○○ চাহিতেছিলাম এবং ইহারই প্রকাশের বেদনায় চিত্ত ব্যাকুল হইয়া উঠিতেছিল। শরীরে ইহার অপেক্ষ না থাকিলেও অন্তরে ইহার এমনি একটি অপেক্ষ থাকে, এমনি একটি স্থান শূন্য এবং অসম্পূর্ণ থাকিয়া যায়, এমনি একটা অব্যক্ত আকাঙ্ক্ষায় সমস্ত হৃদয় থাকিয়! থাকিয়া কাদিয়া উঠিতে থাকে যে, তখন যদি এই রসধারায় তাহাকে সিক্ত করিয়া সেই শূন্ত স্থানটি পূর্ণ করিয়া না লইতে পারি তবে সমস্ত হৃদয় শুষ্ক কঠিন হইয় ওঠে। তাই শরীরধারণের জন্য ইহার কোনও প্রয়োজন না থাকিলেও চিত্তের সম্পূর্ণ পরিণতির জন্য ইহার প্রয়োজন আছে । যখন ইহাকে অনুভব করি তখনি বুঝিতে পারি যে, যাহাকে খুজিতেছিলাম, যাহাকে চাহিতেছিলাম তাহাকে পাইলাম। এখন এই যে পাওয়া, এই যে একটি স্নিগ্ধ সুরভিত বিকাশোন্মুখ পদ্মফুল দেখিয়া আমাদের মনে হয় “কি সুন্দর!” সেই সৌন্দৰ্য্যটি আমরা কেমন করিয়া অনুভব করিলাম, পদ্মফুলের পাপড়িগুলির ন্যায় সেও কি কোথাও বাহিরের জগতেই রহিয়াছে ? এই যে ছবিখানি, ইহার রং এবং কাগজখানির ন্যায় ইহার সৌন্দৰ্য্যও কি কোনও বস্তু, যাহাকে সম্মুখে দেখিয়া আমরা বলিতেছি “সুন্দর।” যদি তাই হয়, যদি সুন্দর বলিয়া কোনও বস্তু কোথাও থাকে, তবে এই সমস্ত বাহিরের পদার্থের ন্যায় তাহাকেও ত সকলেই দেখিতে পাইত । একই প্রকৃতি ত পশুও দেখিতেছে মা তুষও দেখিতেছে, কিন্তু এই কুসুমগুচ্ছে, এই বসন্তসমীরে, এই মৃদু সুগন্ধে মানুষ যে সৌন্দৰ্য্য অনুভব করে, সে-ত পশুর কাছে নাই । এমন কি যে ছবিখানিতে, যে রচনার মাধুর্য্যে, যে ছন্দের দোলায় রসিক ব্যক্তির চিত্ত সৌন্দর্ঘ্যে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে, যে সঙ্গীতে একজন আত্মহারা, ঠিক সেই রচনা, সেই ছবি, সেই সঙ্গীতই আর একটি ব্যক্তির কাছে সম্পূর্ণ অর্থহীন আবর্জনার মত ঠেকিতে পারে। এই প্রভেদটি কেন হয়, স্বন্দর বস্তু যদি বাহিরে কোথাও থাকিত তবে তাহাকে ত সকলেই সমান দেখিতে পাইতাম । বিভিন্ন চিত্ত বিভিন্ন অনুভব দ্বারা তাহাকে এত নানা প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড রকমে কেন দেখিতে থাকে ? এই কাগজখানির আকার ত দুইজনের দৃষ্টিতে দুই রকম দেখাইবে না, “কুন্দর বস্তু” বলিয়৷ যদি এই রকমই কিছু থাকিত, তবে সেই পদার্থটিকে নানা লোকে নানা দৃষ্টিতে নানা রকমে কেন দেখিবে ? কিন্তু যদি সুন্দর বস্তু কিছু না-ই থাকে, তবে তাহ দেখি কেমন করিয়া ? এই যে গোলাপ ফুলটি দেখিয়া সুন্দর লাগিল, এইটি যদি সুন্দর নয় তবে কাহাকে ভালে৷ লাগিতেছে, কাহাকে স্বন্দর মনে হইতেছে। " একথা হয়ত বলা যায় যে “সুন্দর” আমাদের অস্তরের অনুভবের বস্তু ; তাহ বাহিরে কোথাও নাই। কোনও ছবি সুন্দর নয়, কোনও ফুলও সুন্দর নয়, কুৎসিতও নয়, কিন্তু আমাদের অন্তরের মধ্যে আমরা যে একটা সুন্দরের স্পর্শ পাই তাহারই একট প্রতিরূপ বাহিরে ধরিয়া রাখিবার চেষ্টা করি, তাহাকেই বলি সৌন্দর্য্য কৃষ্টি, আর প্রকৃতির সাহায্যে যখন আমরা আমাদের অন্তরের মধ্যের সুন্দর রূপকে উপলব্ধি করি, এক নিমেষের দৃষ্টিতে তার মধ্যে ডুবে যাই তখন তাকেই বলি সৌন্দর্য্যবোধ । কিন্তু সৌন্দৰ্য্য যদি কেবলমাত্র অন্তরেরই একটি বিশেষ অনুভব হয়, তবে বাহিরের জগতের সম্বন্ধে আমরা তাহার প্রয়োগ করি কেন ? কেন বলি এই গোলাপ ফুলটি স্বন্দর, এই ছবিটি সুন্দর। অন্তরের যা ত অস্তরের কারণে ফুটিয়া উঠিয়া অন্তরেই প্রকাশ পাক, বাহিরের জগতের সঙ্গে তার সম্পর্ক কি ? কাজেই স্বীকার করিতে হয় যে, বাহিরের এই দৃশ্বে, গন্ধে, স্বরে, ছন্দে এমন একটি জিনিষ থাকে যাহার স্পর্শে চিত্ত চঞ্চল হইয়া উঠে ; যাহার মধ্যে এমন একটি মন্ত্র থাকে যে সেই মন্ত্রের স্পর্শ লাগিলে হৃদয়ের মধ্যে যে ভাব রহিয়াছে আমরা তাহাকেই অনুভব করিতে পারি। এই ছন্দে, এই শব্দে কোনও সৌন্দৰ্য্য নাই,-আমারই অন্তরে যে সৌন্দৰ্য্য রহিয়াছে এই ছন্দের . দোলায় তাহ জুলিয়া উঠিতে থাকে, কাজেই এই ছবিখানিতে, এই ভাষায়, এই পত্রেপুষ্পে এমন উপাদান আছে, এমন উদ্ধোধক আছে যাহা দ্বারা আমারই অন্তরে যাহ রহিয়াছে আমি তাহাকেই অনুভব করিতে পারি। যে বস্তুটি স্বৰ্ষ্ট হইয়াছে, যে বস্তুটি রহিয়াছে সেইটিই
পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।