৮০২ ছেলে এক টুকরা আমসত্ব হাতে দিয়াছিল, জরের ঘোরে সেটুকু শুধু চুষিয়াছে শুইয়া শুইয়া। তাহার মামাকে সকলে বকিতে লাগিল । সরকার মশায় বলিলেন - তোমারও বাপু আক্কেলটা কি—ছোট মেয়েটাকে নিয়ে দুপুর রোদে এককোশ হাটিয়ে আনলে, পথে এল তার জর, দেখলেও না, শুনলেও না, ওদের চণ্ডীমণ্ডপে কাং করে ফেলে রেখে তুমি বেরুলে আড্ডা দিতে—না একটু দুধ, না কিছু—ছিঃ– তাহার মামা অপ্রভিত হইয়া বলিল—তা আমি কি আনতে গেছলাম, আমি বেরুবার সময় ছাড়ে না কোনো রকমে, তোমার সঙ্গে যাবে মামা, তোমার সঙ্গে যাবে। মামা—আমি কি করবো ? —বেশ, খুব আদর করেচে। ভাগ্নীকে—এখন চলে৷ আমার বাড়ি,ঞ্চকে একটু দুধ খাইয়ে দি—কচি মেয়েটাকে সারাদিন-ছিঃ– so খুকীর মামা একটু দমিয়া গিয়াছিল, বাড়ি ফিরিবার সময় খুকীকে বলিল –কিন্তু বাড়ি গিয়ে কিছু বোলো না যেন খুকু ? মার কাছে যেন বোলো না যে জর হয়েছিল, কি হারিয়ে গিয়েছিলে, কেমন তো ? লক্ষ্মী মেয়ে, বললে আমি কলকাতা যাবো পরশু, সঙ্গে ক’রে নিয়ে যাবে। ন— —আমি কলকাতা যাবো মামা— —যদি আজ কিছু না বলো, পরশু ঠিক নিয়ে যাবে!— বলবি নে তো ? কিন্তু বাড়ী পৌছিয়া খুকী বুদ্ধির দোষে সব গোলমাল করিয়া ফেলিল। তাহার শুষ্ক মুখ ও চেহারায় তাহার মা ঠাওরাইয়া লইল একটা কিছু যেন ঘটিয়াছে । জিজ্ঞাসা করিল—কি খেলি রে খুকী সেখানে ? খাওয়ার কথা মামা কিছু শিখাইয়া দেয় নাই, সুতরাং খুকী বলিল—আমসত্ব খুব ভালো—এতে বড় আমসত্ত্ব— —আমসত্ত্ব ? আর কিছু খাস নি সেখানে সারাদিনে ? হ্যারে ও যতীশ, খুকী সেথানে কিছু খায় নি ? —খেয়েচে বৈকি—খেয়েচে বৈকি-তা—হঁ্যা— জানই তো ওকে কিছু খাওয়ানোই দায়— মা একটু আড়ালে গেলে খুকী মুখ নীচু করিয়া প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৭ { ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড হাসিমুখে মামার দিকে চাহিয়া হাত নাড়িয়া বলিল – মাকে কিছু বলিনি মামা-কাল আমায় কলকাতায় নিয়ে যাবে তো ? —ছাই যাবে, না-খাওয়ার কথা বললি কেন ? বাদর মেয়ে কোথাকার – মামার রাগের কারণ খুকী কিছু বুঝিতে পারিল না। পাওয়ার কথা সম্বন্ধে মামা তো কিছু বলিয়া দেয় নাই, তবে সে কথ। যদি বলিয়! থাকে, তাহার দোষ কি ? তাহার মামা একথা বুঝিল না। রাগিয়া বলিল— তোমার জন্যে যদি আর কখনো কিছু কিনে আনি খুকী—তবে দেখো—ব’লে দিলাম—কখখনো আনবে। না-কলকাতাতেও নিয়ে যাবে না । তাহার প্রতি এই অবিচারে খুকীর কান্না আসিল । বা রে, তাহাকে যে কথা বলিয়া দেয় নাই, তাহ বলাতেও দোষ ?...সে কি করিয়া অতশত বুঝিবে ?-- খুকী খুব অভিমানী, সে চীৎকার করিয়া হাত-পা ছুড়িয়া কাদিতে বসিল না, এককোণে দাড়াইয়া চুপ করিয়া নিঃশব্দে ঠোঁট ফুলাইয়া ফুলাইয়া কঁদিতে লাগিল । পরদিন সকালে তাহার মামা কলিকাতায় রওনা হইল—যাইবার সময় তাহার সহিত কথাটিও কহিল না । আবার দিন কাটিতে লাগিল । বর্ষা শেষ হইয়া গেল, শরৎ পড়িল—ক্রমে শরৎও শেষ হয়-হয় । পূজা এবার দেরীতে, কাৰ্ত্তিক মাসের প্রথমে । কিন্তু বাড়ী বাড়ী সবাই জরে পড়িয়া, পূজায় এবার আনন্দ নাই। প্রবীণ লোকেও বলিতে লাগিলেন, এরকম দুৰ্ব্বৎসর তাহারা অনেক দিন দেখেন নাই । উমারাণী সারা আশ্বিন ধরিয়া ভূগিয়া ভুগিয়া সারা হইয়াছে। একে কিছু না খাওয়ার দরুণ রোগ, তাহার উপর জরে ভূগিয়া রোগা—তাহার শরীরে বিশেষ কিছু নাই। তবুও জরটা একটু ছাড়িলেই কথা ফেলিয়া উঠিয়া পড়ে—কারুর কথা শোনে না-তারপর গয়লা-পাড়া, সদগোপ-পাড়া, কোথার নবীন ধোবার তেঁতুলতলা—এই করিয়া বেড়ায় । বাড়ি ফিরিলেই দুমৃদুম
পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৬৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।