষ্টাস্ত ও শিক্ষা ভারতীয় লোকদের মনের মধ্যে ক্রমে ক্রমে ঘাত-প্রতিঘাত করিতে লাগিল । * * * তাহার ফলে এদেশে নূতন নূতন কুসংস্কার গজাইয়া উঠিল, সেগুলি পুরাতন হিন্দু অন্ধবিশ্বাসের অনুরূপ ; প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৭ ASA SSASAS SSAS SSASAMMA AMSMeMAMMAeA AMMMMMAA ASASASA AAAA SAAAAA SAAMMAAAS ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড যেমন, পীর ও শহীদ, সাধু ও মৃত ধৰ্ম্মযোদ্ধ, কৃষ্ণ এবং ভৈরবের মতই অলৌকিক ক্রিয়া করিতে লাগিলেন । ভারতে আসিয়া মুসলমানেরা ঈশ্বরের একত্ব ভুলিয়া র্তাহার শত শত পার্থিব সেবক ও প্রিয়পাত্রকেই পরিত্রাণলাভের উপায় বলিয়া জড়াইয়া ধরিল, [ যেন বুদ্ধকে ছাড়িয়া বোধিসত্ত্বের আরাধনায় মন দিল । ] * * অপর দিকে, হিন্দু ও মুসলমান ধর্মের সংঘর্ষের প্রথম ফল হইল রামানন্দ কর্তৃক ১৪ শতাব্দীর শেষভাগে এক মিলিত উপাসক সম্প্রদায় স্থাপন । * * * ঈশ্বরের চোখে সব লোকই যে-সমান, এই মতের উপর তিনি জোর দিলেন, সব খুটিনাটি আচার ও বিভাগের চিহ্ন ছাড়িয়া দিলেন, এবং সৰ্ব্ব জাতের লোককে শিষ্য বলিয়া গ্রহণ করিতে লাগিলেন। পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ঈশ্বর প্রেমে মাতোয়ারা ভক্ত জোলা কবীর একদিকে হিন্দুর মূৰ্ত্তিপূজা ও ধৰ্ম্মশাস্ত্র, অপর দিকে কোরান এবং ধৰ্ম্মধ্বজিতার উপর আক্রমণ করিলেন, এবং প্রাচীন ধৰ্ম্মগ্রন্থের কঠিন ভাষা ছাড়িয়া নব্য চলিত ভাষায় ধৰ্ম্মপ্রচার করিতে লাগিলেন ।”

  1. *

একেশ্বরবাদের প্রচার কিন্তু স্যর উইলিয়ম হাণ্টার ও অন্যান্য ইউরোপীয় ঐতিহাসিকদের মত যে জাতিভেদ-বিরোধী এবং একেশ্বরবাদী যে-সব ধৰ্ম্ম মধ্যযুগের ভারতে জাগিয়৷ উঠে ইসলাম হইতে সেগুলির জন্ম—ইহা ইতিহাসের বিরোধী। আমরা জানি যে অতি প্রাচীন কাল হইতে যুগে যুগে হিন্দু সমাজে সকল ধৰ্ম্ম-সংস্কারক, উচ্চচেতা মনীষী এবং ভক্ত সাধক চেচাইয়া বলিয়াছেন যে তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর উপরে একমাত্র পরমেশ্বর আছেন, তিনিই সৰ্ব্বোচ্চ উপাস্ত ; প্রকৃত ভক্ত সাধকগণ সকলেই সমান, সকলেই একজাতের, সরল বিশ্বাস ও পবিত্র জীবন যাপন জমকাল বিপুল কৰ্ম্মকাণ্ড অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ । তাহারা সকলেই আরাধনা-পদ্ধতি ও মন্ত্রতন্ত্রকে সহজ এবং সাধারণের বোধগম্য করিতে চেষ্টা করিয়াছেন । এই যেমন, তামিল কবি গাহিয়াছিলেন –