- bుe 8 খুশি । প্রথমটা তাহার ভয় হইয়াছিল, রেলগাড়ীর জানালার ধারে মামা বসাইয়া দিয়াছে, গাড়ীটা চলিতেই খুকীর মনে হইল তাহার পায়ের তলা হইতে মাটিট সরিয়া যাইতেছে, ভয়ে তাহার চোখ বড় বড় হইল— আতঙ্কে মামাকে জড়াইয় ধরিতে যাইতেই তাহার মামা হাসিয়া বলিল---ভয় কি, ভয় কি খুকু ? এ যে রেলের গাড়ী—দেখে। আরও কত জোরে যাবে এখন— রেলগাড়ী চড়িবার আনন্দকে যে-বয়সে বুদ্ধি দিয়৷ উপভোগ করা যায়, উমারাণীর সে বয়স হয় নাই । সে শুধু চুপ করিয়া জানালার বাহিরে চাহিয়া বসিয়৷ থাকে। মাঝে মাঝে তাহার মামা উৎসাহের স্বরে বলে--- কেমন রে খুর্কী---সব কেমন বল তো ? কেমন লাগচে রেলগাড়ী ? খুকী বলে, খুব ভালো— কিন্তু খানিকক্ষণ পরে তাহার মামা দুঃখের সহিত লক্ষ্য করে যে খুকী’ বসিয়া বসিয়া চুলিতেছে, দেখিতে দেখিতে সে ঘুমাইয়াপড়ে। : গাড়ী কলিকাতায় পৌছিলে একখানা রিক্সা ভাড়া করিয়া তাহার মামা তাহাকে বাসায় আনিল । অখিল মিস্ত্রির লেনে একটা ছোট মেসে বাসা, আপিসের বাবুদের মেস, সকলেই বয়সে প্রবীণ, সেই কেবল অল্পবয়স্ক । খুকীর আকস্মিক অবিভাবে সকলেরই আনন্দ হইল । বাড়ীতে ছেলেমেয়ে সকলেরই আছে, কিন্তু চল্লিশ পঞ্চাশ টাকা মাস-মাহিনার বেড়াজালে অষ্টেপৃষ্ঠে জড়াইয়া পড়িবার দরুণ মাসে একবার কি দুইবার ভিন্ন বাড়ি ধাওয়া ঘটে না, ছেলেমেয়ের মুখ দেখিতে পাওয়া যায় না। খুকীকে পাইয়া একটা অভাব দূর হইল। চার-পাচ বছরের ছোট ফুটফুটে মেয়ে, চাদের মত মুখখানি, কোকড়া কোকড়। কালো চুল, কালে চোখের তারা—আপিসের ছুটির পর তাহাকে লইয়া কাড়াকড়ি পড়িয়া যায়। এ ডাকে উহার ঘরে, ও ডাকে তাহার ঘরে । কিন্তু তাহার মামার বড় দুঃখ, খুকীর বেশভূষা একেবারে খাটি পাড়াগেয়ে । মাথায় বিমুনী, কপালে কাচপোকার টপ, অতটুকু মেয়ের পায়ে আবার আলভী, ছোট চুমুরী শাড়ী পরনে—ওসব সেকেলে কাণ্ড আজকাল শহর বাজারে কি আর চলে ? দিদি পাড়াগায়ে প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড পড়িয়া থাকে, শহরের রীতিনীতি বেশভূষার কি ধার ধরিবে ? এখানকার ভদ্রঘরের ছেলেমেয়েদের কেমন স্বন্দর চুলের বিন্যাস, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ফিটফাট সাজানো, দেখিতে যেন কাচের পুতুল। খুর্কীকে ঐ রকম সাজানো যায় না ? ভাবিয়া ভাবিয়া সে খুকীকে সঙ্গে করিয়া ট্রামে ধৰ্ম্মতলার এক চুলছাটাই দোকানে লইয়া গেল। নাপিতকে বলিল—ঠিক সায়েবদের ছেলেমেয়েদের মত যদি চুল কার্টুতে পারে, তবে কাচি ধরে, নইলে আমন ঘনকালো চুল নষ্ট কোরো না যেন । মেস হইতে সে খুকীর মাথার বঙ্গুনী খুলিয়া আনিয়াছিল । - চুল ছাটিতে উমারাণীর বেশ ভাল লাগিতেছিল । সামনে একখানা প্রকাণ্ড আয়না,চার-পাচটা বড় বড় আলো জলিতেছে, নাপি৩ মাঝে মাঝে আবার ময়দার মত কি একটা গুড়া তাহার ঘাড়ের চুলে মাখাইতেছিল—এমন স্বভূক্ষড়ি লাগে ।... তাহাকে সাজাইতে খুকীর মাম। পাচ ছয় টাকু খরচ করিয়া ফেলল। মেসের নিয়োগী মশায় একে একে কয়েকটি পুত্র কন্যাকে উপরি উপরি চার পাচ বৎসরের মধ্যে হারাইয়াছেন, উমারাণীকে পাহয়৷ আর ছাড়িতে চাহিতেন না। সন্ধ্যার পর রঙীন ফ্রক-পরাববড়, চুল, মুখে পাউডার, পায়ে জারর জুতা—আর এক ডমারাণী যখন তাহার ধরে আসিয়া দাড়াইল, তাহাকে দেখিয়া তো নিয়োগী মশায় বিষম খাহবার উপক্রম করিলেন । তাহার মামা হাসিয়া বলে—গেলই না হয় কিছু খরচ হয়ে, এমন স্বন্দর মেয়ে, কি ক’রে ভূত সাজিয়ে রেখেছিল বলুন দিকি ?..ওঁ কুণ্ডু-মশায়, চেয়ে দেখুন, পছন্দ হয় ? কি করিয়া খুকীর শীর্ণতা দূর করা যাইতে পারে, এ সম্বন্ধে নানা পরামর্শ চলিল । গলির মোড়ের একজন ডাক্তার কড লিভার অয়েল ও কেপলারের মণ্ট, এক্সট্রাক্টের ব্যবস্থা দিলেন—তাহা ছাড়। বলিলেন,—খাওয়া চাই, ন৷ থেয়ে খেয়ে এমন হয়েচে–পুষ্টির অভাব, এ বয়সে এদের খুব পুষ্টিকর জিনিষ খাওয়ানো চাই কিনা ?- সকালে
পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৬৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।