পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুন্দরের স্থান কোথায় ? ঐমৈত্রেয়ী দেবী যখন কোন সৌন্দর্য্যে মন মুগ্ধ হয়, যখন কোনও কিছু ভাল লাগে তখন অনেক সময়েই হয়ত আমরা তার ঠিক কোনো কারণ বুঝাইতে বা নিজেও বুঝিতে পারি না। শুধু মাত্র অনুভব করিতে থাকি যে আমার ভাল লাগিতেছে। প্রকৃতির তরুলতায় পত্রে পুষ্পে গন্ধে বর্ণে অবিরাম এই যে সৌন্দর্য্যে চিত্ত মুগ্ধ হইতেছে, এই যে ' গোলাপ ফুলটি দেখিয়া সুন্দর লাগিল তাহা কেন লাগিল তাহার কোনও কারণের ব্যাখ্যা না জানিয়াও নিঃসংশয়চিত্তে বলিতে পারি যে, আমার ভালো লাগিয়াছে, বলিতে পারি এইটি সুন্দর, এইটি সুন্দর নয় ; বিকশিত পুপে প্রভাত আলোকে স্বন্দরের যে মাধুৰ্য্যকে অনুভব করি তাহাকে পরীক্ষা করিয়া বুঝিতে হয় না, স্পর্শমাত্র তাহার সমস্ত সৌন্দধ্য অন্তরে উদ্ভাসিত হইয় ওঠে। সেইজন্য ইহাকে যে অন্তভব করে সেই ইহার মাধুর্য্য উপলব্ধি করিতে পারে, যে করে না তাহাকে কথায় কোনও ব্যাখ্যা করিয়া বোঝানো কখনও সম্ভব হয় না। সৌন্দর্য্য সম্বন্ধে কোনও কথা ভাবিতে গেলে এই সৌন্দর্য্যবোধের কথাই প্রথম মনে হয় । তারপর যখন নানারূপে আমরা এই সুন্দরের স্পর্শ অবিরাম লাভ করিতে থাকি, যখন তার মাধুর্য্যে চিত্ত পূর্ণ হইয়া যায়, তখন অস্তরের সেই অহুভূতিটি কোনও রূপে বাহিরে প্রকাশ করিবার জন্য মন উন্মুখ হইয় ওঠে। যখন ভোরের বেলায় তরুণ স্বৰ্য্য স্নিগ্ধ রশ্মিরাজি বিকীর্ণ করিয়া উঠিয়া আসেন তখন সেই আলোতে মানুষ এমনি সৌন্দর্য্যের আলো দেখিতে পায়, এমনি অপূৰ্ব্ব স্পর্শ অনুভব করে, এমনি প্রভায় তাহার অন্তর উদ্ভাসিত হইতে থাকে যে, তাহার সেই অন্তরের অনুভবটিকে বাহিরে ব্যক্ত না করিয়া মন শান্তি মানে না। তাই কেহ রং দিয়া ছবি আঁকিয়া, কেহ স্বরে, কেহ ছন্দে নানা রকমে তাহাকে প্রকাশ করিতে থাকে, অস্তরে যাহাকে নিবিড়ভাবে অনুভব করিতে থাকে। যাহার স্পশে সমস্ত হৃদয় আলোড়িত হইতে থাকে সেই সৌন্দৰ্য্যাহ্বভবকে যখন রঙ্গে, স্বরে বা ছন্দে প্রকাশ করিয়া বাধিয়া রাখিবার চেষ্টা করে তখন তাহা হয় সৌন্দর্য্য স্বষ্টি। যাহাকে অনুভব করিতেছিলাম, যাহাকে বুঝিতেছিলাম সাহিত্যে বা শিল্পে তাহাকে প্রকাশ করিয়া সুন্দরের স্বষ্টি করিলাম। অনেক সময় সৌন্দর্য্যবোঝা এবং সৌন্দৰ্য্য স্বষ্টি করা এই দুইটি কথা আমরা এক বলিয়া মনে করি, কিন্তু সৌন্দর্য্য বোঝা মানেই সৌন্দৰ্য্য স্বষ্টি করা নয়। স্বন্দরকে বুঝিবার মত মনের ঘদি সম্পদ থাকে তবেই আমরা তাহাকে বুঝিতে পারি। কিন্তু অনুভব করিলেই যে তাহা প্রকাশ করিতে পারি তাহা নয়। সেই প্রকাশ করিবার জন্য ভিন্ন ঐশ্বয্যের প্রয়োজন। তবে সৌন্দর্য্য স্থষ্টি করিতে হইলে তাহাকে অনুভব করিতে হয়। স্বন্দরকে না বুঝিয়া সৌন্দর্য্য কষ্টি হয় না। এবং হয়ত এই সৌন্দৰ্য্যবোধের মধ্যে আমরা কিয়ং পরিমাণে সৌন্দর্য্য হুষ্টিও করি। তাই এই দুইটি ব্যাপারের মধ্যে যথেষ্ট যোগযোগ থাকিলেও ইহার এক কথা নয় । তারপর যখন অবিরাম ছন্দে, গানে, শিল্পে সুন্দরের স্বষ্টি করিতে লাগিলাম, তাহার জ্যোতিতে সমস্ত চিত্তকে নিমগ্ন করিতে চাহিলাম তখন একথা মনে আসিতে পারে যে ইহার কোনও প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা ? প্রয়োজন বলিলে সাধারণভাবে শারীরিক প্রয়োজন বুঝায়, কিন্তু আহার বিহার ইত্যাদির ন্যায় সৌন্দর্য্যের শরীর-সম্পকিত এই জাতীয় কোনও প্রয়োজন হয়ত নাই। যখন শারীরিক সমস্ত প্রয়োজন নিবৃত্ত হইয়াও মনের মধ্যে এমন একটা , চাওয়া থাকে যাহাকে আমরা বুঝাইতে পারি না যে কি চাহিতেছি অথচ একটা রসম্পর্শের অলৌকিক আকজায় সমস্ত চিত্তকে চঞ্চল করিয়া তুলিতে থাকে, তখন অস্তরে এই স্বন্দরকে উপলব্ধি করি এবং অনুভব করি যে, ইহাই