পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহারাজ ছত্রসাল বুন্দেল৷ শ্ৰীকালিকারঞ্জন কানুনগো, এম-এ “ইক হাড় বুলী ধনী, মরা মহোবাপাল। সালত ঔরঙ্গজেব উর, বে দোনে ছত্রসাল ॥" ইতিহাসে ছত্রসাল ( সংস্কৃত শত্ৰু-শাল ) নাম সার্থক করিয়াছেন দুইজন। একজন—হাড়াবংশী বুদীরাজ ছত্রসাল, অপর জন—বুন্দেলখণ্ড-কেশরী মহারাজ ছত্রসাল বুন্দেলা । ইহারা দুইজনই ঔরঙ্গজেবের বুকে শল্য-স্বরূপ ছিলেন। প্রথম ছত্রসলি দারার পক্ষে সামুগঢ়ের যুদ্ধে বীরত্ব ও স্বামিধৰ্ম্মের পরাকাষ্ঠ দেখাইয়া সবংশে নিহত হইয়াছিলেন। দ্বিতীয় ছত্রসাল শিবাজীর মন্ত্রশিষ্য—সপ্তদশ শতাব্দীতে হিন্দুজাগরণের অন্যতম নেতা এবং স্বাধীনতার একনিষ্ঠ উপাসক। এই শেষোক্ত ছত্রসালের জীবনচরিত সংক্ষেপে আলোচনা করাই বর্তমান প্রবন্ধের উদ্দেশ্য ।

  • বংশ-পরিচয়

গহিরবার ক্ষত্রিয়গণ কাশী ও কনৌজে রাজত্ব করিতেন। সম্ভবতঃ ঘোরী স্বলতান শিহাবুদ্দীন কর্তৃক পৃথুিরাজের প্রতিদ্বন্দ্বী জয়চন্দ্রের পরাজয়ের পর গহিরবার বংশের এক শাখা বুন্দেলখণ্ডে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিল। এই সময়ে চন্দেল বংশীয়দের ক্ষমতা হ্রাস হওয়ায় নবাগত গহিরবারগণ তথায় সহজে আধিপত্য স্থাপন করেন । বুন্দেলা ও বুন্দেলখণ্ড নামের উৎপত্তি যাহা আমরা লাল কবির ছত্রপ্রকাশে পাই তাহা নিতান্তই বিশ্বাসের অযোগ্য। যাহা হউক পলাতক গহিরবারগণ রাজপুতানায় যেমন পরবর্তীকালে রাঠোর নামে পরিচিত হইয়াছেন, সেরূপ ইহাদের অন্য শাখা নূতন উপনিবেশে বুন্দেলা বলিয়া প্রসিদ্ধ হইয়া উঠিলেন এবং তাহাদের নামানুসারে যমুনার দক্ষিণ, মালবের পূৰ্ব্ব, এবং বিন্ধ্যপৰ্ব্বতের শাখা কৈমুর পৰ্ব্বতশ্রেণীর দ্বারা অৰ্দ্ধচন্দ্রাকারে বেষ্টিত দুর্গম অরণ্যাকীর্ণ ভূমি বুন্দেলখণ্ড নামে পরিচিত হইল। লালকবির মতে বুনোলখণ্ডে বুন্দেলাদের আদি রাজধানী ছিল ধরমপুর। ১৫৩১ খৃষ্টাব্দে এই বংশীয় প্রতাপরুদ্র ঞ্চ বা রুদ্রপ্রতাপ দেব ঔরছা নগরে রাজধানী স্থাপন করিয়া প্রায় সমস্ত বুনো" খণ্ড আপন অধিকারে আনিয়াছিলেন। রুদ্রপ্রতাপের প্রথম পুত্র ভারতীচন্দ্র, এবং অপুত্রক ভারতীচন্দ্রের মৃত্যুর পর রুদ্রপ্রতাপের দ্বিতীয় পুত্র আকবরের সমকালিক মধুকর শাহ ঔরছায় রাজা হইয়াছিলেন। রুদ্রপ্রতাপের তৃতীয় পুত্র উদয়াজীং মহোবায় সামন্তরাজরূপে রাজত্ব করিতেন। এই উদয়াজীতের প্রপৌত্রচম্পৎ রায় মহারাজ ছত্রসালের পিতা। মধুকর শাহের পুত্ৰ বীরসিংহ দেব ঐতিহাসিক আবুল-ফজলকে হত্যা করিয়া জাহাঙ্গীরের অনুগ্রহে ঔরছার রাজত্ব পাইয়াছিলেন। বীরসিংহ দেবের পুত্র জুঝার সিংহ চৌরাগড় লুটের অংশ সম্রাট শাজাহানকে দিতে অস্বীকৃত হওয়ায় তাহাকে দমন করিবার জন্য মোগল সৈন্য বুন্দেলখণ্ড আক্রমণ করিল। এই বিদ্রোহদমন-ব্যাপারে বাদশাহের অস্তররুদ্ধ ধৰ্ম্মান্ধতার প্রথম গৈরিকস্রাব মোগল-সাম্রাজ্যের ভাবী অমঙ্গলের স্বচনা করিল। ঔরছার সর্বাপেক্ষ বৃহৎ দেবমন্দির র্তাহার আদেশে মসজিদে পরিণত হইল । জুঝার সিংহের স্ত্রী-কন্যারা মুসলমান ধৰ্ম্মে দীক্ষিত হইয়া মোগল-অন্তঃপুরে চিরবন্দিনী হইলেন। জুঝার সিংহের এক পুত্র ও মন্ত্রী স্বধৰ্ম্ম ত্যাগে অস্বীকৃত হওয়ায় ঘাতকের খড়গে প্রাণবলি দিল। জুঝার সিংহের সহিত চম্পং রায়ের সম্ভাব ছিল না। কিন্তু বুন্দেলখণ্ডের এই দুর্দশা দেখিয়া তিনি গৃহবিরোধ ভুলিয়া গেলেন। মোগলসম্রাট বুন্দ্রেলার বিভীষণ দেবীসিংহকে ঔরছার গদীতে বসাইয়াছিলেন ( ১৬৩৫ খৃ: ) । কিন্তু শত্রু দ্বারা রক্ষিত

  • লালকবির বর্ণনানুসারে প্রতাপরুত্রের একপুত্র ছিল কীৰ্বতি শাহ । ইনি নিশ্চয়ই অবিনাস সরবাণী কথিত কালিঞ্জর-রাজ কিরত (কিরাত নয়) সিংহ---যিনি শের শাহের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া কীৰ্ত্তি । রাখিয়া গিয়াছেন।