পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] * 3 মহারাজ ছত্রসাল বুন্দেলা Rసె& অপরাধ মার্জনা করিয়া, পুরস্কার-স্বরূপ অঙ্গদ রায়কে এক হাজারী ও ছত্রসালকে তিনশত সদা মনসবদারের পদ দিলেন । পুরন্দরের সন্ধির পর সম্মিলিত মোগল ও মারাঠা সৈন্ত যখন বিজাপুর আক্রমণ করে, ছত্রসাল তাহাদের বিভিন্ন যুদ্ধনীতি বিশেষভাবে শিখিবার স্বযোগ পাইয়াছিলেন । পাচ বৎসর ( ১৬৬৫—১৬৭০ খৃ: ) মোগল-সরকারে চাকরি করিবার পর ছত্রসাল শেষে মহারাষ্ট্রবীর শিবাজীর কাছে পলাইয়া গেলেন । মির্জারাজা জয়সিংহ যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন চাকরির তাচ ছত্রসালের গায়ে লাগে নাই । ১৬৬৭, জুলাই মাসে র্তাহার মৃত্যুর পর ছত্রসাল সম্ভবতঃ পাঠান সেনাপতি দিলীর খার অধীনে দেবগড় আক্রমণ করিতে গিয়াছিলেন । এ যুদ্ধে ছত্রসাল আহত হন । কিন্তু পুরস্কারের বেলা তাহার ভাগ্যে কিছুই মিলিল না, অথচ সেনাপতির মনসব বাড়িয়া গেল । এই ব্যাপারে চাকরিতে র্তাহার ঘৃণা ও ধিক্কার জম্মিল । র্তাহার মুরবী জয়সিংহের প্রতি বাদশাহ ঔরঙ্গজেবের ব্যবহার দেখিয়াও র্তাহার চোখ খুলিয়াছিল । বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ঔরঙ্গজেবের " স্বধৰ্ম্মপ্রীতি পরধৰ্ম্মনির্যাতনের আকার ধারণ করিল। ১৬৬৯ খৃষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে সমস্ত স্ববাদারগণের প্রতি আদেশ জারি হইল যেন তাহারা নিজ নিজ প্রদেশে অ-মুসলমানদের পাঠশালা এবং দেবমন্দির ধ্বংস করেন । ঔরঙ্গজেব এ বিষয়ে পিতৃ-পিতামহের পদাঙ্ক অমুসরণ করিয়াছিলেন। তবে র্তাহার পূর্বে কোনো মুসলমান রাজার কোপদৃষ্টি হিন্দু গৃহস্থবাড়ীর বঁাশ-খড়ের ঠাকুরঘর পর্য্যস্ত পৌছায় নাই । বাদশা যে-হিন্দুসমাজকে মৃত মনে করিয়া কবরের ব্যবস্থা করিতেছিলেন তাহাই সহসা গা-ঝাড় দিয়া উঠিল । হিন্দুর এই পুনরুত্থানকে সপ্তদশ শতাব্দীর এক বিরাট শূদ্র-জাগরণ বলা যাইতে পারে। শূদ্র শিবাজীই এই নব-বোধনের পুরোহিত । আগ্রা হইতে প্রত্যাবর্তনের পর কিছুকাল নীরব থাকিয়া শিবাজী এ সময়ে ( ১৬৭১ খৃ: ) আবার ঔরঙ্গজেবের সহিত যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন । শিবাজীর এই শেষ যুদ্ধই প্রকৃত স্বাধীনতাসংগ্রাম—যাহার লেলিহান শিখা দক্ষিণী হাওয়ায় উত্তরাপথে বিস্তৃত হইয়া সম্রাটু ও সাম্রাজ্য উভয়কেই গ্রাস করিতে উষ্ঠত হইল। কুমার ছত্রসাল এই স্বাধীনতা-যজ্ঞে আত্মাহুতি দিবার জন্ত সহস্র বিপদ তুচ্ছ করিয়া শিবাজীর কাছে উপস্থিত হইলেন । সম্রাটের আশ্রয়, উন্নতির স্বপ্রশস্ত পথ, আত্মীয়-স্বজন এবং জন্মভূমি বুন্দেলখণ্ডের মায়া কাটাইয়া ছত্রসাল যে মহান ভাবের অনুপ্রেরণায় স্বেচ্ছাসেবকরূপে শিবাজীর সহায় হইতে চাহিয়াছিলেন তাহার উপমা ভারতবর্ষের ইতিহাসে বিরল }, দেশ ও জাতিনির্বিশেষে অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাড়াইয়। স্বাধীনতাকামীদের জন্য যুদ্ধ করিবার যে প্রেরণা রুসোর মন্ত্রশিষ্য ফরাসী যুবকগণ পাইয়াছিলেন, যে অজ্ঞাত আহবানে তাহারা মার্কিনের স্বাধীনতা-সংগ্রামে জর্জ ওয়াশিংটনের পতাকাতলে সমবেত হইয়া যুদ্ধ করিয়াছিলেন, একশত বৎসর পূৰ্ব্বে সেই একই প্রেরণাবলে ভাবপ্রবণ যুবক ছত্রসাল মহারাষ্ট্র শিবিরে ছুটিয়া • গিয়াছিলেন । ছত্রসালের নির্ভীক নিঃস্বাৰ্থ আত্মদানে শিবাজীর বুক আনন্দে ও আশায় পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল । তিনি মনে করিলেন, ছত্রসালকে নিজের কাছে রাখিলে তাহার স্বযশটুকু মহারাষ্ট্রই আত্মসাৎ করিবে । ভারত-আকাশের প্রভাতী তারকা সহাদ্রির নিবিড় অরণ্যানীর অন্তরালে ক্ষীণভাবে জলিয়া অস্ত যাইবে । অপরিচিত দেশে, অজ্ঞাত সমাজে ছত্রসালের প্রতিভার সহজ স্ফক্তি হইবে, না—তাহার প্রকৃত কৰ্ম্মক্ষেত্র বুন্দেলখণ্ড । তাই তিনি কয়েক দিন পরে ছত্রসালকে সস্নেহে জন্মভূমি বুন্দেলখণ্ডে ফিরিয়া যাইতে উপদেশ দিলেন । কেহ কেহ বলেন, শিবাজী ফণকা কথায় ছত্রসালকে বিদায় দিয়াছিলেন । র্তাহার এই প্রত্যাখ্যানে ছত্রসাল ভগ্নহৃদয়ে মারাঠা-দরবার হইতে প্রস্থান করেন । লালকfব কোথাও এরূপ আভাস দেন নাই—এই সঙ্কীর্ণঙার : ইঙ্গিত করিলে শিবাজীর প্রতি অবিচার করা হয় । ছত্রসালের শক্তি ও মহান ভাব শিবাজী নিজ স্বার্থে ব্যয় না করিয়৷ মধ্যভারতে স্বাধীনতা-যুদ্ধের আয়োজনে নিযুক্ত করেন । ছত্রসাল দেশ ও ধর্শের জন্ত যুদ্ধে নামিতে কৃতসঙ্কল্প, স্বতরাং শক্রমিত্রনিৰ্ব্বিশেষে প্রত্যেক হিন্দুকে এ কাধ্যে