পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] ছেলেধরা ԳԵ-Գ উঠল । কাত্তিক তার কবিতার খাতায় লিখলে— নারী, বুঝিতে না পারি কবে, একান্ত আমারি তুমি হবে, কত দিনে ওগো কত দিনে, পারচি নে আর পারচি নে । ছেলের বয়েস হু হু ক’রে বেড়ে চলল, কিন্তু বাপের আক্কেল হ’ল না। চরণ ঘোষ অন্য বিষয়ে সেকেলে হলেও ছেলের বিয়ে দেবার বেলায় একেলে। ব’লত— ভাল ক’রে লেখাপড়া শিখুক, রোজগার করুক, তারপর । কাত্তিক বেচার কি আর করে, লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাব্য উপন্যাস পড়ে, বন্ধুদের সঙ্গে প্রেমতত্ব চর্চা করে, থিয়েটার বায়োস্কোপ দেখে । এমন সময় শহরে ছেলেধরার উপদ্রব মুরু হ’ল । সে এক হুলস্থল কাণ্ড । আজ পঞ্চাশটা ছেলে হারিয়েচে, কাল পচাত্তরটা ; কিন্তু আশ্চৰ্য্য এই, যারা নিরুদ্দেশ হচ্চে তাদের নাম-ধাম কেউ টের পায় না । এদিকে লোকে থেপে উঠেচে, মোটর গাড়ি পোড়াচ্চে, রাস্তার মানুষকে ধ’রে ধ’রে ঠেঙাচ্চে। কাত্তিকের কলেজ বন্ধ, চরণ ঘোষ তাকে দেশে এনে রেখেচে । একদিন কাত্তিক বললে—“হিষ্ট্রির থান-দুই বই বঁটলোর কাছে রয়েচে, কলকাতায় গিয়ে নিয়ে আসি। চরণ বললে— ‘যাবি আর আসবি, দুপুরের গাড়িতে ফিরে আসা চাই।’ বেলা শেষ হয়ে এল, কিন্তু কাত্তিকের দেখা নেই। তার মা কান্নাকাটি আরম্ভ করলেন, কারণ আগের দিন না-কি তেষট্টিট ছেলে চুরি গেছে । অগত্যা কাত্তিকের খোজ ক’রতে চরণ ঘোষ আর আমি কলকাতায় চ’লে এলুম। বঁটিলোর ছোট ভাই সাটলো বললে, তার দাদা আর কাত্তিক ক’জন বন্ধুর সঙ্গে ওভারটুন হলে বক্তৃত৷ শুনতে গেছে। কিন্তু বাটলোর বোন তুবড়ি বললে— ‘শোনেন কেন, সব মিথ্যে কথা, বাবুরা অ্যাংলো-মোগলাই হোটেলে খেতে গেছেন, তারপর যাবেন বায়োস্কোপে, তারপর অনেক রাত্রে বাড়ি এসে দরজায় ধাক্কা লাগাবেন । সারা পথ কাত্তিকের বাপান্ত করতে ক’রতে চরণ ঘোষ আমার সঙ্গে হোটেলের খোজে झल्ल । হোটেলটি বড়-রাস্তার ওপর, আলোয় গন্ধে কলরবে ভরপুর। সায়েবদের আমরা বলি গোস্তথোর। খোর কাকে বলে বাঙালীর হোটেলে গিয়ে দেখে এস। খাপে খোপে ছেলে-বুড়োর দল টেবিলে বসে পেটে মাংস ঠসচে। বেচারাদের অপরাধ নেই, হাজার বছর ধ’রে শুনে এসেচে- এটা খেও না, ওটা খেও না। এখন যখন ভগবান স্ববুদ্ধি আর সুবিধে দিয়েচেন তখন জন্ম-জন্মান্তরের অতৃপ্তি চট্‌পট্‌ মিটিয়ে নিতে হবে। মনে মনে আশীৰ্ব্বাদ করলুম—আহা এদের ভোজন সার্থক হোক। এই যে এরা বাঘের মতন গবগব, ক’রে খাচ্চে, সেই সঙ্গে যেন বাঘের সদগুণও কিছু পায়। এদের গায়ে গত্তি লাগুক, মনে সাহস হোক, খোচা দিলে এরা যেন খ্যাক ক’রে নির্ভয়ে তেড়ে যেতে পারে। ঘরের শেষে একটা খাটো পরদার আড়ালে আমাদের শ্ৰীমানরা খাচ্চেন আর নানাপ্রকার তত্ত্বকথার আলোচনা করচেন। আমাদের দেখতে পান নি। চরণ ঘোষ তখন সবে গোসাই-মহারাজের কাছে মস্তর নিয়ে কঠি ধারণ করেচে, মাংসের গন্ধে কানে আঙুল দেয়। হোটেলের খোশবায় শুখে তার খুন চড়ে গেল, ছেলেকে মারে. আর কি। আমি তাকে জোর ক’রে থামিয়ে বললুম—“কর কি চরণ, নিজের ছেলেবেলার কীৰ্ত্তিকলাপ সব ভুলে গেলে ? সেই যে কাবাবের ঠোঙা নিয়ে গাব গাছে চ’ড়ে খেতে আর কোকিল ডাকতে তা কি মনে নেই ? ছেলের খাওয়া শেষ হোক, তারপর একটু আধটু ধমক দিও। আপাতত এদিকে চুপ টি ক’রে বোসে, একটু ঘোলের সরবং খেয়ে ঠাণ্ড হও, আর শ্রীমানরা কি আলোচনা করচেন তাই আড়ি পেতে শোনে। যদি কিছু অশ্রাব্য অলৌকিক কথা কর্ণগোচর হয়, তখন না-হয় গলা খাকার দিয়ে আত্মপ্রকাশ করা যাবে ।” ছেলেরা যে-ভাষায় আলাপ করছিল তার চার আনা বাংলা, আট আনা ইংরিজী, আর চার আন বোধ হয় ফ্রেঞ্চ, কারণ চন্দ্রবিন্দুর রেশ প্রায়ই কানে আসছিল। আন্দাজে বুঝলুম, আলোচ্য বিষয়টি হচ্চে কার কি রকম প্রণয়িনী পছন্দ। শেষটায় কাত্তিক টেবিল চাপড়ে বললে—‘থিওরি টিওরি আমার নেই ; আমি চাই এমন নারী যে বল্পর বাড়ুধ্যের মতন রূপসী, মিসেস চৌবের